Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালেবানদেরকে একাধিক বিয়ে না করার নির্দেশ শীর্ষ নেতার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

বিভিন্ন গ্রুপের নেতা এবং কমান্ডারদের বহুবিবাহ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আফগানিস্তানের শীর্ষ তালেবান নেতা। এ বিষয়ে একটি ডিক্রি জারি করে তিনি বলেছেন, ‘এটা করে আমাদের শত্রুদেরকে আমরাই সুযোগ করে দিচ্ছি সমালোচনা করার।’ বিবিসির সংবাদদাতা খুদাই নুর নাসার এই তথ্য জানিয়েছেন।

ধর্ম অনুসারে মুসলমান পুরুষরা চারটা বিয়ে করতে পারে। আর পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং কিছু মুসলিম অধ্যুষিত দেশে বহুবিবাহ এখনো বৈধ। কিন্তু তালেবানের সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে, এই বহুবিবাহ করতে যেয়ে কমান্ডারদের অধিক অর্থের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। এর কারণ - অনেক আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের পাশতুন আদিবাসী পরিবারে বিয়ে করতে হলে কনে পক্ষকে চড়া মূল্য দিতে হয়। এই ডিক্রি এমন এক মুহূর্তে জারি করা হল যে সময়টা তালেবান এবং দেশটির জন্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে জঙ্গি গ্রুপটি সরকারের সাথে আলোচনারত রয়েছে। সূত্র বলছে, তালেবানের শীর্ষ-নেতারা তাদের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা বহুগামিতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য অর্থ জোগাড় করার উদ্যোগ নিয়েছে। বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদের একাধিক স্ত্রী আছে। তবে যারা আগে থেকেই বহুবিবাহে আছে তাদের ক্ষেত্রে এই নতুন ডিক্রি প্রযোজ্য হবে না।

ডিক্রিতে কী বলা হচ্ছে: আফগান তালেবান নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহর নামে ইস্যু করা এই ডিক্রিতে বলা হয়েছে - দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। তবে বিবাহ উৎসবে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তাতে করে তালেবানদের যারা প্রতিপক্ষ তাদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে সমালোচনা করার জন্য। যদি সব নেতৃত্ব এবং কমান্ডাররা বহুগামিতা এড়িয়ে চলেন, তাহলে তাদের অবৈধ দুর্নীতিতে জড়াতে হবে না। তবে এখানে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। বহুবিবাহ যেসব পুরুষরাই করতে পারবে যাদের কোন সন্তান নেই, বা যাদের আগের কোন বিয়ে সম্পর্ক থেকে ছেলে সন্তান নেই, অথবা যারা একজন বিধবাকে বিয়ে করছে, কিংবা যারা একের অধিক স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে পারবে। ডিক্রিতে বলা হয়েছে এই পরিস্থিতিতে যদি কেউ বহুবিবাহ করতে চান, তাহলে বিয়ের আয়োজনের আগেই তাকে তার সরাসরি ঊর্ধ্বতন নেতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তালেবানের সোর্স বিবিসিকে জানিয়েছে, এই চিঠিটা আফগানিস্তান ও পাকিস্তান তালিবানের সর্বস্তরে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের পাশতুন সমাজে বহুগামিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের আসলে তেমন কিছুই বলার থাকে না যে তারা কাকে, কখন বিয়ে করবে। গ্রামীণ পুরুষতান্ত্রিক পাশতুন সমাজে বিয়ের পর বাচ্চা না থাকা বিশেষ করে ছেলে সন্তান না থাকাকে আরেকটি বিয়ে করার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। আরেকটা কারণ হল সংসারে ঝগড়া-বিবাদ, যার জন্য কেবল স্ত্রীকেই দায়ী করা হয়। একজন বিধবাকে তার মারা যাওয়া স্বামীর ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এতে করে বিধবা এবং পরিবারের সম্মান দুটোই রক্ষা পায়। যদিও যে ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে তিনি আগে থেকেই বিবাহিত হতেই পারেন। আর যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের জন্য বহুগামিতা একটা মর্যাদার ব্যাপার। এইসব বিয়েতে ‘ওয়ালওয়ার’ বা কনের মূল্য নামে এক প্রথা রয়েছে, যার ফলে কনের পরিবার মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়ার বিনিময়ে অর্থ পায়।

অনেক বছর ধরে আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, যখন তালেবান নেতারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছেন সেখানে সৈনিকরা একেবারে দিন আনে দিন খায় অবস্থায় দিন কাটায়। গতবছর ডাভোস ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি একটা প্যানেল আলোচনায় বলেছিলেন, ‘ভাল খবর হল তালেবান যোদ্ধারা যুদ্ধ করতে করতে এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং এখন তারা চতুর্থ এবং পঞ্চম স্ত্রীর সাথে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন।’ তালেবান নেতাদের জন্য কনের মূল্য আর্থিক বিবেচনায় উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, একটা বিয়ের জন্য তারা ২৬ হাজার পাউন্ড থেকে এক লাখ পাউন্ড খরচ করছে। এই অর্থ তারা সংগঠনটির ফান্ড থেকে নিচ্ছে অথবা বিতর্কিত উপায়ে অর্থ জোগাড় করছে। সূত্র: বিবিসি।



 

Show all comments
  • Habib ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    Don't believe this fake news. This is other one agenda against Muslim brothers. It is proved that UK and US failed in Afghanistan.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান

১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ