পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মহান স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে ৫১তম বর্ষে পদার্পণ করেছে গত ২৬ মার্চ। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে স্বাধীনতার মূল স্বপ্নের কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলে। এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও। স্বাধীনতার মূল আকাক্সক্ষার প্রধানতম হচ্ছে: অবাধ গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, বৈষম্যহীনতা বা সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার রক্ষা ইত্যাদি। এসবের বাস্তবতা কী? দেশে গণতন্ত্র আছে। কিন্তু সেটা হয়ে পড়েছে নিয়ন্ত্রিত। ক্ষমতাসীন দল-আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। অবাধে মিছিল-মিটিং করতে পারছে না। সাধারণ মানুষও প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছে না। এক ভীতিকর অবস্থা চলছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তাই নিয়মিতভাবে নির্বাচন হলেও সেটা নামকাওয়াস্তে হচ্ছে। নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হচ্ছে। তাতে ভোট পাগল বলে খ্যাত বাংলাদেশের মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারছে না। তাই ভোটার খুঁজে পাওয়া যায় না ভোট কেন্দ্রে। তবুও কে বা কারা ভোট দিয়ে দিচ্ছে আগেই। ইভিএম নামক আধুনিক যন্ত্রেও একই অবস্থা। ভোটারের আঙ্গুল ধরে অন্যজন টিপ দিয়ে দিচ্ছে। আর টিপ দিলেই নির্দিষ্ট একটি মার্কাতেই চলে যাচ্ছে ভোট বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কাস্টিং ভোটের হার অনেক হচ্ছে। তাই সরকারি দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য কারও বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়ার তথা অটোপাশের সংখ্যা ব্যাপক। সরকারি দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য জোর প্রতিদ্বন্ধিতা চলছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও ব্যাপক। এসব নিয়ে এবং নির্বাচনে মারামারি-হানাহানি ইত্যাদির অন্ত নেই। এটা জাতীয় নির্বাচনের চিত্র। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও একই অবস্থা চলছে দলীয় মার্কার ভিত্তিতে নির্বাচন চালু হওয়ার পর থেকে। এরূপ কলঙ্কিত নির্বাচনে দেশের বৃহৎ দল-বিএনপি আর অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। আরও কিছু দলের অবস্থাও তাই। ফলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন মোটামুটি এক দলীয় ভিত্তিতে হতে চলেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর থেকেই জাতীয় নির্বাচনের মহাকেলেংকারী শুরু হয়েছে। তবুও ইসি নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও মাঝে মধ্যে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন। তাতে অবশ্য নির্বাচনের প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থায় চরম দৈনদশা চলছে। এ থেকে রক্ষা পেয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে ইসিকে দল নিরপেক্ষ ও দক্ষ লোক দিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধান পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান নির্বাচনের অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবুও এ দাবিতে কথা বলা কিংবা আন্দোলন করার উপায় নেই।করতে গেলেই হামলা-মামলা, জেল-জুলম নির্ঘাত। সর্বোপরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো রয়েছেই। এই আইনে ধরা পড়লে জামিন নেই। ভয়াবহ নির্যাতন তো রয়েছেই। মিডিয়া ও সুশীল সমাজ সেল্ফ সেন্সরশিপে চলে গেছেন। দেশের বেশিরভাগ মিডিয়ার মালিক সরকারি দলের পক্ষে। তাই তারা মুসাহেবিতেই সদা ব্যস্ত।তবুও যেটুকু না বললেই নয়, সেটুকুও বলতে পারছে না উক্ত কালো আইনের ভয়ে! কিন্তু পথ যত দুর্গমই হোক না কেন,তা পার হতেই হবে। ইসি পুনর্গঠন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধান চালু এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বিকল্প নেই। সেটি কোন একক দলের প্রচেষ্টায় হবে না। ডান-বাম-মধ্য তথা সব বিরোধী দল মিলে এক মঞ্চ থেকে আন্দোলন করতে হবে যৌথ নেতৃত্বে। সাদা-কালো বাছ বিচার করলে আন্দোলন কোন দিনই সফল হবে না। দেশের ক্ষতি অব্যাহত থাকবে।
বিধি মোতাবেক দেশের শাসন ব্যবস্থা হয়ে রয়েছে এককেন্দ্রিক। তাই ভ্যারাইটিস ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রের লক্ষণীয় অবনতি হয়েছে। বিশ্বের ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫৪তম, স্কোর ০.১। বাংলাদেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে ‘নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র’ বিভাগে রাখা হয়েছে। ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১ ডেমোক্রেসি আন্ডার সিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া দেশগুলোর তালিকায় ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ ও ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারভূক্ত। জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানও অনুরূপ মন্তব্য করেছে। বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও অবাধ গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি।এমনকি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততমজন্মবার্ষিকীও পালন করতে পারেনি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো। ১৭-২৭ মার্চ পর্যন্ত তাদের সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীকেও দলীয়করণ করা হয়েছে। তাই সরকারের কর্মকান্ডকে বিরোধী দলগুলো বিরাজনীতিকরণের প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছে। এর আগে ১/১১ সরকারও বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বরং বুমেরাং হয়েছে। নিজেরা দেশ ছাড়া হয়ে বিদেশে ভীষণ কষ্টের মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে,দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হচ্ছে না। এই অবস্থায় সংবিধান মতে, স্থানীয় সরকারসমূহ পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী এবং নির্বাহী ক্ষমতায় ব্যাপক ভারসাম্য সৃষ্টি করার বিধান করা দরকার।নতুবা গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতা চলতেই থাকবে। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য ও উদ্যোগ দরকার।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার সনদ পেয়েছে জাতিসংঘ কর্তৃক। দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী ২০২৬ সাল থেকে। দেশের উন্নতি হয়েছে, অর্থনীতির আকার বেড়েছে। উন্নতির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্রিটেনের সেন্টার ফর ইকোনোমিক এন্ড বিজনেস রিসার্চের সর্বশেষ রিপোর্ট মতে, ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। কিন্তু দেশের এই কল্পনাতীত উন্নতির সুফল পেয়েছে বা পাচ্ছে কি সাধারণ মানুষ? পায়নি বা পাচ্ছে না। দেশের দারিদ্র্যের হার করোনা মহামারির কারণে ২০% থেকে বেড়ে ৪২% হয়েছে। তারা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অতি সা¤প্রতিক বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪৬% পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা নেই পুষ্টিপূর্ণ খাওয়ার। তথ্য মতে, ক্ষুধার্তের সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। গত ২২ মার্চ এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘নওগাঁর মান্দার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী স¤প্রদায়ের বিস্ট পাহান ও পূর্ণিমা পাহান দম্পতি একটি ঘরে দুটি গরু নিয়ে বসবাস করছেন। তাদের নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যের জমিতে একটি কুঁড়ে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। দুটি গরুও সেখানে রাখছেন’। খবরটি খুবই হৃদয় বিদারক। তবুও এ ধরনের খবর অসংখ্য রয়েছে দেশে। কারণ, দেশে এখনও ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বিপুল। তারা যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করছে। তাদের বেশিরভাগের ঠাই শহরের অলিগলিতে, রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে ও শহরের বস্তিতে। গত ২৩ জানুয়ারি ৬৬,১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বিবিএস এর ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপ ২০১৯’ রিপোর্ট মতে, দেশের রাজধানী ঢাকাসহ নগরাঞ্চলের বাসিন্দাদের খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকেন ২১ শতাংশের বেশি মানুষ। আর খাবার না পেয়ে একবেলা উপোস থাকতে হচ্ছে ৭ শতাংশকে। অপরদিকে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে বাড়তে সাধারণ মানুষের ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কিন্তু সে হারে আয়-উপার্জন বাড়ছে না তাদের। বরং করোনাকালে বেশিরভাগ মানুষের উপার্জন অনেক কমে গেছে। ফলে মধ্যবিত্তরা নিচে নামতে নামতে নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছে।
দেশে কিছু সংখ্যক মানুষ অতি ধনী হওয়ার দিক দিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে পরপর কয়েকবার। ওয়েলথ-এক্সের হিসাবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭% হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ মোট ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ স্বাধীনতার পূর্বে দেশে ধনী পরিবারের সংখ্যা ছিল ২২, আর এখন সেটা দাঁড়িয়েছে লক্ষাধিক। ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ১৯৭২ সালে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ জন। সেটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় ৮৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের আমানতের বাইরেও অনেক কোটিপতি রয়েছে। এসবের অধিকাংশই হয়েছে অবৈধভাবে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু লোক দেশের বেশিরভাগ সম্পদের মালিক হয়েছে। এই তথ্য খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবিএস এর।অআর বেশিরভাগ মানুষ যে তিমিরে ছিল, সেখানের রয়েছে। তাই দেশের আয় বৈষম্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। স¤প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-২০১৮-২০২০ মতে, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০১তম(এর আগে ২০১৭-২০১৯ সালের রিপোর্টে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১০৭তম)। সুখের পরিমাপক হিসাবে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক উদারতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, জিডিপি, গড় আয়ু এবং দুর্নীতির মাত্রা বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হয়। এর সাথে এবার করোনাভাইরাস মহামারিতে মানুষের সার্বিক পরিস্থিতিকে যুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে, ইআরডি ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি রয়েছে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার। সে মতে, জনপ্রতি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩,৪২৫ কোটি টাকা। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচক-২০২০ মতে, বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৫তম এবং গেøাবাল নলেজ ইনডেক্স-২০২০ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ১১২তম। সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এছাড়া, বেকারত্বের দিক দিয়ে বিশ্বে সর্বাধিক হয়েছে দেশ।
স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার অন্যতম হচ্ছে, ন্যায়বিচার। কিন্তু সেটা আজও সাধারণ মানুষের ভাগ্যে জোটেনি। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এটা হয়েছে। সংবিধান মতে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী করা হয়নি। সর্বোপরি এর জনবল হয়েছে শতভাগ দলীয়করণ। সরকারি অন্যসব প্রতিষ্ঠানেরও অবস্থাও তথৈবচ। অর্থাৎ সরকারি জনবলকে দলীয় কর্মীতে পরিণত করা হয়েছে। তাই তারা কর্মও করছেন সেভাবেই। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। সর্বত্রই চলছে ইচ্ছামাফিক কাজ। জবাবদিহির বালাই নেই কোথাও। ফলে সর্বত্রই কাজের চেয়ে অকাজই হচ্ছে বেশি। তাই সব ধরনের অবরাধ বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় অবাধ হয়ে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫-৩৬ লাখ। তন্মধ্যে অনেকগুলো কয়েক যুগের। মামলার ব্যয়ও অত্যধিক।দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক। উপরন্তু মামলা শুরু হওয়ার পর কবে শেষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েও সহজে মামলায় জড়াতে চায় না। গ্রাম্য বিচার দিনে দিনে উঠে গেছে। যেটুকু আছে, তার বেশিরভাগ রায় হয় শক্তিশালী মানুষের পক্ষে। এভাবে দেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে স্বাধীনতালাভের দীর্ঘকাল পরেও। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী এবং নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারবহির্ভূত করা এবং সরকারী সব প্রতিষ্ঠানের জনবলকে দলীয়করণমুক্ত করা ছাড়া দেশে ন্যায়বিচার পাওয়া এবং অপরাধসমূহ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সব চেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কারণে দেশটি স্বাধীন হয়েছে, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা আজও প্রণয়ন করা হয়নি। অনবরত এর সংযোজন-বিয়োজন চলছে। এর শেষ কবে তা বলা কঠিন। এছাড়া, শহীদদের নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং তা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/উপজেলার নির্দিষ্টস্থানে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখার কাজ শুরুই করা হয়নি। অথচ এসব কাজ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এসব মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।