মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ শুক্রবার প্যারিসের কাছে অভিবাসী অধ্যুষিত একটি এলাকায় দেয়া এক ভাষণে ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছেন, যে শব্দ বা বিশেষণ ব্যবহার করেছেন, তার নজির ফ্রান্সে বিরল। তিনি বলেন, যে সব গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি ফ্রান্সের ঐক্য এবং ফরাসী প্রজাতন্ত্রের ‘ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে’ হুমকিতে ফেলছে তাদের মোকাবেলার জন্য নতুন একটি আইন তিনি আনছেন। ফরাসী সমাজের ঐ কথিত শত্রু হিসাবে তিনি পরিষ্কার করেই চিহ্নিত করেছেন ‘কট্টর ইসলাম’কে।
ম্যাখোঁ বলেন, ফ্রান্সের ঐক্যের প্রধান বন্ধনই হচ্ছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। তিনি বলেন, ‘যারা ধর্মের নামে সেখানে ফাটল ধরাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে।’ পুরো ভাষণ ম্যাখোঁ বলার চেষ্টা করেন, তিনি ইসলাম ধর্ম বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নন, কিন্তু একইসাথে ইসলাম ধর্ম নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইসলাম একটি সঙ্কটে পড়েছে, এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও এই ধর্মটি সঙ্কটে।’ তিনি বলেন, ‘এই ধর্মটিকে এখন আমাদের সাহায্য করতে হবে যাতে তারা ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের অংশীদার হতে পারে।’ তিনি জানান, ফ্রান্সে এমন একটি ইসলাম প্রতিষ্টা করতে হবে যার ভিত্তি ‘জ্ঞানের আলো’। এ প্রসঙ্গে তিনি ফ্রান্সে রাষ্ট্র থেকে গির্জাকে আলাদা করার ঐতিহাসিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
ফরাসী রাজনীতিকদের মুখে ইসলামের সংস্কার, ফ্রান্সের রাজনৈতিক-সংস্কৃতির সাথে খাপ খায় এমন ইসলামের কথা নতুন নয়। সাবেক ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিও ‘ইসলাম পুনর্গঠনের’ পরিকল্পনা করেছিলেন। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর কণ্ঠেও একই ধরনের সুর শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘ফরাসী প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা, এর মূল্যবোধ রক্ষা এবং সাম্য এবং মুক্তির জন্য প্রজাতন্ত্রের যে প্রতিশ্রুতি তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।’ ফ্রান্সের ৬০ লাখ মুসলিমের একটি অংশ একটি বিকল্প সমান্তরাল সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যা বিপজ্জনক বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে একটি (ধর্মীয়) মতবাদ নিয়ে যেটি দাবি করছে যে তাদের নিজস্ব আইন প্রজাতন্ত্রের আইনের চেয়ে শ্রেয়...বিদেশি প্রভাব থেকে ফরাসী ইসলামকে রক্ষা করতে হবে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কট্টর ইসলাম এবং ইসলামী সন্ত্রাস নিয়ে ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ, সমালোচনা শোনা যাচ্ছে, তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর মত মূল ধারার মধ্যপন্থী একজন রাজনীতিকের মুখ থেকে ইসলাম নিয়ে এমন কথাবার্তায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। ফ্রান্সের মুসলিম নেতারা তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিম বিদ্বেষীদের সূরে গলা মিলিয়েছেন, এবং তার প্রস্তাবিত আইন ফরাসী মুসলিমদের মূলধারার সমাজ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন করবে।
প্যারিস মসজিদের রেক্টর শামসেদ্দিন হাফিজ দৈনিক ল্য ম্যঁদ-এ এক উপ-সম্পাদকীয়তে প্রেসিডেন্টের পুরো বিবৃতি এবং তার প্রস্তাবিত আইনকে ‘ছল-চাতুরি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ইমেজ বাড়াতে এ ধরণের জনপ্রিয় কথাবার্তার বদলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। তিনি বলেন, ম্যাখোঁ যেসব পরিবর্তনের কথা বলছেন, তা ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতার আওতায় পড়েনা।’ ফরাসী মুসলিম এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আমর লাসফার বলেন, ‘ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে মি ম্যাখোঁ যেসব শব্দ এবং বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তা আপত্তিকর। তিনি মানুষের সামনে একটি বিপদ, ভীতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যার সাথে আমি একমত নই। তিনি শুধুই কট্টরপন্থা বা জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলতে পারতেন। ‘ইসলামি জঙ্গিবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে সমস্ত মুসলিমকে এক কাতারে ফেলে দেয়া ঠিক হয়নি।’ লেখক গবেষক ব্রæনো ম্যাকায়েস টুইট করেছেন, ‘ম্যাখোঁ ইসলাম সম্পর্কে তার মনোভাব চেপে রাখেননি। এখন শুধু কট্টর ইসলামই তার কাছে সমস্যা নয়, ইসলাম ধর্মই তার সমস্যা।’ ফরাসী মুসলিম মানবাধিকার কর্মী ইয়াসের লুয়াতি টুইট করেছেন, ‘মুসলিমরা এমনিতেই আক্রমণের হুমকিতে। এখন ম্যাখোঁ আরো আক্রমণের প্রতিশ্রুতি দিলেন। তার এক ঘণ্টার ভাষণে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন এবং কট্টর ডানপন্থী এবং মুসলিম বিদ্বেষী বামপন্থীদের সুরে গান গেয়েছেন।’
প্রস্তাবিত আইনে কী থাকছে : ‘কট্টর ইসলাম’ থেকে ফরাসী সমাজকে রক্ষায় প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ যে আইন আনার কথা ঘোষণা করেছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ তার একটি খসড়া চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। তবে প্রেসিডেন্টের বক্তব্য-বিবৃতি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে যে ইসলামি শিক্ষা, মাদ্রাসা, ইসলামি প্রতিষ্ঠানে বিদেশী চাঁদা এবং কট্টর ইসলামি ভাবধারা প্রসারের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি এবং তা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে আছেন এমন কারো মধ্যে কট্টর মতবাদে দীক্ষা নেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেখা গেলে সরকার সেখানে সহজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। খেলাধলা, বিনোদন বা অন্য কোনো কর্মকান্ডের আড়ালে ধর্মীয় কট্টরবাদ ছড়ানোর কোনো চেষ্টায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কঠোর হবে। তিন বছর বয়স থেকে স্কুলে যাওয়া বাধ্যবাধকতা করা হবে এবং ঘরে লেখাপড়ার নিষিদ্ধ করা হবে। একটি ধারণা রয়েছে যে অনেক মুসলিম পরিবার মূল ধারার শিক্ষা এড়িয়ে বাচ্চাদের ঘরে বসে পড়ানোর নামে অনুমোদিত মাদ্রাসায় পাঠায়। আরবি ভাষায় পরিচালিত স্কুলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। বিদেশ থেকে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাঁদা নেয়ার ওপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা হবে, এবং ফরাসী রাষ্ট্রের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো সামাজিক-ধর্মীয় প্রকল্প নিষিদ্ধ হবে। বাইরের দেশ থেকে ইমাম আনা বন্ধ করে ফ্রান্সের ভেতরে ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একটি ইসলামি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করবে সরকার যেখানে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে মুসলিমদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা ৬০ লাখের মত যা সেদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ। পর্যবেক্ষকরা বলেন, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের ফরাসী মুসলিমদের ভেতর তাদের ধর্মীয় পরিচিতি প্রকাশের ব্যাপারে আকাঙ্খা বেড়েছে যা নিয়ে কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ ফরাসী রাষ্ট্রের সাথে মুসলিমদের বিরোধ বাড়ছে। সেইসাথে মুসলিমরা সবসময় বৈষম্য, বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অভিযোগ করেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে ফ্রান্সের নাগরিক হলেও শিক্ষা, চাকরি-বাকরিতে তারা অনেক পিছিয়ে। ফরাসী ইন্সটিটিউট অব ডেমোগ্রাফিক স্টাডিজের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রথম প্রজন্মের আলজেরিয়ান অভিবাসীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ বেকারত্ব ছিল। সেই সংখ্যা এখন আরো বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে, বৈষম্য নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সের মুসলিম সমাজের একটি বিরাট অংশের মধ্যে মধ্যে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।