পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মহাসড়কে দখলবাজি, স্থাপনা নির্মান, রক্ষণাবেক্ষন শৃঙ্খলা বিধান ও নিরাপত্তা বিধান কল্পে মহাসড়ক আইন ২০২০ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। মহাসড়কে অবৈধ দখল, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা রুখতে বিদ্যমান আইনের পরিবর্তনের বিকল্প নেই। প্রায় শত বছরের পুরনো ১৯২৫ সালের হাইওয়ে অ্যাক্টে মহাসড়কে অবৈধ দখল ও অপরাধমূলক তৎপরতায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদন্ডের বিধান আছে। বর্তমান বাস্তবতায় শাস্তি ও জরিমানা খুবই অপ্রতুল হলেও এই আইনের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। এ কারণে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ দখলদারিত্ব বেড়ে চলেছে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে উচ্ছেদ ও জরিমানা করা হলেও স্থায়ী প্রভাব দেখা যায় না। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় তা দখল হওয়ার চিত্র প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। মহাসড়কে দখলবাজি ও নিয়মভঙ্গের প্রবণতা কমিয়ে এনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত সোমবার মন্ত্রী পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় পাস হওয়া আইনের খসড়ায় সড়কে যেকোনো ধরনের দখল এবং সড়ক আইন ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দায়ে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে বলে জানা যায়। যদিও কঠোর আইন অপরাধ কমিয়ে আনার মূল শর্ত নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ বা বাস্তবায়নই হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ।
জনসংখ্যা ও নগরায়ণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতার প্রকৃতিও বদলে যেতে বাধ্য। এ কারণে আইনের পরিবর্তনও সময়ের দাবী। দেশের সড়ক পরিবহন আইনসহ ফৌজদারী কার্যবিধির বড় অংশই এখনো শত বছরের পুরনো আইনে চলছে। এসব আইনগত প্রক্রিয়াকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তোলার পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনের পরিবর্তনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত অবস্থারও সময়োপযোগী পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। গত সোমবারের মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে দেশের সব মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার একটি প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগ, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ মন্থর গতির যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ৮০ ভাগ কমে আসতে পারে বলে মন্ত্রী পরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ জন্য মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি মন্থর ও অযান্ত্রিক পরিবহনের জন্য সার্ভিস লেন, আন্ডারপাস এবং ওভারব্রিজ নির্মানের উদ্যোগের কথাও বলেছেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মহাসড়কে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা ও হাটবাজার উচ্ছেদ করে যান চলাচলের গতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ আহত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সড়কে যানজটে জাতীয় উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বছরে যে পরিমান অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, তার অঙ্কও বিশাল। এ খাতে জিডিপির অন্তত এক শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করা হয়। মহাসড়কের নিরাপত্তা, সুশৃঙ্খল ও স্বাচ্ছন্দ চলাচল নিশ্চিত করা অন্যতম গণদাবীতে পরিনত হয়েছে। রাস্তার ফুটপাতে গাড়ী তুলে দিয়ে শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে রাজপথে নেমে এসে এক ব্যতিক্রমী ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা। সেই থেকে সড়ক মহাসড়কের বিদ্যমান আইনের পরিবর্তনের উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে সরকার। মহাসড়ক আইন ২০২০ এ ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে গণ্য করা যায়। আইনের খসড়াটি মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর তা আইনে পরিনত হতে আর তেমন বাঁধা নেই। এখন এর দ্রæত বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মহাসড়কের উপর যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, তা যথাশীঘ্র উচ্ছেদ করে সড়কের নিরাপত্তা ও প্রশস্ততা নিশ্চিত করতে হবে। মূলত স্থানীয় প্রভাবশালীরাই সড়ক-মহাসড়কের সরকারি জমিতে দখলবাজি ও অবৈধ স্থাপনা নির্মানসহ হাটবাজার বসিয়ে থাকে। অবৈধ দখল উচ্ছেদে মহাসড়কের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পথ সুগম করার জন্য প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক জরিমানা ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কের পরিচ্ছন্নতা ও গতিশীলতায় আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারলে দুর্ঘটনা ও যানজট সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। দলমত নির্বিশেষে আইনের নিয়মিত ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে দখল ও পুন:দখলের ইঁদুর বিড়াল খেলা বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।