পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহাসড়কের পাশে জমছে আবর্জনার স্তূপ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট সবজির স্তূপ পড়ছে মহাসড়কের পাশে। পরিবেশ অধিদফতরের দৃষ্টি নেই এদিকে। এতে করে পরিবেশ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমনি দুর্ভোগে পড়ছে মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীও চালকরা। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মহাসড়কের সৌর্ন্দয যেমনি নষ্ট হচ্ছে তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। ময়লার গন্ধে মহাসড়কে যাত্রীদের নাভিশ্বাস চরমে। এতে ক্ষুব্ধ খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।
মহাসড়কে ময়লা ফেলা নিষেধ করার পরও কেন মহাসড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা রয়েছে এ ব্যাপারে বিগত দিনে ভিডিও কনফারেন্সে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়তও চান মন্ত্রী। অন্যদিকে মন্ত্রীর এই নির্দেশের পরও মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন পৌরসভার গাড়ি দিয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে ময়লা ফেলার শ্রমিকরা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন পৌরসভা কিংবা বাজার কমিটির নির্দেশে এসব ময়লা ফেলা হচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন বাজারের ইজারাদারকে চিঠি দিয়েছি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মামলা দায়েরের সুপারিশ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
বিভিন্ন এলাকায় সড়ক-মহাসড়কের ঘুরে দেখা যায় শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই নয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-গাজীপুর সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়ের স্তূপ পড়ে আছে। এইসব মহাসড়কের পাশে খোলা জায়গায় ময়লা আবর্জনা পচে-গলে বাতাসকে মারাত্মক দূষিত করে। বর্ষা মৌসুমে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। রাস্তার পাশে সড়কে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অচল করে দিচ্ছে। উন্মুক্ত স্থান থেকেও কঠিন ও তরল আবর্জনা প্রতিনিয়ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে। রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, মিল-কারখানার তৈলাক্ত পদার্থ, কসাইখানার রক্ত, ছাপাখানার রং, হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত না হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠেছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধীরে ধীরে তা ময়লার ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। অপরদিকে, বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে যত মানুষ মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত রোগের কারণে। বায়ু দূষণের কারণে শিশুদের বুদ্ধি কমে যায়। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। বায়ু দূষণের ফলে চোখ ও শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হয়। এ নিয়ে পরিবেশবিদ নেতা আলী ইউসূফ বলেন, ময়লার স্তুপই এই নগরে সবচেয়ে সমস্যা। আর এ সমস্যা যারা তৈরি করছেন তারাতো খুব ক্ষমতাবান। তা না হলে কেউ এই ময়লা সরাতে পারছে না কেন?
পরিবেশকর্মী ইমাম হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে। কিভাবে দিনের পর দিন এমন চলতে পারে ? এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আহমেদ আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু দূষিত ও চরম দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস আমাদের নাসারন্ধের মাধ্যমে দেহাভ্যন্তরে প্রবেশের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য কোনো উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান যেন মরা পশু, হাঁস-মুরগি আর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হয়ে উঠেছে। দুর্গন্ধে মহাসড়কে চলাচলকারী হাজারো যানবাহনের যাত্রী, পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের গৌরীপুর, তালতলি, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, কাবিলা, নিশ্চিন্তপুর, আমতলী, আলেখারচর, পদুয়ারবাজার, সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, মিরসরাই, সীতাকুন্ড মহাসড়কের পাশে কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে স্তূপ তৈরি হয়েছে। এসব স্তূপে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দুইপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাসহ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আবার কোথাও রাস্তার পিচের ওপর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার ভাগাড়ে পশু-পাখি ও কুকুর-বিড়াল খাবারের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করার সময় এলোমেলো করে মহাসড়কে ছড়িয়ে ফেলছে। বিশেষ করে বাতাসে ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। এই মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার নিমসার কাঁচাবাজার লাগোয়া দুর্গন্ধ ছড়ানো বড় ময়লার স্তূপটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ বলে মন্তব্য করেন বাসিন্দারা। কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. মোবারক হোসেন বলেন, ময়লা-আবর্জনা থেকে মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও লোকজনসহ সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী শহরের প্রবেশদ্বার ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়। এখানে ময়লা ফেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মহাসড়কে চলাচলকারী পথচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে এখানে দুর্ভোগ চললেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের। কাছেই বাসস্ট্যান্ডে থামানো বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীদেরও দুর্গন্ধে বসে থাকতে হয় নাকে কাপড় দিয়ে অথবা হাত দিয়ে চেপে ধরে। একই অবস্থা নরসিংদী পৌর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন নরসিংদী-মাধবদী-মদনগঞ্জ সড়কের ময়লার ভাগাড়েও। বর্ষায় জলাবদ্ধতাসহ ময়লার দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজারো যানবাহন চলাচল করে থাকে। সিলেটে কাউকে ঢুকতে হলে এ মহাসড়ক দিয়েই ঢুকতে হয়। মহাসড়কটি দিয়ে শিক্ষার্থী, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নগরে যাতায়াত করে থাকেন। এতে প্রতিদিনই তাঁদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
ঢাকা-গাজীপুর সড়ক : ঢাকা-গাজীপুরের টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের পাশেই ময়লা ফেলছে সিটি করপোরেশন। সেই ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় এলাকবাসী ও পথচারীদের। ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র সরিয়ে না নেওয়ায় তা এ সড়কে এসে পড়ছে। এতে সড়কটি সরু হয়ে যাচ্ছে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় গাজীপুর মহাসড়কের কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। ময়লার পাশেই রয়েছে ওষুধ কারখানা, আঞ্চলিক কর কমিশনারের কার্যালয় ও সমাজসেবা অধিদফতর। ফলে প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করা পোশাক শ্রমিক, ওষুধ কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। স্থানীয় বাসিন্দা ডা. আসাদুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুর্গন্ধে এ সড়কের এক পাশ দিয়ে চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার না করায় তা পচে আশপাশে বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় ওইখানে ময়লা ফেলতে হচ্ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বর্জ্য ফেলে আসছে শ্রীপুর পৌরসভা। এতে প্রতিনিয়ত পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও আশপাশের বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে আবর্জনার স্তূপ। শ্রীপুর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ না করা পৌরবাসীর অনেকদিনের দাবি।
তবে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শওকত আরা বলেন, বেশ কয়েকবার পৌর প্রশাসনকে ময়লা না ফেলার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। অবশেষে পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্সমেন্টকে তাদের উদাসীনতার বিষয়ে জানিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কোনোভাবেই মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। পরিবেশকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখার পাশাপাশি যথাযথ স্থানে ময়লা ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।