Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জমজমের পানি : ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

সারা বিশ্বের হাজিরা মক্কায় প্রবেশ করলে তাদের জমজমের পানি দিয়ে স্বাগত জানান সরবরাহকারীরা। মক্কার কাবাগৃহ থেকে ২১ মিটার পূর্বে অবস্থিত কূয়া জমজম থেকে সংগ্রহ করা হয় এই পানি। জমজমের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আর তার ছেলে ইসমাইল (আ.)-এর যুগে তৈরি হয় এই কূয়া। আর এই কূয়া থেকে পানি সংগ্রহ ও বিতরণে নিয়োজিত জামাজিমা কর্পোরেশনের ইতিহাসও দীর্ঘ ও প্রসিদ্ধ। জামাজিমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হাসান আবু আল-ফারাজ বলেন, ‘নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে আল্লাহ মক্কায় যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার স্ত্রী হাজর ও ছেলে ইসমাইলকে রেখে আসতে বলেন। পবিত্র মসজিদের কাছে বিরান ভূমিতে তিনি যখন স্ত্রী ও ছেলেকে রেখে বিদায় নিয়ে ফিরে আসছিলেন তখন স্ত্রী হাজর তাকে বারবার ডাকলেও ফিরে তাকাননি তিনি। তখন তিনি উত্তরে বলেন, আমি আল্লাহর ইচ্ছায় এটা করেছি’। পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর শিশু ইসমাইল কান্না শুরু করে। উপায় না দেখে হাজরও কান্না শুরু করে দেন, কিন্তু তা শোনার মতো কেউ ছিল না। তিনি আল-সাফা পাহাড়ের দিকে দৌড় দেন, আরেকবার আল-মারওয়া পাহাড়ের দিকে দৌড় দেন। সাতবার সাফা ও মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি করেন তিনি। সপ্তমবার তিনি যখন দৌড়াচ্ছেন তখন একটি কণ্ঠ শুনতে পেয়ে বলে ওঠেন, ‘দয়া থাকলে সাহায্য করুন’। ওই কণ্ঠটি ছিল জিব্রাইল (আ.)-এর। তিনি তার পা দিয়ে কূয়ার জায়গার মাটিতে আঘাত করেন আর মাটি থেকে পানি উঠতে শুরু করে। পানি আটকাতে বালু দিয়ে ঘিরে দেন হাজর, আর বলতে থাকেন, ‘জম জম জম’। প্রাচীন সিরীয় ভাষায় এর অর্থ সংগ্রহ করা। আর সেই থেকে এর নাম হয়েছে জমজম। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জামাজিমা কর্পোরেশন নামে পরিচিত ইউনিফায়েড জামাজিমা অফিস। সৌদি আরবের বাইরে থেকে যাওয়া হাজিদের পানি সরবরাহ করতে এই সংস্থাটি গড়ে তোলা হয়। হাজিরা মক্কায় প্রবেশের শুরুতে জমজমের পানি দেওয়া হয়। আবার মক্কায় হাজিদের থাকার স্থানেও এই পানি সরবরাহ করা হয়। মক্কা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে তাফয়িজ কেন্দ্রেও জমজমের পানি সরবরাহ করা হয়। এতে মক্কায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার হাজিরা প্রথম ও শেষবার জমজমের পানি পানের সুযোগ পেয়ে থাকেন। ২০১০ সালে জমজমের পানি বোতলজাত এবং বিশুদ্ধকরণে ৭০ কোটি সৌদি রিয়ালের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি ভবনজুড়ে এই প্রকল্প। একটি রয়েছে এয়ার কম্প্রেসার ভবন, একটি অপ্রক্রিয়াজাতকৃত পানির গুদাম, একটি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত ভবন এছাড়া দৈনিক দুই লাখ বোতল প্রক্রিয়াজাতকৃত পানি মজুত রাখার ভবনও রয়েছে। কারখানাটির মোট আয়তন ১৩ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি। এতে ১০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ ব্যাকআপ সুবিধার জেনারেটরও আছে। পানি তোলা থেকে শুরু করে বোতলে ভরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের সুবিধাও রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রতি ঘণ্টায় দেড় থেকে দুই হাজার বোতলে জমজমের পানি ভরা যায়। দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩ থেকে ৪৪ হাজার বোতল পর্যন্ত। জামাজিমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আবু আল-ফারাজ জানান, আগে হাজিদের বাসস্থানে ২০ লিটারের বোতলে জমজমের পানি রাখা হতো। এই বছর থেকে ৩৩০ মিলিলিটার বোতলে করে পানি ফ্রিজে রেখে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে হাজিদের পানি পাওয়া আরও সহজ হয়েছে। আরব নিউজ।



 

Show all comments
  • Habib ৯ জুলাই, ২০২২, ৫:৪৮ এএম says : 0
    Allahu Akbar
    Total Reply(0) Reply
  • Kader sheikh ৯ জুলাই, ২০২২, ৫:৫০ এএম says : 0
    This is a living miracle from Allah
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমজমের পানি : ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ