পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : নগর জীবনের ব্যস্ততা, যানজট আর নানা ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনলাইন কেনাকাটাতেই ঝুঁকছে মানুষ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষিত তরুণদের পাশাপাশি কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য এখন কেনাকাটার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে এটি। রমজান, ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোতে এই বাজার হয়ে ওঠে আরও রমরমা। এখনকার দিনে অনলাইন মার্কেটে জামা-কাপড়, জুয়েলারি, শাড়ি, প্রসাধনী, ঘর গোছানোর সামগ্রী, চাল-ডাল, মাছ-মাংস, সবজি থেকে শুরু করে জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সবই মিলছে অর্ডার করলেই। বাদ যাচ্ছে না রমজান মাসের সেহরি ও ইফতার। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে নামিদামিসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট অর্ডার করলেই ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে পছন্দসই সেহরি ও ইফতার। ই-কমার্স সাইটগুলো থেকে কেনাকাটা করেন এমন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে দিনকে দিন। শুধু রাজধানীতে নয়; সরাদেশেই বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটা। এতোদিন কেবল ঢাকা কেন্দ্রীয় অনলাইন মার্কেট থাকলেও এখন দেশের বড় বড় শহরগুলোতেও গড়ে উঠছে এধরণের কেনাবেচা। বাংলাদেশে এখন বছরে এক হাজার কোটি টাকার পণ্য অনলাইনে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সভাপতি রাজিব আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিদিন দেশের এক হাজার অনলাইন শপ অনলাইনে ডেলিভারি দেয় ২০ হাজার অর্ডার। এছাড়া ফেসবুক ভিত্তিক আছে ১০ হাজারেরও বেশি। চলতি বছর এই কেনাকাটা দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে সরকারের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বাগডুম ডটকমের চেয়ারম্যান শামীম আহসান।
অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরেই আগ্রহ বাড়ছে দেশের মানুষের। আর ঈদকে সামনে রেখে আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে এই মাধ্যম। মাত্র কয়েক বছর আগেও ঈদ শপিং মানেই ছোটবড় বিভিন্ন শপিংমল, বিপণি বিতান ও ফ্যাশন হাউসে ঘুরে ঘুরে পণ্য কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনেক ব্যবসা কার্যক্রম চলছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। প্রয়োজনীয় সব ধরণের পণ্য কেনা বেচা হচ্ছে অনলাইনেই। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে, মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছে না। পছন্দের পণ্যটিতে ক্লিক করে অর্ডার করলেই পৌছে যাচ্ছে ক্রেতাদের ঘরে ঘরে। ফলে এক দিকে যেমন অনলাইন শপিংয়ের পরিধি ও পরিসর সম্প্রসারিত হচ্ছে অন্যদিকে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের বড় বড় শপিং কমপ্লেক্সেও পড়ছে তার প্রভাব। ঈদের সময় কিছুটা ভিড় থাকলেও অন্যান্য সময় বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বড় শপিং মলগুলো অধিকাংশ সময় থাকছে ফাঁকা। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি অনলাইনের এই দাপাদাপিতেও বাজারে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। বসুন্ধরা সিটির দোকান মালিক সাইফুজ্জামান বলেন, অন-লাইনে কেনাকাটা এখনও একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাছাড়া এখনও ঘরে বসে কেনাকাটা করার থেকে বাজারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার লোকের সংখ্যা অনেক বেশি।
ই-কমার্স সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতবছরের তুলনায় এবছর তাদের ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। কেনাবেচার জন্য নির্দিষ্ট সাইটগুলোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও জমে উঠেছে এই কেনাবেচা। বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হচ্ছে পেজ। আর তা থেকেই ক্রেতারা খুঁজে নিচ্ছেন পছন্দের পণ্য। উদ্যোক্তাদের মতে, নতুনদের পাশাপাশি বিশ্বের বড় মাপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের পণ্যের প্রচারে ব্যবহার করছে ফেইসবুক। অল্প পুঁজিতে, এমনকি বিনা পুঁজিতে এ ব্যবসা করা যায়। ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে এ মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এক্সক্লুসিভ ফ্যাসন’এর সত্ত¡াধিকারী ফাহাদ জামান শীলা বলেন, কিছুদিন হল আমি ই-কমার্স শুরু করেছি। অনলাইনে একটি পেইজ ওপেন করেই তাতে কিছু ছবি দিয়ে যে ধরনের সাড়া পাচ্ছি তা অনেক ভালো। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি এই কাজটি করছেন। শীলা বলেন, কুরিয়ারের লোক বাসায় এসে অর্ডার নিয়ে যান, আমার তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। তা ছাড়া ব্যবসা করতে গেলে যে ধরনের ঝামেলা থাকে তা এই ব্যবসায় নেই।
কেনাকাটায় ঝামেলামুক্ত ও সহজ এই মাধ্যমে ঝুঁকে পড়ছে নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ। দোকান, শপিং মলের ভিড় উপেক্ষা করে বাজার সারছেন বাড়িতে বসেই। সকাল সাড়ে সাতটায় অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বরে হয়ে সন্ধ্যা সতাটায় ফিরেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী উত্তরার বাসিন্দা কামরুন নাহার। তিনি বলেন, আট ঘণ্টা অফিস আর সড়ে তিন ঘণ্টার যানজট ঠেলে কাজ করার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বের হতে ইচ্ছে হয়না। এছাড়া বাচ্চাদের সময় দেয়া এবং অন্যান্য জমে থাকা কাজ তো আছেই। এজন্য কেনাকাটার সময়ই বের করতে পারেন না তিনি। তাই অনলাইন কেনাকাটা তার জীবনকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি জিনিস কিনতে আগে পুরো বিপণিবিতান ঘুরতে হতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। এখন ঘরে বসেই পছন্দের জিনিস পেয়ে যাচ্ছি। অনলাইনের ক্রেতারা বলছেন, অনলাইনে কেনাকাটা করার অনেক সুবিধা আছে। সেখানে নিজের পছন্দ মতো জিনিস বেছে নেওয়া যায়। কেউ কিছু নিতে চাপ দেয় না বা বাধ্য করে না। আবার কোনও জিনিস কেনার পরে অসুবিধা হলে বা পছন্দ না হলে টাকা ফেরত ও জিনিস পাল্টে নিতেও কোনও অসুবিধা হয় না।
অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী কেন জানতে চাইলে শারমিন আক্তার ও রনি তালুকদার দম্পতি বলেন, একে তো কর্মব্যস্ত থাকি। তারপর আমরা যে পণ্যটি কিনতে চাই তা কোথায় পাব? তারা কোন মডেলটি আমি নেব? তার গুণাগুণ কী? এটা মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বের করা এবং জানা কঠিন। কিন্তু অনলাইনে সহজেই জানা যায়। এছাড়া পণ্যটি যেহেতেু অনলাইনে পাওয়া যায়, তাহলে আর মার্কেটে যাওয়া কেন?
লুক’স এর সত্ত¡াধিকারী বলেন, অনলাইনে সাধারণত দুইভাবে বেচাকেনা হয়। কিছু কিছু ওয়েবপোর্টালে পণ্যের ছবি, দাম ও যোগাযোগের নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে। আগ্রহী ক্রেতারা সেই বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করেন। আবার কিছু কিছু ওয়েবপোর্টাল রয়েছে, যেখানে তারা নিজেরাই পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ করেন। এক্ষেত্রে ক্রেতার কাজ শুধু পণ্য পছন্দ করে অনলাইনে অর্ডার দেয়া। পরবর্তীতে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ই-কমার্স বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুই বছরে রাজধানী ও এর আশপাশসহ বড় শহরগুলোর কেনাকাটার চরিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে চিরাচরিত বাজারগুলোতে ভিড় কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তারা বলছেন, ১৬ থেকে ৫৫ বছরের পুরুষ ক্রেতাদের বেশিরভাগই অনলাইনে জিনিস কিনতে পছন্দ করছেন। ঠিক তেমনই ১৬ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে অনলাইনে জিনিসপত্র কেনা। বিশেষ করে সেই নারীরা যাদের পেশাগত কারণে প্রতিদিন বাইরে বেরোতে হয়, খুব দ্রুত হারে বাড়ছে এ পরিমাণও। তারা আরও বলছেন, টেকনোলজির ব্যবহারের ফলে অনলাইনে বেশ কিছুটা কম দামে জিনিস দেওয়া সম্ভব, যা কোনোভাবেই সাধারণ দোকানে দেওয়া সম্ভব নয়। শুধু পোশাক নয় অনান্য জিনিস কেনার ক্ষেত্রেও তাই বাড়ছে অনলাইনের চাহিদা।
মাসুমা আক্তার অনলাইনে নিয়মিত কেনাকাটা করেন। তিনি বললেন, আমি দেশের বাইরে থেকে আনা প্রসাধনী সামগ্রী কিনে থাকি। দোকানে গিয়ে যাচাই বাছাই করে এগুলো কেনা অনেক ঝামেলার ছিল। জামা, শাড়ি আমি ঘরে বসে পছন্দ করে অর্ডার করি, আর এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই তা আমার হাতে চলে আসে। এর জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি গুনতে হয়। কিন্তু আমি নিজে শপিং মলে গেলে এর চেয়ে তিনগুণ সিএনজি বা রিক্সা ভাড়া দিতে হত।
বাংলাদেশে গত বছরেই অনলাইনে কেনাকাটা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছরই এর পরিমান দ্বিগুণ হচ্ছে। চলতি বছর এটি বেড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে মনে করছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ইক্যাব)-এর সভাপতি এবং ইংলিশ সার্চ-এর কর্ণধার রাজীব আহমেদ। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমাদের হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন ডেলিভারি দেয়া হয়েছে ২০ হাজার অর্ডার।
অনলাইন মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর জানান, এখন শুধু অনলাইন ওয়েবসাইটেই (ফেসবুক বাদে) প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার অর্ডার প্রসেস হয়৷ অনলাইনে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে সব ধরনের পণ্যই পওয়া যায়। টিকেট বিক্রি, স্বাস্থ্যসেবাও দেয়া হয় অনলাইনে। তিনি আরও বলেন, অনলাইনে সবচেয়ে বড় সুবিধা ক্রেতারা যেটা পাচ্ছেন, সেটা হল ঘরে বসে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন। আর অনেক ক্ষেত্রে এই দাম শপিংমলের দামের থেকেও কম থাকায় ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সরকারের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান। বাগডুম ডটকমের এই চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই বাংলাদেশের অনলাইন শপিং ১০০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে আমাদের ডাক বিভাগ ও কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলো এখনো ই-কমার্সের জন্য প্রস্তুত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যাতে গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় নিয়মিতভাবে ই-কমার্সের ডেলভারি করতে পারি তার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।