মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের ক্ষুদ্র ও অখ্যাত দ্বীপ চ্যাংবিয়াওতে দুইটি রহস্যজনক পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করছে দেশটির জাতীয় পারমাণবিক কর্পোরেশন। তাদের এই প্রকল্প আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
চায়না ফাস্ট রিঅ্যাক্টর ৬০০ (সিএফআর-৬০০) মডেলের চুল্লি দুইটির নির্মাণ যথাক্রমে ২০২৩ এবং ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এই ধরণের মডেলগুলোকে বলা হয় ‘ব্রিডার’, যার অর্থ এর পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া ব্যবহৃত জ্বালানীর চেয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করে। বিজ্ঞানীরা এই ধরণের পারমাণবিক চুল্লি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বেশিরভাগ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির লক্ষ্য হ’ল তাদের জ্বালানীর যতটা সম্ভব ব্যবহার করা ও অতিরিক্ত তৈরি না করা। এটি বিশেষত আরও বেশি মেনে চলা হয় যখন চুল্লিটি প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করে, যা পারমাণবিক অস্ত্রে রূপান্তর করা সহজ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইতিহাসের প্রথম দিকেই ব্রিডার রিঅ্যাক্টরগুলো জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং জার্মানির মতো দেশগুলি দীর্ঘকাল ধরে তাদের ব্রিডার বিকাশ কর্মসূচি ত্যাগ করেছে।
তবে চীন এই পথে হাটেনি। সিএফআর-৬০০ হ’ল সোডিয়াম-কুলড ফাস্ট নিউট্রন রিঅ্যাক্টর। যার অর্থ পানি ব্যবহারের পরিবর্তে বিশ্বের বেশিরভাগ কর্মক্ষম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো, এটি তরল সোডিয়াম দ্বারা শীতল করা হয়। সোডিয়ামের তাপমাত্রার পরিসীমা অনেক বিস্তৃত এবং পানির চেয়ে কম ইন্টারঅ্যাক্টিভ। এবং ফাস্ট নিউট্রনের মধ্যে এর বিকল্প থার্মাল নিউট্রনের চেয়ে অনেক বেশি প্রাকৃতিক শক্তি থাকে। থার্মাল নিউট্রন থেকে শক্তি পাওয়ার জন্য একে একটি তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত ধারকে রাখতে হয়, ফাস্ট নিউট্রনের জন্য কোন ধারক বা মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
২০০৩ সালে শুরু হওয়া চীনের পরীক্ষামূলক ফাস্ট রিঅ্যাক্টরের (সিইএফআর) পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে সিএফআর-৬০০। এর অভ্যন্তরে মিক্সড অক্সাইড (এমওএক্স) নামে একটি জ্বালানী রয়েছে যা পারমাণবিক বর্জ্য প্লুটোনিয়াম এবং পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম থেকে তৈরি হয়। নির্মাণাধীন নতুন দুই সিএফআর-৬০০ চুল্লিগুলো যথাক্রমে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এবং ৬০০ মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদন করবে।
তবে সমস্যা হচ্ছে ফাস্ট রিঅ্যাক্টরগুলো বেশি পরিমাণে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে, এ কারণেই কয়েক দশক আগে ইউরেনিয়াম জ্বালানির দাম বেশি হওয়ার কারণে পরমাণু বিজ্ঞানীরা এই ধরণের চুল্লি থেকে দূরে সরে এসেছিলেন। তাহলে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যখন হালকা ও পানি নির্ভর চুল্লির উপর নির্ভর করে, সেখানে চীন কেন ব্রিডার চুল্লির দিকে ঝুঁকে পড়ছে? এখানে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। একটি নতুন গবেষণাপত্রে, পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কাজ করা নীতি শিক্ষা কেন্দ্রের (এনপিসি) বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে, ফাস্ট রিঅ্যাক্টর অস্ত্রে ব্যবহারের উপযোগী যে পরিমাণ প্লুটোনিয়াম তৈরি করবে, তা দিয়ে চীন ২০৩০ সালের মধ্যে ১ হাজার ২৭০ পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে। এই পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রাগারে যে পরিমাণ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তার সমান।
এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ননপ্রোলিফারেসনের সাবেক দুই মার্কিন সহকারী সেক্রেটারি অফ স্টেট তাদের রিপোর্টে বলেন, চীনের অস্ত্র কর্মসূচির সাথে এই চুল্লিগুলির কী ভূমিকা তা বুঝতে বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে, দ্রুত সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশেপাশের নেতাদের একে অপরের সাথে কূটনৈতিকভাবে জড়িত হতে হবে কারণ, এই প্রতিবেদনে এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, গতিশীল এবং সমৃদ্ধ অঞ্চলের জন্য এটি (চায়না ফাস্ট রিঅ্যাক্টর) সত্যিই একটি ভাল ধারণা কিনা তা সম্পর্কে জানতে সুপারিশ করা হচ্ছে।’
তবে সংলাপে জড়ানোর পরিবর্তে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন তার পারমাণবিক কর্মসূচিটিকে আরও বেশি স্পষ্ট করে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সকলেই তাদের ‘সিভিল’ প্লুটোনিয়ামের (যেহেতু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না) বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর কাছে প্রতি বছর প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে। ওই রিপোর্টে চীনকেও এটি করার অনুরোধ করেছে, কারণ তারা ২০১৭ সালের পর থেকে এ বিষয়ে আর কোন প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
চীন কেন গোপনে প্লুটোনিয়াম মজুদ করবে? বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন, ‘চীন বর্তমানে একটি বৃহত্তর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে জড়িত। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই অনুমান করেছেন যে, বেইজিংয়ের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের পরিমাণ কমপক্ষে দ্বিগুণ (বা তার বেশি) হবে। এবং নতুন দুই চুল্লি থেকে এ জন্য যথেষ্ট পরিমাণ প্লুটোনিয়ামের সংস্থান হবে।’ এটি এমনও হতে পারে যে, চীন অন্যান্য বিশ্বশক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বা প্রয়োজনে একটি প্ররোচনামূলক দর কষাকষির ক্ষমতা অর্জনের জন্য বেশি পরিমাণে প্লুটোনিয়াম মজুদ করতে চায়। সূত্র: পপুলার মেকানিক্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।