পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়লগ বা কোয়াডে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার প্রশ্নে চীনের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয়। অবশ্য বাংলাদেশ এই জোটে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সে ব্যাপারে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়, এ নীতি অবলম্বন করে চলেছে। হয়তো চীনের ধারণা হয়েছে বাংলাদেশ এ জোটে যোগ দিতে পারে। আর যোগ দিলে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘যথেষ্ট খারাপ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। গত ১০ মে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সাথে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় লি জিমিং এ মন্তব্য করেন। সাধারণত কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অবস্থান নিয়ে চীন সরাসরি কোনো মন্তব্য করে না। এবারই প্রথম কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা, না করা নিয়ে সরাসরি এবং হুঁশিয়ারিমূলক মন্তব্য করেছে। গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কোয়াড নিয়ে তার দেশের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কি ছিল, জানতে চাইলে লি জিমিং তা এড়িয়ে যান। তার এই এড়িয়ে যাওয়া এবং বেইজিংয়ের উদ্বিগ্ন হওয়া থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বেইজিং হয়তো ধরেই নিয়েছে কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এই শঙ্কা থেকেই লি জিমিং মন্তব্যটি করেছেন। এ সম্পর্কে তার বক্তব্য: চীন সবসময় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড হচ্ছে চীনবিরোধী একটি ছোট জোট। এটি একটি ছোট ক্লাব। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জাপান। তিনি কোয়াড থেকে বাংলাদেশকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ছোট ক্লাবে বাংলাদেশের কোনোভাবে অংশগ্রহণ করা ঠিক হবে না। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ হবে।’ চীনের রাষ্ট্রদূতের এমন সরাসরি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোন বিষয়ে বাংলাদেশ কি করবে, এ সিদ্ধান্ত অন্যের মতামতে নয়, নিজের বিবেচনায় নেবে। সাধারণত চীন প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্য করে না। এ বিবেচনায় রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অবাক করার মতো। তিনি বলেছেন, কোয়াড থেকে এখনো বাংলাদেশকে যোগ দিতে কোনো অনুরোধ করা হয়নি। তাই চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যকে আগ বাড়িয়ে বলা হিসেবে দেখছে। তবে চীনের উদ্বেগের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, গত মার্চে কোয়াড শীর্ষ ভার্চুয়াল সম্মেলনের আগে ঢাকা সফর করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শঙ্কর। সে সময় তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বঙ্গোপসাগর ঘিরে সংযুক্তিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। এই সংযুক্তিতে তিনি জাপানের মতো দেশকে যুক্ত রাখার কথা বলেন। অন্যদিকে জাপান বলেছে, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি প্রকল্প আইপিএসের অংশ। ফলে কোয়াড ও আইপিএস ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অভিন্ন অবস্থান চীনের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই.
কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে চীন যখন সরাসরি মন্তব্য করে তখন তার ভিত্তি কতটা শক্ত বা দুর্বল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। হয়তো চীনের কাছে এমন খবর রয়েছে, কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগ বাড়িয়ে কড়া মন্তব্য করে বাংলাদেশকে সাবধান করে দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উপমহাদেশে চীনের আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলো। কারণ, চীন অর্থনৈতিক ও সমরশক্তিতে এখন বিশ্বের শীর্ষ সারিতে রয়েছে। আগামীর এক নম্বর পরাশক্তি হিসেবে তাকেই গণ্য করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেই নজির দেশটি দেখাতে শুরু করেছে। গত বছর চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এক ধরনের যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীন ব্যাপক শক্তি প্রদর্শন করে। এক বছর আগে সীমান্তে ভারতের সাথেও শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে নিজের শক্তিশালী অবস্থান জানান দেয়। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি চীন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক জোট গঠন, দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশও এর মধ্যে রয়েছে। বলা হয়, বাংলাদেশের এখন এক নম্বর উন্নয়নের অংশীদার চীন। মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, সমুদ্রবন্দরসহ বড় বড় মেগা প্রজেক্টে দেশটি জড়িয়ে আছে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বাংলাদেশে সফরে এসে পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, যোগাযোগ অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুসিহ বিবিন্ন ধরনের উন্নয়নকাজে ২৭টি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়। আবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও চীন রয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনের সহযোগিতা অত্যন্ত সুদৃঢ়। এ প্রেক্ষিতে, চীনের বিরুদ্ধে যায় বাংলাদেশের এমন অবস্থান দেশটির পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন। ফলে কোয়াডে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে আগেভাগেই দেশটি বাংলাদেশের প্রতি তার মনোভাব কেমন হবে, তা জানিয়ে দিয়েছে, যদিও এ বক্তব বাংলাদেশ ভালভাবে নেয়নি। চীনও পরবর্তীতে এমন বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে সমর্থন করেছে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের শত পীড়াপীড়িতেও ভারত ও প্রশান্ত মহাসগরীয় কৌশলে (আইপিএস) অংশগ্রহণে সম্মতি প্রদান করেনি। এই অংশগ্রহণ না করার কারণ, কোয়াড ও আইপিএস দুইটি জোটই উপমহাদেশে চীনের প্রভাব ঠেকানোর জন্য গঠিত হয়েছে। কূটনীতিবিদরা বরাবরই বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া জোট হয়ে চীনকে ঠেকানোর এই প্রক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা উচিৎ হবে না। কারণ, এই জোটে নিরাপত্তাজনিত বিষয় রয়েছে। অংশগ্রহণ করতে গিয়ে কারো বিরাগভাজন হওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বরং বাংলাদেশকে মধ্যপন্থা অবলম্বন বা সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা উত্তম। কারো স্বার্থেও নয়, বিরুদ্ধেও নয়- এমন অবস্থানে চলতে হবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে বিভিন্ন বিশেষণেও অভিহিত করা হয়। ভারত এ সম্পর্কের সূত্র ধরেই তার জোটে অংশগ্রহণ করার কথা নানাভাবে বলে আসছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রেখেছে। এসব জোটে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে, অর্থনৈতিক দিক থেকে বর্তমান বিশ্বে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা চীনের বিরুদ্ধে যাওয়া। অন্যকথায়, বাংলাদেশে চীনের সাথে উন্নয়নের যে অংশীদারিত্ব রয়েছে, তার বিপক্ষে যাওয়া। চীন অসন্তুষ্ট হলে তার ব্যাপক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়বে। ফলে জেনেশুনে, বাংলাদেশের পক্ষে নিজের পায়ে কুড়াল মারার কোনো কারণ থাকতে পারে না। বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কেবল তার আন্তর্জাতিক ও ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং তা অক্ষুন্ন রাখার জন্য এসব জোট করেছে। এই জোটের বিরুদ্ধে শুধু চীন কেন বিশ্বের অন্যান্য দেশও রয়েছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কোনো স্বার্থ নেই। আর সমরশক্তি প্রদর্শন করারও প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তার দরকার উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এই উন্নয়নে প্রত্যেক দেশের সঙ্গেই পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। কারো সঙ্গী বা প্রতিপক্ষ হয়ে অন্য কাউকে ঠেকানোর কাজ বাংলাদেশের নয়। সামরিক শক্তি প্রদর্শন বা যুদ্ধ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ।
তিন.
উপমহাদেশে চীনের প্রভাব অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোনো সামরিক শক্তি বা হুমকি-ধমকির মাধ্যমে নয় বরং সুসম্পর্ক বজায় রেখে এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী হয়ে দেশটি তার এ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। চীনের এই ইতিবাচক সহযোগিতা বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোও সাদরে গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে চীন করোনা মোকাবেলায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে একটি জোট গঠন করেছে। এ জোটে বাংলাদেশও অংশগ্রহণের সম্মতি দিয়েছে। এটা কোনো শক্তির মাধ্যমে বা সামরিক আধিপত্য বিস্তারের জোট নয়। পারস্পরিক উপকারভোগের স্বার্থে গঠিত হয়েছে। এছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভও (বিআরআই) গঠিত হয়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে। বাংলাদেশ এতেও অংশগ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছ থেকে এ ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধা নিয়ে কোনো ধরনের জোট গঠিত হয়নি। কোয়াড ও আইপিএস গঠিত হয়েছে উপমহাদেশে চীনকে ঠেকানোর এক ধরনের সামরিক কৌশল নিয়ে। ফলে এই দুই জোট থেকে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কোনো উপলক্ষ নেই। তাই এসব জোটে অংশগ্রহণ করা কোনোভাবেই উচিৎ হবে না। নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষকরা স্পষ্টভাবেই বলছেন, উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাজায় রাখা জরুরি। এটি যাতে বিঘিœত না হয়, সেদিকে বাংলাদেশকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ অঞ্চল ঘিরে যে ধরনের সামরিক প্রতিযোগিতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তা মোটেই কাম্য নয়। কোয়াড ও আইপিএস জোটে সামরিকীকরণ লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই দুইটি জোট গঠিতই হয়েছে এক ধরনের যুদ্ধভাবাপন্ন ও সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মতো ধ্বংসাত্মক প্রবণতা নিয়ে। এতে অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিমূলক কোনো বিষয় নেই। কোয়াড গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারত-প্রশান্ত মাহাসগরীয় অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি মোকাবেলায় কোয়াড গঠিত হয়েছে। ২০০৭ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া জোটবদ্ধভাবে এই জোট গঠন করে। জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের উদ্যোগে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় উল্লেখিত দেশ চারটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসে। চীনের সাথে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকটি হয়েছিল। সে সময় চীন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানালে দেশ চারটি বলেছিল, ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’র অংশ হিসেবে তারা বৈঠকে বসেছিল। এই অংশীদারিত্বের উদ্দেশ্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা, কোনো বিশেষ দেশকে লক্ষ্য করে নয়। তারপর কোয়াড অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। দশ বছর পর ২০১৭ সালের শেষ দিকে চীনের সাথে বৈরিতার সূত্র ধরে জোটটিকে সচল করার উদ্যোগ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এ থেকে বোঝা যায়, পরাশক্তিধর দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কোয়াড এবং আইপিএস কোনো অর্থনৈতিক জোট নয়। এগুলো একে অপরকে প্রতিরোধ করার এক ধরনের সামরিক ও স্নায়ুযুদ্ধ সৃষ্টির জোট। কাজেই এ ধরনের জোটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ থাকতে পারে না। বাংলাদেশের লক্ষ্য একটাই, সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে উন্নতি ও অগ্রগতিতে শামিল হওয়া। পরাশক্তিধর দেশগুলোর রেষারেষিতে যুক্ত হলে বাংলাদেশের একূল-ওকূল দুই কূল হারানোর শঙ্কা বেশি। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারত মনেপ্রাণে চাইবে বাংলাদেশ এসব জোটে অংশগ্রহণ করুক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে জাতীয় স্বার্থে যথোচিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলা বাহুল্য, করোনার দুঃসময়ে ভারত বাংলাদেশের সাথে কি ধরনের আচরণ করেছে, তা দেশের মানুষ জানে। কোনো ধরনের সহযোগিতা দূরে থাক উপরন্তু পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থেকে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। অগ্রিম অর্থ দিয়েও দেশটির কাছ থেকে করোনার টিকা পাওয়া যায়নি। এর বিপরীতে চীন টিকাসহ করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ এবং উন্নয়ন সহযোগী হয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা অতুলনীয়। বলা যায়, ভারত যেখানে টিকা নিয়ে আমাদের সাথে এক ধরনের প্রতারণামূলক আচরণ করেছে, চীন তার বিপরীত কাজ করেছে। সরকারও বুঝতে পেরে দেরিতে হলেও চীনের কাছে টিকা চেয়েছে। ইতোমধ্যে চীন পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে। সরকার দেরী করায় চীন থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রে পেছনের সিরিয়ালে পড়ে গেছে। এ কথাও চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং স্পষ্ট করে বলেছেন। তারপরও চীন ডিসেম্বরের আগেই টিকা দিয়ে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট, চীন বাংলাদেশে কোনো আগ্রাসী শক্তি হয়ে আসছে না। সে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ফেরিওয়ালা হয়ে এসেছে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে আসে বেনিয়া হয়ে। সে কেবল নিতে জানে, দিতে জানে না। ভারতের এ আচরণ দেশের মানুষ ভাল করেই জানে।
চার.
কাজেই চীন বা অন্য কোনো দেশের স্বার্থে নয়, নিজ স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশের বিতর্কিত কোনো জোটে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশ যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে প্রত্যেকের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলাই উত্তম। ভারতের সাথেও যেমন সম্পর্কের অবনতি করার দরকার নেই, তেমনি সবচেয়ে বড় উন্নয়নসহযোগী চীনকে হারানোরও প্রয়োজন নেই। এর ব্যত্যয় ঘটলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমরা দেখেছি, যে দেশে যুক্তরাষ্ট্র গেছে, সে দেশকে তছনছ করে ছেড়েছে। এজন্য পর্যবেক্ষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যার মিত্র তার শত্রæর প্রয়োজন নেই। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভারত। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলাই হবে সর্বোৎকৃষ্ট কূটনীতি। এর মাধ্যমে প্রত্যেক দেশের সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বাজায় রেখে নিজের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতির এই মূলমন্ত্রকেই ধারণ করে চলতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।