মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বাক স্বাধীনতা নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কার্টুন প্রদর্শন করলে গত ১৬ অক্টোবর এক চেচেন কিশোর স্যামুয়েলকে হত্যা করে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ওই হত্যাকান্ডের জন্য তার দেশের উগ্র মুসলিমদের দায়ী করেন। তিনি একই সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, ফ্রান্সে এ ধরনের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত থাকবে। এ নিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর, গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণের নাইস শহরে ৩ চার্চ যাত্রীকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। এই হামলার মূল সন্দেহভাজন এক তিউনিসিয়ান পরে পুলিশ অফিসারদের দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করেন। ঘটনাগুলি আবারও দেশটির মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যকার বিপজ্জনক বৈরীতা প্রকাশ চিত্র তুলে ধরেছে।
ফরাসী সরকার রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে বিশেষত পাবলিক স্কুলগুলিতে ব্যঙ্গাত্মকভাবে নিন্দা ও নিন্দার অধিকার এবং ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষতা সংস্কারে কেন্দ্রীয় ভূমিকা সহ তাৎপর্যপূর্ণ বাক স্বাধীনতার অধিকার পুনরায় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্যাটির হত্যার প্রতিক্রিয়া জানায়। এই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ম্যাখোঁ বলেছিলেন যে, ফরাসি প্রজাতন্ত্রের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধারণ করার কারণে প্যাটিকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ফরাসী সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী ধারণাটি একটি ত্রুটিপূর্ণ অনুমান-নির্ভর। যেমন, ফ্রান্সে সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ হ’ল, দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি বা ল্যাচিটিকে পুরোপুরি সমর্থন করার ক্ষেত্রে ফরাসি মুসলিমদের ব্যর্থতা। সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডের আগে, অক্টোবরের গোড়ার দিকে, ম্যাখোঁর সরকার একটি নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, যার মধ্যে দেশটির ধর্মনিরপেক্ষতাকে শক্তিশালী এবং প্রজাতন্ত্রের নীতি একীভূত করার জন্য একটি আসন্ন বিস্তারিত বিল ছিল। যেটিকে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী বলে অভিহিত করেছেন।
ফ্রান্সে বিচ্ছিন্নতাবাদ বলতে, ফরাসী মুসলিমদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ফরাসি সমাজের বাকী অংশগুলিতে ছিটমহলের মতো করে ইসলামী স্কুল, হালাল দোকানসমূহ, আশেপাশে মুসলিম নিজস্ব বাস্তুসংস্থান তৈরি করা, এবং বিভিন্ন মসজিদ তৈরি করে মূল ফরাসী সমাজ থেকে নিজেদের আলাদা করে রাখাকে ধরে নিয়েছেন ম্যাখোঁ। তবে, তার এই বিচ্ছিন্নতাবাদের ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং এটিই সামাজিক সংহতিকে বিপন্ন করতে পারে। এই ধারণার একটি সমস্যা হ’ল, এটি স্পষ্টতই মুসলমানদের সাথে এমন আচরণ করে, যেন তারা ফরাসি সমাজের একটি পৃথক শ্রেণী এবং অপরিণত নাগরিক যারা তাদের প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতা উপলব্ধি করতে অক্ষম। প্রকৃতপক্ষে, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডেমোগ্রাফিক স্টাডিজসহ অসংখ্য গবেষণা এবং অনেক পরিসংখ্যানগত গবেষণা দীর্ঘকাল ধরে প্রকাশ করে আসছে যে, ফ্রান্সের বেশিরভাগ মুসলমান সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে রাষ্ট্রের সাথে একাত্ম রয়েছে, যদিও কর্ম ক্ষেত্রে বৈষম্যের কারণে তারা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্রুনো এটেন একসময় ফরাসি মুসলমানদের অস্বাভাবিকরকম স্বাভাবিক বলে অভিহিত করেছিলেন।
গত বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় ফ্রান্সের ৭০ শতাংশ মুসলিম উত্তরদাতা বলেছেন যে, তারা অনুভব করেছেন যে তারা ফ্রান্সে অবাধে ইসলামের চর্চা করতে পারবেন। প্রায় ৪১ শতাংশ বলেছেন যে, তারা মনে করেন যে, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে মানিয়ে নেয়া উচিত। তবে ৩৭ শতাংশ বলেছেন যে, তারা আশা করেন যে দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি বা ল্যাচিটি আরও নমনীয় হোক। ফ্রান্সের মুসলিমরা আজকাল যখন রাষ্ট্রের সাথে একাত্ম হওয়ার ব্যর্থতা এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যাগুলির জন্য মুসলমানদের দোষারোপ করা ল্যাচিটির আরও সাম্প্রতিক ও আদর্শিক ব্যাখ্যার সমালোচনা করছে এবং শঙ্কিত হচ্ছে যে, এই উদারবাদী ধর্মনিরেপেক্ষতার অন্তর্নিহিত নীতি ক্রমবর্ধমানভাবে মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদের আবরণ হয়ে উঠছে এবং বর্ণবাদকে লাই দেয়ার জন্য এটিকে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদ এবং ধর্মীয় সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ জঁ বুবেহঁ এবিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আসুন আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে ল্যাচিটি না ব্যবহার করি।’
ল্যাচিটি একটি সার্বজনীন নীতি, যা একসময় অগ্রগতির পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল, তা এখন রক্ষণাত্মক পক্ষপাতমূলক স্লোগানে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সের মূলধারার রাজনৈতিক বক্তৃতাতেও ইসলামপন্থী উগ্রবাদকে যথেষ্ট পরিমাণে নিন্দা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ফরাসী মুসলিমদের সমালোচনা করা হচ্ছে। তবে সেই অভিযোগও রাজনৈতিক অভিজাতদের একপেশে দৃষ্টিকোণকেই কেবল প্রতিফলিত করে। কারণ সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করার ক্ষেত্রে মুসলিমদের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার পর, মুসলিমদের একটি শীর্ষস্থানীয় সংস্থা ফ্রান্সকে রক্ষার জন্য মসজিদগুলিতে একটি সাপ্তাহিক প্রার্থনার উদ্যোগ নিয়েছিল। মুসলিমরা ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের অমুসলিম ভুক্তভোগীদের পক্ষে শোক প্রকাশের জন্য তাদের নিয়মিত সেবা প্রদান করে এবং অবশ্যই, বহু মুসলিম সেই ক্ষতিগ্রস্থদের অর্ন্তভূক্ত।
অতএব, বিচ্ছিন্নতাবাদের ঝুঁকির বিরুদ্ধে ল্যাচিটির একপেশে সতর্কতা ফরাসি মুসলিমদেরকে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বা তাদের জাতিগত অন্তর্ভূক্তির অনুভূতিকে উৎসাহিত করবে না। বরং ল্যাচিটির নামে বৈষম্য তৈরি করে তাদের কোনঠাসা করে দিলে, ঠিক এর বিপরীতটি ঘটতে পারে। দেশটির নেতারা যা ভয় পান, সম্ভবত তারা সেটিকেই সুনির্দিষ্টভাবে তৈরির কাজকে ত্বরান্বিত করছেন। সেটি হ’ল, ফ্রান্সের অভ্যন্তরে মুসলিমদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় এবং সম্প্রদায়। সূত্র : টাইম্স অফ ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।