পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একের পর এক মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে গণডাকাতি, দলবদ্ধ ধর্ষণে ভয়ঙ্কর হয়ে পড়েছে সড়ক-মহাসড়ক। যাত্রীবাহী বাসগুলো যেখানে সেখানে থামিয়ে যখন তখন যাত্রী তোলার বিষয়টি এখন মহাসড়ক আতঙ্ক। রাতের মহাসড়ক অনেকটাই হয়ে উঠেছে নিরাপত্তাহীন। হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। আইন মানতে বাধ্য করানোর অভাবে মহাসড়ক এখন অরক্ষিত। সম্প্রতি মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অর্ধশত চক্র নানা কৌশলে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন জেলার সাথে ঢাকাকে যুক্ত করা মহাসড়কগুলোতে।
সম্প্রতি সময়ে গন্তব্য পার্টি নামে একটি চক্র মহাসড়কে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গন্তব্যগামী যাত্রীদের টার্গেট করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যারা ছিনতাই ও ডাকাতিতে বাধা দিচ্ছে তাদের হাত, পা ও মুখ বেঁধে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। চক্রটি সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার পর ভুক্তভোগীদের রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, ছিনতাই বা ডাকাতি করতে খুন করতে তারা পিছপা হচ্ছে না। এমনই একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর সর্বস্ব লুটে নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে জানতে পারে গোয়েন্দা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চক্রটি মহাসড়কে দুই শতাধিক ছিনতাই ও বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ কাজে তারা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, টঙ্গী-গাজীপুর, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে টার্গেট করছে। যখন মহাসড়কের যাত্রী মেলে না, তখন তারা একই কৌশলে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করছে। যাত্রী ওঠানোর কৌশল হিসেবে তারা নতুন নতুন অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রামের বাড়ি ফেনির উদ্দেশ্যে রওনা দেন সুইডন প্রবাসী আহমেদ হোসেন। ওইদিন রাত ১২ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার সদর দক্ষিণের মাটিয়ারা এলাকায় আসামাত্র গাড়ির নিচে ভারী কিছুর আঘাতের শব্দ পেয়ে থেমে যান চালক। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। গাড়ি থামাতেই মহাসড়কের পাশের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে ১০ জনের একদল ডাকাত। ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়ি থেকে ওই প্রবাসীর লাগেজ ও ব্যাকপ্যাক ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। বাঁধা দিলে প্রবাসীর হাতে ও পিঠে কুপিয়ে জখম করে। যুবকের সাথে ডাকাতদের ধস্তাধস্তির সময়ই মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশের একটি টহল দল তাদের দেখে ফেলায় পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে। এসময় ডাকাতদের সাথে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ডাকাত দলের দুই সদস্য রহিম ও মো. সাব্বিরকে আটক করা হয়। আটক রহিমের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ম্যাগাজিন ও গুলিসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এএসআই ইয়াসিন ও কনস্টেবল মামুন আহত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ওই ডাকাত চক্রটি প্রথমে চলন্ত গাড়িতে রড ছুড়ে মারে। এতে চালক গাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে মনে করে থামালেই পড়ে যান ডাকাতের কবলে। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কড্ডায় পুলিশের মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, মহাসড়কে পুলিশের মাইক্রোবাস থেকে ছিনতাই করা জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের চার দিন পর উদ্ধার এবং দেশিয় অস্ত্রসহ ছয় ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও সিরাজগঞ্জের কয়েকটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, মহাসড়ক এখন এক আতঙ্কের নাম। এখন প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে যানবাহনে। আর অধিকাংশ ঘটনায়ই নেই কোনো প্রতিকার। যানবাহনে কয়েক ঘণ্টা ধরে ডাকাতি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও হাইওয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। পুলিশের যথাযথ পদক্ষেপের অভাব, বাসের চালক-সহযোগিদের নিয়ম না মানা এবং আইন ভেঙে মহাসড়ক থেকে যেখানে সেখানে যাত্রী তুলে রাতের যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, নাইট কোচে যাতে ডাকাতির ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা রয়েছে। বাসে ওঠানোর সময় সব যাত্রীর ভিডিও করা। আবার হোটেলে বিরতির পর ফের গাড়ি চালু হওয়ার সময় যাত্রীদের ছবি তোলা। এ ছাড়া নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া কোথাও গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নামানো ও ওঠানো যাবে না।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী সদস্য কাজী ফরিদুল হক বলেন, হাইওয়ের নিরাপত্তার জন্য এখন স্বতন্ত্র হাইওয়ে পুলিশ ইউনিট রয়েছে। তাদের সদিচ্ছা এবং তৎপরতা থাকলে ডাকাতরা খুব বেশি সক্রিয় হওয়ার সাহস দেখাবে না। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লার কয়েকটি এলাকায় রড ছিনতাইকারী চক্র আছে। তারা মহাসড়কে হঠাৎ বিকট শব্দ তৈরি করে। চালকরা চাকা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কায় গাড়ি থামান। তখন ডাকাতির শিকার হন। এ ধরনের অপরাধে কয়েকটি চক্রকে ধরা হয়। আর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সব বাসে পুশ বাটন নামে একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪০ থেকে ৪৫টি স্থানে প্রায়ই ডাকাতি হচ্ছে। এর মধ্যে কাঁচপুর, চান্দিনার গোমতা, সদর দক্ষিণ উপজেলায় মাটিয়ারা, আশুলিয়া, চম্পাগঞ্জ, এলেঙ্গা, মির্জাপুর, কবিরপুর, বাইপাইল, নবীনগর, কালিয়াকৈর, হেমায়েতপুর, সাভার, গেন্ডা, চন্দ্রা, কোনাবাড়ী, কামালপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ। কোনো কোনো সড়কে যানজট দেখা দিলে তখন গণছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মহাসড়ক কেন্দ্রিক আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ২০ থেকে ২৫টি গ্রুপ এ কাজে সক্রিয়।
গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কোনাবাড়িতে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে এই সময়ে বাসেরযাত্রী রাশিয়ার এক নাগরিক পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত চারনিক নিকিতা নামে এক রুশ প্রকৌশলীর ৩০০ ডলার ও দুটি মোবাইল কেড়ে নেয় ডাকাত দল। পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদুর রহমান জানান, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কোনাবাড়িতে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ আসেনি।
এর আগে ৩ অক্টোবর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা টোলপ্লাজায় ডাকাতের কবলে পড়েছেন হাইওয়ে থানার ওসি ও তার গাড়িচালক। ডাকাতদল তাদের কুপিয়ে নগদ টাকা পয়সা, মোবাইল সেট ও এটিএম কার্ড লুট করে নিয়ে যায়।
অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, পরিবহন মালিক শ্রমিকরা একজোট হয়ে যাত্রী পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি ও আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখাতে ও সরকারকে জিম্মি করতে যতটা তৎপর ততটা উদ্যোগী নন যাত্রী নিরাপত্তায়। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো ও নামানো, সরকার ও মানুষকে জিম্মি করায় তারা যতটা একতাবদ্ধ ততটা যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা দিতে উদ্যোগী নয়। প্রতিদিন এত যে দুর্ঘটনা ঘটছে এত যে জীবনহানী হচ্ছে, তা সরকারি কর্তৃৃপক্ষের এতটা গা সওয়া হয়ে গেছে যে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই হচ্ছে না। তবে সকল ধরনের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করে সড়ক-মহাসড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাটা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।