বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সকালে প্রতীক পেয়েই ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত হাসান উদ্দিন সরকার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীসহ অপর প্রার্থীরা প্রচারনায় নেমেছেন।
সকাল ১০টা থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যান। এর আধ ঘণ্টার পর দলীয় নেতাকর্মীসহ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এড. মো. জাহাঙ্গীর আলম যান। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রথমে মেয়র প্রার্থী পরে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭ প্রার্থী তাদের দলীয় নির্ধারিত প্রতীক পেয়েছেন। একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তার পছন্দের প্রতীক টেবিল ঘড়ি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই প্রতীকে একাধিক প্রার্থীর পছন্দ থাকলে সেখানে লটারির মাধ্যমে প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতীক বিতরণের আগে কোনও কোনও প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রচারনা শুরু করেন, যা নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। যাদের বিরুদ্ধে এ নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছি তাদেরকে বিধি অনুযায়ী সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রচারণার ক্ষেত্রেও বিধিমালা রয়েছে। এর ব্যাত্যয় ঘটলে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রচারণার সময় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের যেন কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে তিনি এসময় প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘সকল প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। এক ওয়ার্ডের মাইক অন্য ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে পারবে না।
এদিকে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ধানের শীষ প্রতীকটি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের প্রতীক। এ প্রতীক উন্নয়নের প্রতীক। ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করলে একটি সুপরিকল্পিত আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী গাজীপুরবাসীকে উপহার দেবো ইনশাল্লাহ। আমি মনে করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল বিএনপি নেতাকর্মীর উপর জুলুম নির্যাতনের জবাব দিতে ও আধুনিক বাসউপযোগী নগরী গড়ে তুলতে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটদানে গাজীপুরবাসী ভুল করবে না।”
এ সময় তিনি আরো বলেন, তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস দমনসহ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সর্বদা কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সকল প্রার্থীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়নে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি এবং কালো টাকার ছড়াছড়ি হলে তা বন্ধ করে কার্যকর ব্যবস্থা প্রহণ করতে হবে।
১৪ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর জনগণের কাছে এখন আমার প্রতীকটি উপস্থাপন করব। প্রতীক নিয়ে ভোটারের কাছে যাব। নৌকা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রতীক, নগরবাসীর মুক্তির প্রতীক। আধুনিক এবং পরিকল্পিত নগর গঠনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাজে শরীক হতে তিনি ভোটারদের আহŸান জানান।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে ৭ মেয়র, ২৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী লড়ছেন । এ সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এতে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও মহিলা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫টি। ভোট কক্ষ ২ হাজার ৭৬১টি।
খেলাফত মজলিসের সাথে বিএনপি প্রার্থীর মত বিনিময়ঃ
মঙ্গলবার বাদ ফজর ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের সাথে মতবিনিময় করেছেন খেলাফত মজলিস নেতারা। এসময় খেলাফত মসলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদেরকে ধানের শীষের পক্ষে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকার অনুরোধ জানান। বক্তৃতায় তিনি বর্তমান সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সমাজের প্রতিটি অঙ্গ আজ ক্ষতিগ্রস্ত।
হাসান উদ্দিন সরকারের টঙ্গীর আউচপাড়ার বাস বভনে গাজীপুর মহানগর খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আবু বকরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন, খেলাফত মসলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি শেখ গোলাম আসগর, গাজীপুর জেলা সভাপতি মুফতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নূরুন নবী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, সহসভাপতি মাওলানা ইলিয়াস আহমেদ, মাওলানা নাজির আহমেদ, মাওলানা জাকির হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন আকঞ্জি, টঙ্গী থানা খেলাফত মজলিস সভাপতি রেদোয়ান, সাধারণ সম্পাদক কুদরত উল্লাহ, সহসভাপতি মাওলানা আসাদুল্লাহ, মহানগর খেলাফত মজলিসের অর্থ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউসুফ, গাজীপুর জেলা ছাত্র মজলিস সভাপতি নাঈমুল ইসলাম, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা হারুন, শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।