Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন্দ্রে নির্যাতনেই ৩ কিশোর খুন

রিমান্ডে সুপারসহ ৫ কর্মকর্তা

বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের হতাহতের ঘটনায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (সুপার)সহ ৫ জন কর্মকর্তার রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল শনিবার গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। পরে আদালত সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মাসুম বিল্লাহ ও মুশফিকুর রহমানকে পাঁচ দিন করে এবং শাহানুর আলম ও ওমর ফারুককে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বর্তমানে কেন্দ্রে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বন্দি কিশোর রাব্বির পিতা রোকা মিয়া কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও সুপার আব্দুল্লাহহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর এ কে এম শাহানুর আলম ও সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান।
ইতোমধ্যেই সহকারি পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
বন্দি কিশোরদের হতাহতের ঘটনায় গতকাল শনিবার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন পিপিএম প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি ঘটনার সূত্রপাত থেকে আদ্যপান্ত উদঘাটন করেছেন যা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ আগস্ট। কিশোর বন্দি হৃদয়কে হেডগার্ড নূর ইসলাম ঈদের আগে ১০ বন্দির চুল কেটে দিতে বলে। হৃদয় তার হাত ব্যাথা উল্লেখ করে চুল কাটতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হেডগার্ড তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ ও সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহর কাছে অভিযোগ করে যে, ‘ওরা ট্যাবলেট খেয়ে নেশাগ্রস্ত আছে এবং হৃদয় ও পাভেলের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়’। এ অভিযোগ জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে পাভেলসহ কয়েকজন হেডগার্ডকে মারপিট করে। এরই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ১৩ আগস্ট কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে একটি সভা হয়। সভায় ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সভায় হেডগার্ড নূর ইসলামের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়। শনাক্ত করে বন্দি কিশোরদের রুম থেকে বের করে আনা হয়। কেন্দ্রের গ্রেফতারকৃত পাঁচ কর্মকর্তার নেতৃত্বে তাদের আজ্ঞাবহ কয়েকজন কর্মচারি ও বন্দি অভিযুক্তদের মুখে গামছা ঢুকিয়ে লোহার রড দিয়ে মারপিট করতে থাকে। দফায় দফায় চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মারপিট বন্ধ করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রায় ৬ ঘণ্টা একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসা দেয়া হয় একজন কম্পাউন্ডার দিয়ে। আহত বন্দি কিশোরদের মধ্যে একজন মারা গেলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে খবর পেয়ে দ্রুত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গিয়ে তারা প্রত্যক্ষ করেণ একটি ঘরে গাদাগাদি করে আহতদের ফেলে রাখা হয়েছে। দুপুরের খাবার ও চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে আরো ২ জন মারা যায়। একে একে হতাহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।



 

Show all comments
  • Abdul Aziz ১৬ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    প্রায় সব সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানোয়ার। ওদের মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব নাই। আর নিয়ন্ত্রনহীন প্রতিষ্ঠান এগুলা ।
    Total Reply(0) Reply
  • Hafid Abdullah ১৬ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    দেশে কি ফাইজলামি শুরু হইছে। কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিক ভাবে চালানোর যোগ্যতা নাই। কবরে একা যাবেন, হিসাব দেওয়া লাগবে। প্রস্তুত তো?
    Total Reply(0) Reply
  • Shahinalam Shahin ১৬ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
    যে যেই কারণে করে থাকুক না কেনো,এটা খুবই জঘন্য অপরাধ।প্রকিত অপরাধিকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Mamun Shamim ১৬ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ নয়, বরং কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক মারধরে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Asaduzzaman ১৬ আগস্ট, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    এইসব প্লতিষ্ঠানের পরিচালক সহ যারা আছেন তারা শিশুকিশোরের বাজেটের চাল মাছ মাংস ডাল চুরি করে নিজ বাসায় নেয় , ভূয়া ভাউচারে বিল উঠায় , শিশু কিশোরদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করায় । শিশুরা অনেকে যৌণ নির্যাতনের শিকার হয় । ঐ প্রতিষ্ঠানের সবার চুরি অপরাধের তদন্ত হোক ।
    Total Reply(0) Reply
  • Neamat Ullah ১৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:২১ পিএম says : 0
    আইনের শাসন না থাকায় দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ