পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়, এত উন্নয়নের পরেও অনেকে বলে আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের একশ মহাসড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ যখন যাত্রা শুরু করে, ঠিক সেই সময়েই ৭৫’র ১৫ আগস্টের আঘাত আসে। থেমে যায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কত দেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখি। প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি বেঁচে থাকতেন, তার হাতে যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকতো, তাহলে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হতো বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত। কিন্তু ঘাতকদের কারণে সেটা হতে পারেনি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করেছি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করি।
দেশের উন্নয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রম ও পদক্ষেপের তুলনামূলক বিচার করে জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরমার্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সকলকে স্মরণ রাখতে হবে যে কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল, আর কখন দেশের মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির কবলে পড়ে নিজের জীবনমানকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা সকলকে স্মরণ করে সেই তুলনা করেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কী চান। তিনি বলেন, যারা বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি, দেশ ধ্বংসই করেছে- তাদেরকে আজকে আমি প্রশ্ন করি, যে ১০০টা মহাসড়কের নামের তালিকা আমরা বললাম। অধিকাংশ আমরা তৈরি করেছি এখন সেগুলো উন্নত করে দিলাম। আর নতুন সড়ক করে দিলাম। ১০০ সেতু একই দিনে উদ্বোধন, ১০০টি সড়ক একই দিনে উদ্বোধন। এটা অতীতে কেউ কখনো করতে পেরেছে? পারেনি। পারে আওয়ামী লীগই। এটাই প্রমাণিত সত্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এরপরও যারা বলে যে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই নাকি করে নাই তো দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করবে কিনা সেটাই আমার প্রশ্ন? উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে, আমরা বিশ্বাস করি গণমানুষ যেন ভালো জীবন যাপন করতে পারে সেই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। মানুষের জীবন মান উন্নত করা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার প্রসার ঘটানো, উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ভকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, দক্ষ মানব শক্তি গড়ে তোলা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন মানব শক্তি গড়ে তোলা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্ঞানে এবং দক্ষতায় প্রতিটি বাঙালি যেন সেইভাবে তৈরি হয় সে লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ওই মানিলন্ডারিং, অগ্নি সন্ত্রাসকারী অথবা গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ মানুষ হত্যাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতা, এই ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন কেউ যেন এ দেশের ক্ষমতায় না আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করেনি, স্বাধীনতার চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না, যারা জয় বাংলা সেøাগানে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এদেশের কোনো উন্নতিও চায় না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকতে কী করেছে? আমি আশা করি দেশবাসী অন্তত সেটা একটু বিবেচনা করে দেখবেন। আমি জানি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আমরা প্রাইভেট টেলিভিশন দিয়েছি, রেডিও দিয়েছি, অনলাইন সব ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখন যোগাযোগ। কাজেই সত্য মিথ্যা অনেক কিছু বলা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমরা এ দেশের মানুষকে একটু শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই এবং সেটা আমরা প্রমান করেছি। বারবার ঝড়-ঝাপটা এসেছে আমরা তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাব।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা এই দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব এবং সেই স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করবে এবং সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেটা আমরা কিছু বাস্তবায়নও করছি। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এর হাত থেকে রক্ষা করে এ দেশের জনগোষ্ঠীকে একটা উন্নত জীবন দিতে চাই। সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সেটাও প্রণয়ন করে আমরা সেটাও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি এবং এটা চলমানই থাকবে।
পরিবহন চালকসহ সবাইকে সড়কে চলাচলের নিয়মগুলো মেনে চলার তাগিদ দিয়ে শিশু-কিশোরদের একেবারে স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে। এটা আমি প্রশাসনের সকল স্তরেই বলব যে শুধু স্কুল থেকে এখনই ট্রেনিং দেওয়া না, সাধারণ মানুষকে এই ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। দরকার হলে প্রতিটি জায়গায় সাইন বোর্ড টানিয়ে টানিয়ে বা হাটে-বাজারে বা রাস্তার মোড়ে-মোড়ে এগুলো প্রদর্শন করতে হবে।
গাড়িচালকদের জন্য মহাসড়কে বিশ্রামাগার তৈরির উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দুর্ঘটনা কমাতে নির্দিষ্ট সময় পর চালকদের বিকল্প কাউকে রাখা এবং চালকদের বিষয়ে মালিকদের যত্নবান হবার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন দুর্ঘটনা হলে যিনি দুর্ঘটনাকবলিত, অনেক সময় জনগণ তাকে সাহায্য না করে গাড়ি চালককে মারধর করার শুরু করে এবং গণপিটুনিতে গাড়ি চালক মারা যায়। এই কাজটা কেউ দয়া করে করবেন না। কেউ ইচ্ছা করে মানুষকে মারে না বা ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয় না।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি অপরাধ করে আপনারা ধরেন। থানায় দিয়ে দেন। পুলিশে দিয়ে দেন। তার বিচার হবে। আমরা সড়ক আইনও করে দিয়েছি এটা বিচারের জন্য। কেউ রাস্তায় পড়ে গেলে গাড়িচালক গণপিটুনির ভয়ে গাড়ি না থামিয়ে তার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে পারে; যদিও যিনি পড়ে গিয়েছেন আরেকবার তার উপর দিয়ে গাড়ি না গেলে হয়ত বেঁচেও যেতে পারতেন। এই ভীতি থেকে ড্রাইভারকে মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনুরোধ করব, আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে ওই ড্রাইভারকে মেরে ফেললে পিটিয়ে সমাধান হবে ন্ াবরং যার অ্যাক্সিডেন্ট হল, সাথে সাথে পুলিশ ডেকে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সেই কাজটাই করবেন। যে আঘাত প্রাপ্ত তাকে সাহায্য করেন। ড্রাইভারকে মেরে সমাধান হবে না।
সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার এটা বলতে হবে। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।