Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দূর্ভোগের সাথে ক্ষোভ বাড়াচ্ছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৮ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলে চাল, চিনি, ডাল, লবন, ভোজ্য তেল আর রান্নার গ্যাস সহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির দুঃসহ যন্ত্রনায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগ দুঃসহ পর্যায়ে পৌছেছে। এমনকি শীত বিদায়ের সাথে সবজির দামের স্বস্তিও উধাও হতে শুরু করেছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের যেকোন বাজারে এক কেজি ঢেরস বিক্রী হচ্ছে ১২০ টাকায়। অন্যান্য সবজীর দামও গত এক সপ্তাহে ২৫Ñ৫০ ভাগ বেড়েছে। রান্নার গ্যাস আর ভোজ্য তেল সাধারন গৃহস্থের অস্বস্তিকে ইতোমধ্যে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম ইতোমধ্যে প্রতিটি পরিবারে বাড়তি দূর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বাজেট সংকুলন না হওয়ায় শহুরের জীবন ব্যবস্থায় অনেক পরিবারের পাত থেকে মাছ ও গোসত অনেকটাই উঠে যেতে শুরু করেছে। এতদিন অতিথি পরায়ন হিসেবে সুখ্যাতীর দক্ষিণাঞ্চলের নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পারিবারগুলো এখন মেহমান বাড়ীতে এলে অস্বস্তিতে ভোগেন। মাছ ও গ্সোতের উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ পরিবারের সদস্যদের পাতে এখন আর মাছ-গোসত দেখা যায়না।

আউশের পরে আমনের ভরা মৌসুমে ভাল উৎপাদনের পরেও চালের দাম কমার পরিবর্তে ক্রমশ বাড়ছে। গত বছর একই সময়ে তুলনায় এবার ফেব্রুয়ারীতে প্রতি কেজী চালের দাম ১০-১২ টাকা বেশী। অথচ সদ্যসমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে জমিতে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রাও অতিক্রম করেছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। এর আগে খরিপ-১ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে আরো প্রায় ১৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন। আবাদকৃত আরো প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষিবীদগন ।
চাল ও সবজি সহ খাদ্যশষ্যের কোন ধরনের সংকট বা ঘাটতি সম্ভবনা না থাকলেও সব নিত্যপণ্যের দাম সাধারন মানুষকে যথেষ্ঠ অস্বস্তিতেই রেখেছে। ফরে হতাশার সাথে বাড়ছে ক্ষোভও। একইভাবে ডালের দামও সাধারন মানুষকে কোন ধরনের স্বস্তি দিচ্ছে না। সয়াবিন সহ সব ধরনের ভোজ্য তেলই এখনো সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ১৩০ টাকা কেজি চিনি কেনার ক্ষমতা বেশীরভাগ মানুষের না থাকলেও সবাই প্রায় নিরুপায়। ভেজাল আখের ও খেজুরি গুড়ের ভীরে আসল হারিয়ে যেতে বসলেও তা কেনার ক্ষমতাও এখন অনেক মানুষের নেই।
এদিকে অন্যসব নিত্য পণ্যের সাথে মাছ-গোসতের বাজারেও উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। ৮শ টাকা কেজির নিচে কোন মাছ নেই বাজারে। অথচ প্রায় ৫ লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছ যাচ্ছে রাজধানী সহ সারা দেশে। এক কেজি ওজনের নিচের সাইজে ইলিশের কেজিও এখন হাজার টাকার ওপরে। গরুর গোসতের কেজি সাড়ে ৭শ টাকা হলেও খাশি প্রায় ১১শ টাকা কেজি। ফলে গোসত কেনা এখন নি¤œ-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের জন্য কল্পনা বিলাস। ব্রয়লার মুরগির কেজী গত এক বছরে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন ২৩০ টাকা। কক ও সোনালী মুরগির দামও বছরের মাথায় কেজিতে প্রায় ১শ টাকা বেড়ে ৩শ টাকা ছুয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ পরিবারের পাত থেকে মাছের মত গোসত উঠে যেতে বসেছে।
এদিকে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। রোজাকে সামনে রেখে গত বছর রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও ছোলাবুট, খেজুর, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রী করলেও এবার আর তা হচ্ছে না। গত বছর ঈদ উল ফিতরের পর থেকেই টিসিবি খোলা বাজার থেকে সরে দাড়িয়ে ‘এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবারহ’র আওতায় দক্ষিণাঞ্চলেও প্রায় ৬ লাখ পরিবারকে ১ কেজি করে চিনি, এক লিটার ভোজ্যতেল ও ২ কেজি করে মুসুর ডাল বিক্রী করছে। এ কার্যক্রমকে অনেকে সাধুবাদ জানালেও খোলাবাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই একটু কম দামে নির্দিষ্ট কয়েকটি নিত্য পণ্য কেনার সরকারী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি গত বছর খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রীর ফলে বাজারে মূল্য বৃদ্ধি যতটা নিয়ন্ত্রনে ছিল, এবার তা অনুপস্থিত থাকায় সাধারন মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছেন বলেও অভিওযোগ সাধারন মানুষের। ফলে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষের দূর্ভোগ কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শংকা আছে বেশীরভাগ মানুষের।
অপরদিকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও গত মাসখানেক যাবত সরকার নির্ধারিত মূল্যে রান্নার গ্যাস মিলছে না। সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে এখন ১৭শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। ডিলারদের দাবী, ‘গ্যাস কোম্পানীগুলেই ডিলাদের কাছে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস বিক্রী করছে দেড় হাজার টাকার ওপরে’। পাইকারী ডিলারগন তা ৩০টাকা মুনফায় সাব-ডিলারদের কাছে বিক্রী করলেও সেখান থেকে আর কোন নিয়ন্ত্রন থাকছে না। ফলে ভোক্তাগনকে সরনকার নির্ধূাািরত মূল্যের চেয়ে দুশ টাকা বেমী দামে গ্যৗাস কিনতে হচ্ছে। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল মহানগরীতে সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রী হয়েছে ১২শ টাকারও কমে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ