পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌ ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন দক্ষতার বিবেচনায় পদোন্নতি প্রদান করেন। দক্ষরা যেন পদোন্নতি পান। তাঁর এ বক্তব্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। যোগ্যতা ও দক্ষতা ছাড়া কারো পক্ষে অর্পিত দায়িত্ব বা কাজ সুষ্ঠুভাবে ও উত্তমরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। প্রধানমন্ত্রী এই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য ও উপযুক্ত হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাদের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা-যোগ্যতাকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এসব অভিমত, পরামর্শ ও নির্দেশনা সর্বক্ষেত্রে ষোলআনা অনুসৃত হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, পদোন্নতি ও পদায়নে রাজনৈতিক বিবেচনা, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। নিয়োগের ক্ষেত্রেও এটা প্রত্যক্ষ করা গেছে। সরকারি কোনো পদে ঘুষ ছাড়া চাকরি প্রায় কল্পনাই করা যায় না। পিয়ন, দারোয়ান, ড্রাইভারের চাকরিতেও মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। প্রার্থীর দক্ষতা শিক্ষাগত যোগ্যতা যতটা বিবেচ্য, তার চেয়ে ঘুষের অর্থ অনেক বেশি কার্যকর। দলীয় বিবেচনার প্রার্থীদেরও অনেক সময় ঘুষ দিয়ে চাকরি নিশ্চিত করতে হয়। মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তি ছাড়া যখন রাজনৈতিক আনুগত্য, মামা-চাচার জোর কিংবা ঘুষে কারো চাকরি হয়, তখন তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতা আশা করা যায় না। আবার যখন পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক বিবেচনা, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়, তখন ওই পদোন্নতি বা পদায়নপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে থেকে চাইলেও কোয়ালিটি কাজ পাওয়া যায় না।
প্রশাসনে হোক, পুলিশে হোক বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে হোক, দক্ষ লোকের বিকল্প নেই। আমরা যখন বলি, দক্ষ প্রশাসন, দক্ষ পুলিশ, দক্ষ বিচার বিভাগ ইত্যাদি তখন ওই সব ক্ষেত্রে দক্ষ লোকদের সম্মিলিত কাজের ফলাফলকেই বুঝিয়ে থাকি। লোকদের দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা ও নৈতিক দায়বদ্ধতা ইত্যাদি এ ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। অত্যন্ত দুভার্গ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের অধিকাংশের দক্ষতা-যোগ্যতার যেমন ঘাটতি হয়েছে, তেমনি তাদের নৈতিক মান অত্যন্ত নিম্ন। তারা দুর্নীতিগ্রস্ততার শিকার। অদক্ষতা ও অর্থ ললুপতা তাদের আত্মপরিচয়ের অংশে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে সহজেই দেখতে পাবো, সেখানে কাজের মান স্বীকৃতিমানের সমান হয়নি এবং দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে যথেচ্ছ। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া রাস্তাঘাট নির্মাণ বা সংস্কারের কয়েক মাসের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়া, ব্রিজ নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে কিংবা কিছুদিন পরে ধসে পড়া, বিল্ডিং নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হুমড়ি খেয়ে পড়া ইত্যাদি আমাদের দেশে অতি সাধারণ ঘটনা। এসব ঘটনায় দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রথমত, যারা নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তারা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। দায়িত্বশীলদের প্রকল্পের টাকার অংশ বিশেষ ঠিকাদারদের সঙ্গে ভাগাভাগী করে নেয়ার অভিযোগ এক্ষেত্রে একটি সাধারণ অভিযোগ। প্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্নীতি ছেয়ে আছে। পুলিশের মধ্যে দুর্নীতির পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে। চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা পুলিশের এক শ্রেণীর সদস্যের দ্বারা সংঘটিত না হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসনের যে অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার জন্য প্রধানত সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা এবং দুর্নীতিপরায়নতাই দায়ী।
বিশ্লেষকদের অভিমত, দক্ষ ও দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়েই চলছে প্রশাসন, পুলিশ ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে গতিশীলতা ও কার্যদক্ষতা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সৎ, অদক্ষ, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও একই মাপকাঠি অনুসরণ করতে হবে। সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোকেরাই তাদের কর্মক্ষেত্রকে দুর্নীতি ও কলুষমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখতে পারে। তারাই পারে মানসম্পন্ন কাজ উপহার দিতে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের গোটা বিষয়টি নিয়মানুগ ও সততাপূর্ণ হোক, এটাই সকলের কাম্য। সরকারকেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগের যে বিধিব্যবস্থা আছে, সেখানে যাতে রাজনৈতিক বিবেচনা, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থের প্রভাব প্রাধান্য পেতে না পারে, তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ বিষয়ে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও তার বাস্তবায়ন একান্তভাবেই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।