Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুনিরা ধরা না পড়ায় আতঙ্কে পাহাড়িরা

বান্দরবানে নওমুসলিম ইমামকে গুলি করে খুন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে নওমুসলিম মসজিদের ইমামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নওমুসলিম মোহাম্মদ ওমর ফারুক খুনের সাথে জড়িত সশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। পার্বত্য অঞ্চলে নও মুসলিমদের ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখা এবং নতুন করে কোনো উপজাতি যাতে ইসলাম গ্রহণ করতে ভয় পায়, তাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে স্থানীয় শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও দোষীদের অনতিবিলম্বে শাস্তি দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদের দালাল, খ্রিস্টীয় মিশনারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চায়। ওমর ফারুক খুনের সাথে জড়িত সশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বজায় রাখার প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নওমুসলিম মোহাম্মদ ওমর ফারুক খুনের সাথে জড়িত সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে যেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেটি বেশ দুর্গম এলাকা। সেখানে দ্রুত পৌঁছানোর সুযোগ নেই। এর পরেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্তপূর্বক জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন মন্তব্য করেন।
গত শুক্রবার ১৮ জুন রাত ৯টার দিকে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরার পথে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের তুলাছড়ি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ তাকে হত্যা করেছে। মুসলিম প্রধান দেশে এভাবে একজন নওমুসলিমকে গুলি করে হত্যা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। তাদের প্রশ্ন, পাহাড়ে কি তাহলে পরিকল্পিতভাবে ডি ইসলামাইজেশন চলছে?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নওমুসলিম মোহাম্মদ ওমর ফারুকের আগের নাম ছিল বেরণ চন্দ্র ত্রিপুরা। তিনি মৃৃত তয়ারাম ত্রিপুরার ছেলে। ত্রিপুরা সম্প্রদায় থেকে কয়েক বছর আগে তিনি মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে ওই এলাকায় একটি অস্থায়ী মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন। বেশ কিছুদিন থেকে সন্ত্রাসীরা ওই মসজিদের ইমামকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। ঘটনাস্থল তুলাঝিড়ি পাড়ায় গত কয়েক বছর ধরে নওমুসলিমসহ বেশ কিছু পরিবার বসবাস করে আসছিল। তারা সেখানে টিনের ছাউনির কাঁচা ঘরের একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করে। সেখানে মোহাম্মদ ওমর ফারুক মসজিদে ইমামতি করে আসছিলেন।
স্থানীয় শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা বলছেন, তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে হালকা-ভারী সব অস্ত্রই আছে। এদের হাতে পাহাড়ি-বাঙালি সব সাধারণ নাগরিকই জিম্মি। গহীন জঙ্গল আর দুর্গম পাহাড়ি জনপদে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে অসহায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। বিভিন্ন সময় পাহাড়ের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যা সন্ত্রাসীদের কাছে থাকা অস্ত্রের অতি সামান্য একটি অংশ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, সমতল ভূমির মতো যদি সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেতে পারত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরা কারবারিদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকে। মর্টার, রকেট লাঞ্চার, এলএমজি, এসএমজি, একে-৪৭, স্নাইপার রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেডসহ দেশি-বিদেশি বন্দুক ও রাইফেলের মতো হাজার হাজার ভারী অস্ত্র রয়েছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে। আর এসব অস্ত্র কেনার অর্থ চাঁদার মাধ্যমে যোগান দিতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। যার মধ্যে পাহাড়ের সাধারণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অপহরণের পর জিম্মি করে মুক্তিপণ ও নিয়মিত চাঁদা আদায় সন্ত্রাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হয় তাদের। রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় এসব সশস্ত্র গ্রুপ বছরের পর বছর নৈরাজ্য চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সাধারণ শান্তিপ্রিয় নাগরিকরা আরো হত্যাকাণ্ডে শিকার হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ