Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেমন গ্র্যাজুয়েট চাই

ড. এম এ মাননান | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গ্রামে কিংবা শহরে যেখানেই কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ করি বা গ্রামাঞ্চলের গাছতলায় আড্ডায় বসি, একটা কমন হা-হুতাশ দেখতে পাই। চলতে থাকে মুখর আলোচনা। কেউ বলে, কী হবে এতো এতো লেখাপড়া করে? কেউ বলে, দেশ গোল্লায় যাচ্ছে, ছেলেমেয়েরা বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে; চাকরি পায় না, কেউ চাকরি দেয় না; মামা-চাচা-দুলাভাই অথবা নিদেনপক্ষে পরিচিত এমপি-মন্ত্রী না থাকলে চাকরি হয় না। সময় যত যেতে থাকে, আলোচনায় যুক্ত হতে থাকে চিত্র-বিচিত্র বহু কিছু। সীমাহীন আলোচনার সমাপ্তি টানার চেষ্টা করা হয় অনেকটা এ রকম কথা দিয়ে: গেছে, লেখাপড়া গোল্লায় গেছে, ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিবো মধ্যপ্রাচ্যে; দেখি আকামা পাই কীনা।
তবে যে যেভাবেই এ সব আলোচনাকে দেখুক না কেন, আমি যথেষ্ট গুরুত্ব দেই। চা দোকান-আমতলা-জামতলা থেকেই ক্ষোভের ভাইরাসগুলো উড়তে উড়তে বসন্তের উড়ন্ত পেঁজা তুলার মতো সমাজের নাকেমুখে হালকা পরশে নেতিবাচক হাওয়ার সৃষ্টি করে, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় ক’রে সোনালী স্বপ্নের ডালপালাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সাবধান না হলে, ’রাস্তার’ আলোচনা-সমালোচনাকে অবহেলায় পেছনে ঠেলে ফেলে দিলে, সমাজ থেকে স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে হয়তো ক্রমান্নয়ে, ধীর লয়ে, বোঝা যাবে না সহজে। যখন বোঝা যাবে, তখন তেমন কিছুই করার থাকবে না।
বিষয়টা যেহেতু ডিগ্রীধারীদের শিক্ষার মান এবং পরবর্তীতে তাদের চাকরি বিষয়ক, সেহেতু ডিগ্রীধারীদের নিয়েই আলোচনা চলুক। ছেলেমেয়েরা ডিগ্রী নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি অথবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে। আগের মতো এখন আর সেই ’কলেজ’ পাওয়া দুষ্কর। এখন সারা দেশে ’বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ এর ছড়াছড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে লেখাপড়ার অবস্থাটা কিরূপ? আমি যেটুকু জানি এবং দেখেছি সেটুকুর উপর ভিত্তি করে বলতে পারি, সমস্যার তো অন্ত নাই। একে তো শিক্ষক সংখ্যা কম, তার উপর প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে কি শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে? মূলত নিয়োগ দেয়া হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে। মৌখিক পরীক্ষার উপর নির্ভর করে কারো যোগ্যতা কি সঠিকভাবে নিরূপন করা যায়? প্রয়োজন ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের লক্ষে লিখিত পরীক্ষা, প্রযুক্তি জ্ঞান ও কমপিউটার লিটারেসি পরীক্ষা, ক্লাস ডিমোনেস্ট্রেশন, শিক্ষকতার পেশার জন্য উপযোগী কীনা তা জানার জন্য এ্যাপটিচিউড টেস্ট, শিক্ষার্থীদের সাথে যথাযথ আচরণ করার ক্ষমতা বোঝার জন্য আচরণিক পরীক্ষা ইত্যাদি। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন ভাষাগত দক্ষতা আর আচরণিক যোগ্যতার উপর। একজন শিক্ষকের বাংলা এবং ইংরেজিতে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য দক্ষতা থাকতে হবে। যিনি ভাষার সঠিক জ্ঞান রাখেন (বানান, বাক্য গঠন ও পঠন, যতিচিহ্ন ঠিক রেখে পাঠকরণ, ভাষার সঠিক প্রয়োগে সুন্দর করে লিখতে পারা) তিনিই শুধুমাত্র ভালোভাবে নিজ নিজ বিষয়ের বইপত্র/শিখন-সামগ্রী অধ্যয়ন করে বিষয়-জ্ঞান সঠিকভাবে অর্জন করতে পারেন যা শিক্ষকতার জন্য অপরিহার্য। শ্রেণিকক্ষে সাবলীলভাবে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করার জন্যও ভাষার উপর পর্যাপ্ত দখল থাকা আবশ্যক। আবশ্যক মানে আবশ্যক; ছাড় দেয়ার কোন সুযোগই নেই। আর শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ও বাইরে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিমিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের সাথে মিলেমিশে শিক্ষাকে তাদের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য প্রয়োজন আচরণিক দক্ষতা। ভুলে যাওয়া যাবে না যে, কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য কসরৎ করবেন না; তার মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদেরকে শেখার রাস্তায় চলতে সাহায্য করা অর্থাৎ সঠিক গাইডেন্স দেয়া। প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষা যে পর্যায়েই হোক না কেন, শিক্ষাদানের নামে মুন্সিয়ানা দেখানো শিক্ষকের কাজ নয়। পান্ডিত্য প্রদর্শণের কোন প্রয়োজনই নেই। শিক্ষার্থীরাই কোন বিষয় সম্পর্কে শেখার জন্য শিক্ষকের পথ প্রদর্শণের দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের বোধক্ষমতা অনুযায়ী প্রাঞ্জল ভাষায় জটিল বিষয় সহজ করে দেয়ার ক্ষমতা, শারীরিক ভাবভঙ্গি, চেহারায় ভাবের প্রকাশ, আপনজনসুলভ দৃষ্টিতে ও ভঙ্গিতে শিক্ষার্থীদের সাথে ভাব বিনিময়-এসব থেকেই শিক্ষকের পান্ডিত্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা ধারণা পেয়ে যাবে। তারা যাকে পন্ডিত ভাববে, তিনিই পন্ডিত। পন্ডিতি ভাব দেখিয়ে পন্ডিত হওয়া যায় না।
কলেজগুলোতে আরও রয়েছে প্রয়োজনীয় ভৌত সুযোগ-সুবিধার অপর্যাপ্ততা। কোথাও ক্লাসরুম প্রয়োজনের তুলনায় কম, কোথাও ক্লাসরুম থাকলেও মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণ-ক্লিনিংএর অভাবে ব্যবহারের অযোগ্য, পাঠাগারে বই থাকলেও দরকারি বইয়ের সংখ্যা কম আর ডিজিটাল উপকরণের ব্যবহার তো চোখে পড়ে না বললেই চলে। এ ছাড়াও, কলেজগুলোর কর্মকান্ডে এখন আর সামাজিক সম্পৃক্ততা দেখাই যায় না। সরকার থেকে প্রায় সব খরচ পেয়ে যাওয়ায় সমাজ এখন আর তার দায়িত্ব আছে বলে মনে করে না। এমপিওভুক্তির অনেক ভালো দিক থাকলেও ভয়ংঙ্কর অন্ধকার দিকটি হলো: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমাজ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। মনে পড়ে, আমি যে কলেজটিতে পড়তাম, সেখানে প্রতি সপ্তাহেই প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ না কেউ কয়েক বার আসতেন। অধ্যক্ষের অফিসে শিক্ষকদের সাথে কথা বলতেন, খোঁজ-খবর নিতেন। তারা ক্লাসেও যেতেন, ছাত্রদের কোন ব্যাপারে অসুবিধা হচ্ছে কীনা সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। আর এখন? সরকারি হয়ে যাওয়ার পর নাকি কেউই আর ওদিক মাড়ায় না। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। আমাদের সময়ে যেখানে একই বছর উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম থেকে চতুর্থ স্থানসহ বোর্ডের পরীক্ষায় বারোটি প্লেস পাওয়া সম্ভব হয়েছিল, সেখানে এখন প্রথম বিভাগের সমতুল্য রেজাল্ট অর্জন ভাগ্যের ব্যাপার। অবশ্যই ভাবনার বিষয়। সবকিছুকে সাদামাটা চোখে দেখার চেষ্টা করলে ফল যা হবার তা-ই হবে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এ দেশে কোন নতুন ধারণা প্রবর্তন করা হলে তা ভালো হোক আর মন্দ হোক, এটিকে সাফল্য হিসেবে ধরে রাখার জন্য বিদেশ থেকে নামীদামী পরামর্শক এনে শুধু সাফল্যের কথা বলানো আর দেশীয় পরামর্শকদের কথা বেশি না শোনাটাই মঙ্গলজনক মনে করা হয়। এভাবেই চিন্তার বন্ধ্যাত্বের জš§ হয়। কলেজের সমস্যা আরও অনেক। এখানে সব আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে সুখের বিষয় হলো, ইতিমধ্যে সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিইডিপি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এটি বাস্তবায়ন করছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করছে, বৃটেনের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়ান ক্যাম্পাসে কলেজ প্রিন্সিপাল আর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ভালো পরিবর্তন আমরা আশা করছি। কলেজ শিক্ষায় বেশি জোর দিতে হবে বিশেষত এ জন্যই যে, প্রায় আড়াই হাজার কলেজে ৭০ শতাংশের বেশি গ্র্যাজুয়েট তৈরী হয়। মূলধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (সরকারি আর বেসরকারি) সব মিলে বাকি তিরিশ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট তৈরীর দায়িত্বে।
বেয়াল্লিশটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চলমান ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয় (এফিলিয়েটেড কলেজসহ) ৩১,৫০,৪০৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে ২০১৬ সালে (ইউজিসি’র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী)। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যগুলো ভর্তি করিয়েছে ২,৬০,০৮৪ জন আর একই বছরে ডিগ্রী পর্যায়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২,৫৬,০০০ জন। বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ কীভাবে হয়? দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে, নিয়োগ হয় মৌখিক শুধুমাত্র রেজাল্টের ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে। কে না জানে, শুধুমাত্র মোখিক পরীক্ষা দুর্নীতির সুতিকাগার। যাকে ইচ্ছা তাকে দরদী প্রশ্ন করে আকাশে তুলে ফেলা যায় আবার যাকে ইচ্ছা তাকে ’দুঃসহ’ প্রশ্নে জর্জরিত করে নাকানি-চুবানি খাইয়ে অপদার্থ প্রমাণ করা যায়। আর ভালো রেজাল্ট? খুবই উত্তম রেজাল্ট উত্তম শিক্ষক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আমি নিজেই ছাত্র জীবনে উত্তম রেজাল্টের শিক্ষকদের বাহাদুরি দেখেছি। একজন তো ক্লাসে গিয়ে বইয়ের একটা একটা করে পৃষ্ঠা পড়ে শোনাতেন এবং নিজের পড়া শেষে জিজ্ঞেস করতেন, তোমরা বুঝেছো তো? আরেক জন ছাত্রছাত্রীদের জুতার খস্খস্ আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে ভিন্ দেশে গিয়ে অন্য চাকরি নিয়েছেন। আরেক জন ব্ল্যাকবোর্ডের সাথে কথা বলতেন, আমরা যে ওনার পেছনে বেঞ্চে বসা আছি তা ভুলেই যেতেন। চতুর্থ জন কী পড়াতেন তা না বুঝলেও আমরা চুপ করে থাকতাম, কারণ তিনি সজ্জ্বন ছিলেন, সবাইকে ভালো মার্ক দিয়ে দিতেন আর হাসিমুখে বলতেন তোমরাতো আমারই সন্তানের মতো। পঞ্চম জনের কথা আর কী বলবো, তিনি তো চোখ রাঙানো ছাড়া আর কিছু বুঝতেনই না। প্রশ্ন করলে পাল্টা প্রশ্ন করতেন, তুমি কি অমুকটা বোঝ? আমরা পাল্টা প্রশ্নের ভয়ে আর কোন প্রশ্নই করতাম না। ইনারা সবাই ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া শিক্ষক ছিলেন। আমার বিশ্বাস, লিখিত পরীক্ষাসহ উপরে উল্লিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে সঠিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষা, কমপিউটার/আইসিটি টেস্ট, ভিডিও ক্লাস টেস্ট এবং সর্বশেষে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে ভাল ফল পেয়েছি। এতে শুধু উপযুক্ত ব্যক্তিরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন না, অনাকাঙ্খিত তদবিরও শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
মূল কথায় ফিরে আসি। যে গ্রাজুয়েটরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে তাদের শিক্ষার মান বা কোয়ালিটি কেমন? শিক্ষার মানের কোন সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নেই। তাই আমি শিক্ষার মান বলতে কর্মক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করতে পারার উপযুক্ততাকে বুঝাচ্ছি - ফিট্ ফর পারপাস্। তারা কেমন ফিট্? যদি ৮০/২০ রুলকে গুরুত্ব দেই, তাহলে সাধারণভাবে আশি শতাংশকে নিয়েই মাথাটার ব্যথা। গবেষণালব্ধ তথ্যের অবর্তমানে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে দ’ুএকটা উদাহরণ দিলে কিছুটা হলেও আশি শতাংশের কোয়ালিটির কিছুটা আঁচ করা যাবে, যদিও তার সাধারণীকরণের কোন সুযোগ নেই। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মাস্টার ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের অনেকেই (অন্তত ৭০%) সঠিকভাবে তাদের পাবলিক পরীক্ষা/ডিগ্রির নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, কি কি বিষয় অধ্যয়ন করেছে সেগুলোর নাম, এমনকি দু’একজন শিক্ষকের নামও লিখতে গিয়ে যে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা রীতিমত উদ্বেগ সৃষ্টিকারক। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের বানান এবং ডিগ্রির নাম তারা যেভাবে লিখেছে হুবহু সেভাবে তুলে ধরছি: secendary school certificate (S.S.C); Higher secendary Certificate (H.S.C); MBS=Management of Business studies; Batalor (nIqv DwPZ Bachelor ); Ansar Sheat; s.s.c seecindary school ceritficte; H.S.C Higher secandary ceritificte; B.B.S (Pass) Baclor Buiness stiduies; M.B.S Masters of Buiness stidues; M B S – Masters of Bechlor Study; MBA – Master’s of Business Administration; HSC- Highir school certificate; secandary ...; HSC – Higher school certificate; Bachalor of Business study; (MBA) Masters of Bachalor Administration; Agreeculther (agriculture); High Scuul Sarti...; (SSC) School Secondary Certificiate. প্রিয় পাঠক, এ গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষার মানের অবস্থা কিছুটা কি আঁচ করতে পারছেন?
এরা সবাই পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। এ-ই যদি হয় শিক্ষার হাল, তাহলে দোষটা কাকে দেয়া যাবে? শিক্ষার মানোন্নয়নের দায়িত্বটা কার কাঁধে চাপানো যাবে? এককভাবে কারও দায়িত্ব নয়। দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়ক ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের, শিক্ষকদের, অভিভাবকদের, স্থানীয় কমিউনিটির এবং স্বয়ং শিক্ষার্থীদের। কোন একটি মাত্র হাতে নয়, সব হাত একত্রিত করে অর্কেস্ট্রা পার্টির মতো একযোগে অর্কেস্ট্রেশন করা না হলে শিক্ষার মান উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। বিচ্ছিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ কখনও সফল হবে না। সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত উদ্যোগে আমদের তৈরি করতে হবে এমন ধরনের গ্রাজুয়েট যারা সঠিকভাবে মাতৃভাষাসহ ইংরেজিতে পারদর্শী হবে, উভয় ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারবে/প্রেজেন্টেশন করতে পারবে এবং অন্যদের সাথে যথাযথভাবে মৌখিক ও লিখিত উপায়ে যোগাযোগ করতে পারবে, অন্যান্য সফ্ট স্কিলগুলোও আয়ত্ত করবে যাতে সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যৌক্তিক চিন্তা করতে পারবে, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারবে, বিজ্ঞান-মনস্ক হবে, প্রযুিক্তবিষয়ক শিক্ষা গ্রহণ করবে, সাবলীলতার সাথে কমপিউটার চালাতে পারবে এবং কর্মস্থলে-সমাজে-দেশে-বিদেশে স্মার্টলি নিজকে উপস্থাপন করতে পারবে। মনে রাখা দরকার, আমরা ভিশন-২০২১ অনুসারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোসহ শিল্প-কারখানায় প্রচুর সংখ্যক মধ্যম স্তরের তারুণ্যদীপ্ত ব্যবস্থাপক প্রয়োজন। প্রবেশ-স্তরেও সৃজনশীল, উদ্বাবনী শক্তিসম্পন্ন ব্যবস্থাপক/দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। নলেজ ওয়ার্কারতো লাগবেই। যেভাবে চলছে এভাবে চললে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যবস্থাপক তৈরী হবে না। নির্ভর করতে হবে অন্য দেশের উপর। ইতিমেধ্য্ কয়েক লক্ষ বিদেশী দক্ষ ব্যবস্থাপক এবং কর্মী বাংলাদেশে কাজ করছে এবং দেশী গ্রাজুয়েটদের বেকার রেখে এরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন গেড়ে বসেছে। গ্রাজুয়েটদের মান বাড়াতে না পারলে নিয়োগকর্তারা চেহারা দেখার জন্য গ্রাজুয়েটদের চাকরি দিবে না। তাই উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা শুধু আবশ্যক নয়, বরং বলা যায় সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে বলতে চাই, বই দেখে দেখে পড়ানো ’পুস্তক-শিক্ষক’ এবং না বুঝেই বই মুখস্ত করা ’স্টিল-শিক্ষার্থী’ বা ’জোম্বীশিক্ষার্থী’ এ দুয়ে মিলে যদি শিক্ষাব্যবস্থাকে গিলে ফেলে, তাহলে সেখানে শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্বস নেমে আসা শুধু সময়ের ব্যাপার; কাঙ্খিত গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা তো বহুত দূেরর স্বপ্ন।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও গবেষক; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন