প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
বলিউডের কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমার মারা গেছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ফুসফুসে ফ্লুইড জমছিল বারবার। গত এক বছর একরকম শয্যাশায়ীই হয়ে পড়েছিলেন দিলীপ। তবে স্ত্রী সায়রা বানু বরাবর পাশে থেকেছেন। এমনকি শেষ সময়েও দিলীপের পাশে ছিলেন সায়রা। মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে বুধবার বাংলাদেশে সময় সকাল ৮টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। তার মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটা যুগের অবসান হল। তার অভিনয় জীবন প্রায় ছয় দশক বিস্তৃত হয়েছে বলিউডে। জীবনে বহু উত্থানপতন দেখেছেন। আবার নায়িকাদের প্রেমেও পড়েছেন একাধিক বার।
অভিনয় ক্যারিয়ারের মতো বর্ণময় বলিউডের ‘প্রথম খান’-এর ব্যক্তিগত জীবনও। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমার অভিনীত ‘শহিদ’। ছবিতে দিলীপ কুমারের নায়িকা ছিলেন কামিনী কৌশল। এই ছবিতে অভিনয় করার সময়ে তাদের প্রেম ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচিত বিষয়। দু’জনে বিয়ে করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বাধা দিলেন কামিনীর ভাই। তিনি রাজি ছিলেন না এই সম্পর্কে। শোনা যায় তিনি দিলীপ কুমারকে হুমকিও দিয়েছিলেন। এর পর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সে বছরই কামিনী বিয়ে করেন তার প্রয়াত বোনের স্বামীকে। দুর্ঘটনায় নিহত বোনের দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন কামিনী।
এর পর দিলীপ কুমার প্রেমে পড়েন মধুবালার। দীর্ঘ সাত বছর চলেছিল তাদের প্রেমপর্ব। এই সম্পর্ক ভেঙে যায় দুই তারকার ইগো সমস্যায়। একটি ছবির শুটিং লোকেশনে মধুবালাকে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না তার বাবা। পরিচালক-প্রযোজক অনুরোধ করেন দিলীপ কুমারকে। তিনি যেন কথা বলেন মধুবালার বাবার সঙ্গে। দিলীপ কুমারের অভিযোগ ছিল, মধুবালার বাবা তাকে অপমান করেছেন।
অন্য দিকে মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপ কুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তার বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি তার বাবার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারেননি। মধুবালার কথায় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমা চাননি দিলীপ কুমার। চাপানউতরের জেরে ভেঙে যায় দিলীপ কুমার-মধুবালা প্রেম। ১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে।
তারপর দিলীপ কুমার বেশ কয়েক বছর কোনও সম্পর্ক থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বিয়ে করেন সায়রা বানুকে। শোনা যায়, তার বিয়ের খবরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অসুস্থ মধুবালা। তার তিন বছর পরে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। সায়রা বানুকে বিয়ের সময় দিলীপ কুমারের বয়স ছিল ৪৪ বছর। সায়রা বানু ছিলেন ঠিক অর্ধেক, মাত্র ২২ বছর। দিলীপ কুমার ও সায়রা বানুর প্রেম কোনও ছবির চিত্রনাট্য থেকে কম নয় ৷ তবে এই লাভ স্টোরিতেও এসেছিল দুঃসময় ৷ সায়রা বানুকে ছেড়ে গিয়েছিলেন তার প্রিয় দিলীপ সাব!
সায়রা বানু ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। অথচ তার স্বপ্নের নায়কই তাকে প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না। প্রথম আলাপে সায়রা বানুর রূপের প্রশংসা করেছিলেন দিলীপ কুমার। কিন্তু ‘বাচ্চা মেয়ে’ বলে বজায় রাখতেন দূরত্ব। এ দিকে দিলীপ কুমারের ছবির ভক্ত সায়রা বানু নিজেই এক দিন পা রাখলেন ইন্ডাস্ট্রিতে।
শোনা যায়, সে সময় রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে তার মৃদু ভাল লাগার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সায়রার মা, বিগত দিনের অভিনেত্রী নাসিম বানুর হস্তক্ষেপে বিবাহিত রাজেন্দ্র কুমারের কাছ থেকে সরে আসেন ‘জংলি’ ও ‘পড়োসন’-এর নায়িকা। এরপর নাসিম বানুই উদ্যোগী হন দিলীপ কুমারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের। সায়রা বানুর মনে হয়েছিল, দিলীপ কুমারকে স্বামী হিসেবে পেয়ে তার বহু দিনের স্বপ্ন পূর্ণ হল।
সে সময় অনেকেই বলেছিলেন, এই বিয়ে বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলীপকুমার-সায়রা বানু দু’জনে দু’জনের পাশে ছায়া হয়ে পাঁচ দশকের বেশি দাম্পত্যজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।
তবে আটের দশকের গোড়ায় কিছুটা ঝড়ের মুখে পড়েছিল তাদের দাম্পত্য। পাকিস্তানের নাগরিক হায়দরাবাদের বিশিষ্ট সমাজকর্মী আসমা সাহিবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন দিলীপকুমার। সায়রা বানুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীনই ১৯৮১ সালে আসমাকে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা । যদিও সেই সম্পর্ক টিকেছিল মাত্র ২ বছর ।
শেষে আবার সায়রা বানুর কাছে ফিরে আসেন তার দিলীপ সাব৷ ১৯৭৬ থেকে কাজ বন্ধ করেন সায়রা৷ পুরো সময়টাই তার স্বামীর সেবার নিয়োগ করেন তিনি৷ তিনি জানিয়েছিলেন যে আল্লাহর কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ কোহিনূর রূপে দিলীপ কুমারকে তার কাছে পাঠানোর জন্য৷ অভিনেতার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সেই মধুর সম্পর্ক অটুট থেকেছে। মৃত্যুকালেও পাশে ছিলেন সায়রা বানু।
প্রায় ছয় দশক ধরে বিস্তৃত ক্যারিয়ারে দিলীপকুমার অভিনয় করেছেন ৬৫টির বেশি ছবিতে। ‘দেবদাস’, ‘কোহিনুর’, ‘মধুমতী’, ‘মুঘলে আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘শক্তি’ , ‘মসান’, ‘ক্রান্তি’, ‘সওদাগর’-সহ অসংখ্য ছবির নায়ক হয়ে গেলেন বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।