চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
জাপানি বিজ্ঞানী (Masaru Emoto) ‘মাসারো ইমোটো’র গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ : ২০১৮ সালে জনৈক জাপানী বিজ্ঞানী ‘ডা. মাসারো ইমোটো’-র (Masaru Emoto) বিভিন্ন ধরণের পানি ও জমজম পানির বিষয়ের উপর এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে তিনি পানির উপর তার কৃত গবেষণা দ্বারা এ কথা প্রমাণ করেছেন- মানুষের মত পানির মধ্যেও আকর্ষণ এবং অনুভূতি শক্তি রয়েছে। মানুষের আকর্ষণ এবং অনুভূতিকে পানির উপর স্পষ্টভাবে স্থানান্তর করা যায়। এ বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য ডা. মাসারো ও তার গবেষক দল পানির উপর ইতিবাচক ও নেতিবাচক শব্দ, আকর্ষণ-বিকর্ষণ এবং সঙ্গীত ও বাদ্য প্রয়োগ করেছেন। পরপরই তিনি সেই পানিকে বরফে পরিণত করেন এবং প্রস্তুতকৃত পানির বুদবুদের ছবি ধারণ করেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এই বিষয়টির দৃঢ় ও চাক্ষুস প্রমাণ মিলেছে যে, পানি কীভাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক শক্তির প্রভাবে নিজ প্রভাব পরিবর্তন করতে পারে! অথবা অন্য ভাষায় বলা যায়- মানবীয় কল্পনা আকর্ষণ বিকর্ষণ অনুভব উপলব্ধি ও শব্দবলী কীভাবে পানির উপর সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে এবং পানি মানবীয় এ সকল বস্তুকে নিজের ভেতরে টেনে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ডা. মাসারো বিষয়টিকে গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণ করেছেন এবং ছবির মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, মানবীয় ভালো-মন্দ দিক, অনুভূতি কৃতজ্ঞতা এমনকি সুরের ঝংকারও পানিতে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। পক্ষান্তরে পানির উপর কর্কশ ও কটু শব্দ, মন্দ বাক্য এবং মন্দ সঙ্গীতের নেতিবাচক প্রভাবও বিস্তার করে থাকে। এ জন্য ডা. মাসারো পানির উভয় অবস্থার যে ছবি অণুবিক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে ধারণ করেছেন তা অভাবনীয়ভাবে সে আকর্ষণেরই জানান দিয়েছে। যে পানিতে উত্তম বাক্য পঠিত হয়েছে তা অতি স্বচ্ছ কোমল ও দৃষ্টিনন্দিত হয়ে থাকে। অপর দিকে নেতিবাচক কল্পনা ও মন্দবাক্য পাঠ করা হয়েছে যে পানিতে, ছবি তোলার পর সে পানি অতি নিকৃষ্ট ও দূষিত দেখা গিয়েছে।
ডা. মাসারো তার গবেষণায় এই বিস্ময়কর রিপোর্টও প্রকাশ করেছেন যে, পানির উপর সব চেয়ে বেশি যে শব্দের প্রভাব সৃষ্টি হয় তা হলো ‘আল্লাহ’ শব্দ। পানির উপর আল্লাহ শব্দ পাঠ করার পর পানির যেই Crystal-এর ছবি নেওয়া হয়েছে, তা সব চাইতে চিত্তাকর্ষক ও মুগ্ধকর ছবি ছিল। অনুরূপভাবে ডা. মাসারোর (Masaru Emoto) গবেষণায় এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে, যখন পানির উপর কুরআনের আয়াত পাঠ করা হয় তখন পানিবিন্দুর সঞ্চালন ও ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ডা. মাসারোর (Masaru Emoto) গবেষণাগুলো ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি(লেখক) অন্যত্র বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিজ্ঞানী ডা. মাসারোর গবেষণার উপর এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকা পেশ করার পর জমজম কূপের পানি সম্পর্কে তার গবেষণা উল্লেখ করা হলো।
আবে জমজম সম্পর্কে ডা. মাসারোর (Masaru Emoto) গবেষণা
ডা. মাসারো পৃথিবীর বিভিন্ন পানির রসায়ণ বিভাজন করে তার Crystal (স্বচ্ছ আকৃতি)-এর ছবি নিয়েছেন। অবশেষে জমজমের পানি সম্পর্কে লিখেছেন- জমজমের পানি ভূ-পৃষ্ঠের সর্বাধিক স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানি। এর চেয়ে পরিচ্ছন্ন পানি পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। ডা. মাসারো ঘধহড় টেকনোলজির মাধ্যমে এই তথ্য বের করেছেন, জমজমের পানি অন্য সকল পানির চেয়ে একহাজার গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। যদি জমজমের এক ফোটা পানিকে অন্য পানির একহাজার ফোটার সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয় তখন সে এক ফোটা জমজমের পানি অন্য একহাজার ফোটা পানিকে আপন শক্তিতে রূপান্তরিত করে নিতে পারে। তার গবেষণায় এই তথ্যও মিলেছে- জমজমের এক ফোটা পানির মধ্যে যে পরিমাণ মিনারেল পাওয়া যায়, অন্য কোনো পানির মধ্যে তা পাওয়া যায় না। উক্ত গবেষণায় এটাও প্রমাণ হয়েছে- জমজম পানির ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র অংশকেও কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যায় না। এটা এমন হয় কেন? আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী তার কারণ বের করতে পারে নি। এমনকি আবে জমজমকে রিসাইকেল করার পরও তাতে কোনো পরিবর্তন হয় না; বরং পূর্বে যেমন স্বচ্ছ ছিল তেমনই রয়ে যায়। জমজম সম্পর্কে ডা. মাসারো (Masaru Emoto)-এর গবেষণায় আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় এই ছিল, জমজম পানির ঈৎুংঃধষ (স্বচ্ছ আকৃতি)-কে অুনবিক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ফটো করার পর তা পৃথকভাবে দুটি স্বচ্ছ পদার্থ দ্বারা গঠিত পাওয়া যায়। যার একটির উপর অপরটি অবস্থিত। সেই আলোকে এই কথা বলা যায় যে, জমজম কথাটি দুটি অংশ তথা জমজম দ্বারা গঠিত হওয়ার কারণে তার পানিতেও দুটি অংশ পাওয়া যায়।
জমজম পানি দ্বারা রোগ নিরাময়ের ঘটনা
জমজমের পানি ব্যাপকভাবে রোগ মুক্তির উপায়। কিন্তু বিশেষ করে তা দ্বারা আরোগ্য লাভের ঘটনা রাসূলের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত অনবরত ঘটে আসছে। বিভিন্ন গ্রন্থাদিতে যার আলোচনা পাওযা যায়। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওযী রহ. জমজমের পানিকে সকল পানির শ্রেষ্ঠ পানি এবং সকল পানির চেয়ে অধিক সম্মানের যোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি তার কিতাব ‘তিব্বে নববী’-এর মধ্যে জমজম সম্পর্কে নিজ যুগের বহু অভিজ্ঞতার ঘটনা তুলে ধরেছেন যে, জমজম দ্বারা বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একথাও উল্লেখ করেছেন যে, তার যুগের বহু লোক ১৫ দিন পর্যন্ত কোনো ধরণের খাদ্যগ্রহণ ছাড়া শুধু জমজম পানি পান করে জীবন ধারণ করেছেন। বর্তমান যুগে মুসলিম চিকিৎসকগণও এর উপর চিকিৎসালব্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং সীমাহীন উপকার পেয়েছেন। জনৈক পাকিস্তানের ‘ডাক্তার গোলাম রাসূল কোরাইশী’ যিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রফেসর, তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে এটা প্রমাণ করেছেন যে জমজমের পানিতে ইস্পাত, ম্যাগনেশিয়াম, ঘনত্ম, গদ্ধক এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বিদ্যমান থাকার কারণে এই পানি রক্তস্বল্পতা দূর করে, মস্তিষ্ক প্রখর করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন সংবাদ-পত্রে এ জাতীয় কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে জমজমের পানি দ্বারা কঠিন ও দুরারোগ্য কিছু রোগ থেকে মুক্তির সংবাদ পাওয়া গেছে। যেমন ক্যান্সার, কিডনীর পাথর, লিভার ব্যাধি, রক্তজনিত রোগসমূহ, চক্ষু ব্যাধি এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার তাকিদে তার বিশদ বিবরণ এখানে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জমজম পানি সম্পর্কে বিবিসির (প্রপাগান্ডা) বিতর্কিত রিপোর্ট
একদিকে জমজম পানির সীমাহীন উপকার সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের অকৃত্রিম সমর্থন ও গবেষণার বিশাল তথ্যভান্ডার প্রকাশ পেয়েছে। যার কারণে প্রতিনিয়তই জমজম পানির গুরুত্ব ও উপকারসমূহ স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং তার নতুন-নতুন দিগন্তের পর্দা উন্মোচিত হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সভা-সেমিনার জমজম সম্পর্কে দিয়েছে নেতিবাচক ধারণা, পাশাপাশি তারা লিপ্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডায়।
এর ধারাবাহিকতায় বিবিসির এক বিতর্কিত রিপোর্ট উল্লেখযোগ্য। যা ২০১১ সালের মে মাসে প্রচার হয়েছে। উক্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে- জমজমের পানি যা বৃটেনে ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে বাজারজাত করা হয়েছিল। তার মধ্যে নাইট্রোজেন ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং আর্সেনিকের বিষাক্ত পদার্থ বেশি পরিমাণ পাওয়া গেছে, যার কারণে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অথচ অনুসন্ধানের পর জানা যায়- বৃটেনে বাজারজাতকৃত জমজমের পানি নীরিক্ষণের পদ্ধতি ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তবে সে নীরিক্ষণ কি জমজমের পানির উপর ছিল, না অন্য কোনো পানির উপর ছিল? তা বোধগম্য নয়। কেননা সৌদি হুকুমত জমজম পানিকে কোথাও ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে বাজারজাত করার অনুমোদনই দেয়নি। সৌদি কর্মকর্তাদের এই বক্তব্যও রয়েছে যে, জমজমের পানি পরীক্ষা-নীরিক্ষা ফ্রান্সের রিসোলিসল কোম্পানীর পক্ষ্য থেকে করানো হয়েছে, যা ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে সত্বায়িত। সেই নীরিক্ষিণের রিপোর্ট দ্বারা জানা যায়- জমজমের পানিতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ তথা আর্সেনিকের পরিমাণ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসংস্থা (ডঐঙ) কর্তৃক অনুমোদিত আর্সেনিকের পরিমাণ অন্যান্য পানির আর্সেনিকের তুলনায় খুব কমই পাওয়া গেছে। সৌদির জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রধান জুহাইর নওয়াব বলেছেন- জমজম পানির পরীক্ষা-নিরীক্ষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মেশিনারী ও টেকনোলজির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যাচাই করা হচ্ছে। অতএব বিবিসির বিতর্কিত রিপোর্ট শুধু মনগড়াই নয় বরং জমজম পানির গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা কমানোর এক গভীর ষড়যন্ত্র।
আবে জমজম এক জীবন্ত মোজেজা
বাস্তবে আবে জমজম ইসলামের এক জীবন্ত ও সার্বজনীন এবং অলৌকিক পানি। আবে জমজমের সূচনা যেমনিভাবে এক অলৌকিকতার মাধ্যমে হয়েছিল, তেমনিভাবে তার অস্তিত্বও একটি চলমান মোজেজা হয়ে আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আবে জমজম সম্পর্কে রাসূল সা. এর বাণীতে যত ফজিলত ও উপকারিতার আলোচনা হয়েছে, বিশেষভাবে তা এই যুগের মানুষদের জন্য এসেছে। যার একেকটি উপকারিতা আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তাই জমজম পানির উপর যেই দৃষ্টিকোণ থেকেই এবং যতই গবেষণা করা হোক তার নিত্য-নতুন রহস্য উন্মোচিত হতে থাকবে এবং তার নতুন নতুন দিক সামনে আসতে থাকবে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে জমজম পানি সম্পর্কে আরও গবেষণা সামনে আসবে এবং তার আরও রহস্য ও বেধ দুনিয়াবাসীর সামনে উন্মোচিত হবে। এই ব্যাপারে মুসলিম ইউনিভার্সিটিগুলোকে ফলো করা প্রয়োজন। যাই হোক আবে জমজম এক কূলহীন মোজেজা। যা কিছুটা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নে প্রদত্ত হলো।
জমজম কূপের প্রকাশ অলৌকিকভাবে হয়েছে। যে ব্যাপারে বহু হাদীসের পাশাপাশি বাইবেল এবং ইহুদীদের অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থ সাক্ষী। জমজম কূপ দীর্ঘদিন এবং অধিক ব্যবহৃত হওয়ার পরও আনুমানিক চার হাজার বছরের ইতিহাসে কখনও তার পানি হ্রাস পায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।