Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশে উচ্চশিক্ষার নামে প্রতারণা ঠেকাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১৬ এএম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রসেসিংসহ ভর্তি করিয়ে দেয়ার নামে অসংখ্য কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান দেশে গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেয়া এবং পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুবিধাসহ ইংরেজি ভাষার কোর্স টোফেল, আইইএলটিএস-এর প্রয়োজন নেই এমন নানা সুযোগের কথা উল্লেখ করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ভিসা পাওয়ার পর অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতিও দেয়। বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থী এসব প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে আত্মসাতের মাধ্যমে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠান এক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়ার কথা বলে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গিয়ে তারা চরম বিপদে পড়ে এবং গ্রেফতার হয়ে জেলে পর্যন্ত যায়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় কনসালটেন্সি ফার্মের নামে একটি প্রতারকচক্র গড়ে উঠেছে বলে পত্রিকান্তরে জানা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এই অপকর্মকে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে এসব প্রতারক চক্র ৭ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে দেড়শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর তদারকি ব্যবস্থা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।

দেশের বাইরে বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার করার জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। গ্লােবাল ফ্লো অফ টারশিয়ারি লেভেল এডুকেশন শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় ৫০-৬০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য এসব দেশে পড়াশোনা করতে যায়। এক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থাকে পছন্দের শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার আকাক্সক্ষা থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ভর্তি ও ভিসা সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া, টিউশন ফি, সেশন সংক্রান্ত যাবতীয় খোঁজ-খবর নিয়ে আবেদন করে। ইংরেজি ভাষা সংক্রান্ত টোফেল, আইইএলটিএস, জিম্যাট, জিআরই ইত্যাদি কোর্স নিজেরাই সম্পন্ন করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। তবে অনেক শিক্ষার্থী, যাদের যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে তারা বিভিন্ন কনসালটেন্সি ফার্মের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সেসব ফার্মের সাথে যোগাযোগ করে। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগেরই পড়াশোনা করতে যাওয়ার চেয়ে কাক্সিক্ষত দেশে গিয়ে কাজ করা বা দেশটিতে কোনো রকমে গিয়ে পৌঁছার অভিলাষ থাকে। তাদের এই মনোভাবকে পুঁজি করেই কনসালটেন্সি ফার্মের নামে একশ্রেণীর প্রতারকচক্র তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিংয়ের নাম করে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে নানা ছলছুঁতোয় তাদের হয়রানি করে। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুধু রাজধানীতেই এ ধরনের কনসালটেন্সি ফার্ম রয়েছে প্রায় তিনশ’র মতো। নামে-বেনামে সারাদেশে রয়েছে দুই হাজারের বেশি। প্রতারণার অভিযোগে বিগত দশ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৬৯২ প্রতারককে গ্রেফতার করলেও এ বিষয়ে কঠোর আইনের বিধিবিধান না থাকায় তারা সহজে জামিন নিয়ে বের হয়ে গেছে। কনাসালটেন্সি ফার্মগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি কোনো বিধিবিধানও তৈরি করা হয়নি। ফলে প্রতারকচক্র প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ঘাটতি বা সুযোগ-সুবিধা কম থাকার কারণে সামর্থ্যবান পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যায়। তাদের পরিবার দেশ থেকে অর্থ পাঠিয়ে পড়াশোনার খরচ জোগান দেয়। এতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর বৃহদাংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে না এসে বিদেশেই থেকে যায়। এর ফলে একদিকে যেমন দেশ থেকে ‘ব্রেইন ড্রেন’ বা মেধা পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল অংকের অর্থও চলে যাচ্ছে। অথচ দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এবং মান নিশ্চিত করতে পারলে এই মেধা ও অর্থ পাচার অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হতো। উচ্চশিক্ষা দেয়ার নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এফিলিয়েটেডের নামে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নামকাওয়াস্তে এফিলিয়েটেডের কথা বলে অধিক হারে টিউশন ফি নিয়ে এক ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দূরে থাক স্থায়ী শিক্ষকও থাকে না। পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে ক্লাস চালানো হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জামাচ্ছে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়া জরুরি। এজন্য কনসালটেন্সি ফার্মের চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য নিজেরাই যোগাযোগ করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। কনসালটেন্সি ফার্মের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন পড়লে সংশ্লিষ্ট ফার্মের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং তার সাফল্যের হার ভালভাবে জেনেবুঝে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারের উচিৎ এসব ফার্মের ক্ষেত্রে দ্রুত যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন এবং রেজিস্ট্রেশনের ব্যবসথা করা যাতে এর মাধ্যমে মানব পাচার এবং মানিলন্ডিরিংয়ের মতো ঘটনা না ঘটে। বর্তমানে বিদেশে উচ্চশিক্ষার নামে যেসব কনসালটেন্সি ফার্মের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া এবং জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চশিক্ষার নামে বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠিয়ে মানব পাচার ও অর্থ পাচার বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্চশিক্ষা

১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৩ অক্টোবর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন