পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ ব দ্বীপ। এর কেন্দ্রস্থল বা হৃদয় হচ্ছে ঢাকা। বলা হয়, ঢাকা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এর চেহারাই বাংলাদেশের চেহারা। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি ঢাকাকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আবার বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ঢাকার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। এর জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৪৫ হাজার মানুষ। এত কম আয়তনে এত অধিক মানুষের বসবাস বিশ্বের আর কোথাও নেই বললেই চলে। এই শহরে জড়াজড়ি করে মানুষ বসবাস করছে। শত কষ্ট হলেও শহর ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। উল্টো প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রবেশ করছে। এদের মধ্যে অর্ধেকই থেকে যায়। সারা দেশের মানুষকে ঢাকা চুম্বকের মতো টেনে আনছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি-সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু যদি একটি শহর হয়, তবে শহরটির ভাল থাকার কি উপায় আছে? উপায় নেই। ঢাকা আজ এক বিপর্যস্ত শহর। বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী, অসভ্য ও দূষিত নগরী। এতসব বদনাম নিয়েও ঢাকা আমাদের প্রিয় শহর। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, জলজট, বিশুদ্ধ পানির অভাব যতই থাক না কেন, একে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। অতি আবেগ নিয়ে বলি ‘ঢাকা আমার ঢাকা’।
দুই.
রাজধানীর এখন এমন এক অবস্থা যে, সামান্য বৃষ্টিতেই কোমর সমান পানি জমে যায়। মেট্রোরেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করার কারণে সংকীর্ণ সড়কগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে ছোট ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এর ফলে পানির মধ্য দিয়ে গাড়ি চলার সময় যে ঢেউ সৃষ্টি হয় তা রাস্তার দুপাশের অফিস, দোকানপাট, বাড়িতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। এ ঢেউ সমুদ্রের ঢেউয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মানুষের কী দুর্ভোগ! অথচ ঢাকাকে বাসযোগ্য ও সুন্দর একটি নগরী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বে রয়েছে ৭টি মন্ত্রণালয় এবং ৫৪টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তিন দিনের বৃষ্টিতে বোঝা গেল, এসব মন্ত্রণালয় ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আদতে কোনো কাজেরই নয়। কাজ করলেও তার ফলাফল শূন্য। যখনই ঢাকা ডুবে যায়, তখনই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুরু হয়, তর্ক-বিতর্ক। ঢাকার সিটি করপোরেশন দায়ী করে ওয়াসাকে। ওয়াসা দায় অস্বীকার করে বলে, এ দায় সিটি করপোরেশনের। বছর কয়েক আগে এক মেয়র বলেছিলেন, এ সমস্যা সমাধান করতে হলে আলাদিনের চেরাগ লাগবে। আমাদের হাতে এ চেরাগ নেই। সে সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ওয়াদা বলেছিলেন, আগামী বছর এই পানিবদ্ধতা থাকবে না। এসবই যে কথার কথা বা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলার জন্য বলা, তা ঢাকাবাসী জানে। তারা এটাও জানে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অপেক্ষায় আছে কোনো রকমে বর্ষাকালটি পার হওয়ার জন্য। শীতকাল এলেই এ দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আসলে বাংলাদেশে যদি সারাবছরই শুষ্ক মৌসুম থাকতো, তাহলে ঢাকার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর খুশির অন্ত থাকত না। এ কথাই বা বলি কী করে! কারণ বৃষ্টি না হলে যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়ে যাবে, দুর্নীতিবাজদের পকেটে টান ধরবে! এটা কী সম্ভব! কাজেই বৃষ্টি হতেই হবে। খোঁড়াখুঁড়ি চলবে এবং পকেট ভারি হবে। নগরবাসী এক দুই দিন বকাঝকা করবে, তারপর ঠিক হয়ে যাবে। তাদের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বক আর ঝক কানে দিয়েছি তুলো, মারো আর ধরো, পিঠে বেঁধেছি কুলো’। তারা একের দোষ আরেকজনের উপর চাপিয়ে সমঝোতামূলক বা লোক দেখানো ঝগড়া করতে করতেই সময় পার করে দেয়ার চিরায়ত অপনীতি অবলম্বন করে চলেছে। ঢাকার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণ নগরবাসী বছরের পর বছর দেখে আসছে। বলা হচ্ছে, নগরীর উন্নয়ন কাজে এক সংস্থার সাথে আরেক সংস্থার সমন্বয় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সমন্বয় হবে কবে? নাকি ইচ্ছে করেই সমন্বয় করা হচ্ছে না? তা নাহলে, কেন ওয়াসা রাস্তা খুঁড়ে কোনো রকমে মাটি ভরাট করে গেলে, একই জায়গায় আবার খোঁড়া শুরু করে সিটি করপোরেশন, সিটি করপোরেশনের খোঁড়া শেষ হলে শুরু করে তিতাস ও অন্যান্য সংস্থা? তাদের এই সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি দেখে যে কারো মনে হবে, এ যেন রাস্তা খুঁড়ে টাকা বের করে আনে। প্রতিটি রাস্তা যেন একেকটি টাকার খনি। যত খোঁড়াখুঁড়ি, তত টাকার উৎপাদন (!)। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। চক্রবৃদ্ধি হারে টাকা বেড়ে যায়। এতে নগরবাসী সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ল কি পড়ল না, তাতে কিছু যায় আসে না। কিংবা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে পড়ে মানুষ হাত-পা, কোমর ভেঙ্গে আহত বা নিহত হলেও কুচ পরোয়া নেহি। ভাবখানা এমন, উন্নয়ন করতে হলে এরকম সমস্যায় পড়তেই হবে। এটা মেনে নিতে হবে। নগর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর এমন অপরিনামদর্শী কর্মকান্ড চলছে বছরের পর বছর ধরে। এ থেকে নগরবাসী কবে মুক্তি পাবে, তা কেউই বলতে পারবে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো নিষ্কাশন প্রকল্প হাত দিচ্ছে না ওয়াসা। এমনও কথা শোনা যায়, পানিবদ্ধতায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন দেয়া হচ্ছে। খোশগল্প করে নাকি তাদের দিন কাটে। বছর কয়েক আগে ওয়াসার ড্রেনেজ শাখার এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, পানিবদ্ধতা এত বেড়ে যাওয়ার পরও আমাদের কেন কাজ নেই, আমরা জানি না। ড্রেনেজ শাখায় আমাদের যে জনবল রয়েছে তাদের কোনো কাজ নেই। কয়েক বছর ধরে আমরা বসে বসে বেতন নিচ্ছি। কেন আমাদের কাজ নেই তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। এটা এক ধরনের নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া কিছু নয়। ওয়াসার কর্মচারি-কর্মকর্তাদের এই বসে বসে বেতন নেয়ার কাজটি যে এখনও চলছে, তা রাজধানীর ডুবে যাওয়া থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ওয়াসার ড্রেনেজ শাখার যদি এই চিত্র হয়, তবে রাজধানী যে পানিবদ্ধতা থেকে কোনো দিনই মুক্তি পাবে না, তা হলফ করেই বলা যায়। রাষ্ট্রের এই বেশুমার অর্থ অপচয় যদি অবলীলায় করা হয় তবে, সেই রাষ্ট্রের রাজধানী কোনোভাবেই ভালো থাকতে পারে না। ২০১৭ সালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। মন্ত্রীত্ব থেকে তিনি চলে গেলেও পানিবদ্ধতা রয়ে গেছে এবং তা আরও বিস্তৃত হয়েছে।
তিন.
বৃষ্টিতে ঢাকা শহর ডুবে যাওয়ার কারণে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, তা অভাবনীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করতে দেখা যায়। রাজধানীর সড়কের ডুবন্ত ছবি দিয়ে সরকারের উন্নয়নকে কটাক্ষপাত করা হয়। বিশেষ করে যেসব অফিস-আদালতের সামনে সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি সম্বলিত বিলবোর্ড ও ব্যানার ঝুলানো আছে, সেগুলোর নিচে কোমর সমান পানির ছবি তুলে ফেসবুক সয়লাব হয়ে যাওয়ায়, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এটাই কি উন্নয়নের নমুনা? মানুষের এসব প্রশ্নের জবাব সরকার কীভাবে দেবে, তা সরকারই ভাল বলতে পারবে। অথচ রাজধানীর এক পানিবদ্ধতাই সরকারের অনেক উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে। তবে এ কথা মানতে হবে, বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম যেহেতু ঢাকাকে কেন্দ্র করে হয়, তাই এর উন্নয়নকেই মানুষ উন্নয়ন হিসেবে ধরে নেয়। এক পানিবদ্ধতায় ঢাকা শহর ডুবে যাওয়ায় সরকারের উন্নয়নকেও মানুষ ডুবে যাওয়ার সাথে তুলনা করছে। এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তবে, যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন, তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। উন্নয়নের চিত্রটি ঢাকায়ই তুলে ধরতে হবে। এটা অনেকটা রাজনীতির মাঠ দখলের মতো। রাজনীতিতে যার দখলে ঢাকা থাকে, তারই জয় হয়। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় দেশের মানুষ দেখেছে, সারা দেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তুমুল আন্দোলন গড়ে তুললেও, শুধু ঢাকা ক্ষমতাসীন দলের দখলে থাকায় পুরো আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সরকার যতই উন্নয়নের মহাসড়কের কথা বলুক না কেন, তা যদি পানিতে ডুবে থাকে তবে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশ উন্নতি করছে, এর চিত্র রাজধানীর মাধ্যমেই তুলে ধরতে হবে। কেউ যদি প্রশ্ন করে, যে সরকার রাজধানীর উন্নতিই করতে পারল না, সে কিভাবে উন্নতি করল? এ প্রশ্নের উত্তর সরকার কিভাবে দেবে? বলা বাহুল্য, যে দেশের রাজধানীর নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত এবং অপর্যাপ্ত, সে দেশ উন্নতি করছে, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব নয়। সরকার বড় বড় মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিক দশটি প্রকল্পের কাজ ধরেছে। এসব প্রকল্পের সাথে রাজধানীর সম্পর্ক অনিবার্যভাবেই রয়েছে। রাজধানীই যদি অচল হয়ে থাকে, তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কীভাবে? অথচ সবার আগে সরকারের অগ্রাধিকার প্রজেক্টের মধ্যে রাজধানীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া উচিত ছিল। এদিকটি সরকার খেয়াল করছে বলে মনে হয় না। রাজধানীকে গতিশীল করার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শুধু যানজট ও পানিবদ্ধতা নিরসনে যদি কোনো মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হতো, তবে দেশের উন্নয়ন অনেক দূর এগিয়ে যেত। রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া প্রায় ৪৬ টি খাল পুনরুদ্ধারের মেগা প্রকল্প নেয়া হলে, এই সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যেত। এজন্য সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই যথেষ্ট ছিল। যানজট নিরসনে দখল হয়ে যাওয়া রাস্তা-ঘাট এবং পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, রাজধানীর চেহারাই বদলে যেত। এ সমস্যা সমাধান করতে হলে সরকারের কঠিনতম সিদ্ধান্ত নেয়ার বিকল্প নেই।
চার.
ঢাকার পানিবদ্ধতা নিয়ে টেলিভিশনের টকশোগুলোতে নগরবিদদের বেশ সরব থাকতে দেখা যায়। তাদের আলোচনায় পানিবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকারের বিষয়গুলো উঠে আসে। এসব পরামর্শ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই শুনেছে। তবে তা যে ঐ শোনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের মধ্যে সমন্বয় হওয়া বা উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি সুদূরপরাহত হয়ে রয়েছে। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। পানি নিঃসরণের জন্য সিটি করপোরেশন রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করছে। ওয়াসা করছে রাস্তার নিচ দিয়ে। ওয়াসা দায়ী করছে সিটি করপোরেশন তার ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেমের ক্ষতি করছে। কোনো কোনো এলাকায় বন্ধ করে দিচ্ছে। সিটি করপোরেশন তা অস্বীকার করে আসছে। অর্থাৎ দুই প্রতিষ্ঠানের ড্রেনেজ সিস্টেমের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এক বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চলছে। এ পরিস্থিতিতে পানিবদ্ধতা নিরসনের কোনো কারণ থাকতে পারে না। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বারবার তুলে ধরা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথচ রাজধানীর অন্যতম প্রধান দুই সমস্যা যানজট ও পানিবদ্ধতা নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক কোনো প্রকল্পের কথা শোনা যায় না। রাজধানী যে দিনের পর দিন এক পরিত্যক্ত নগরীর দিকে ধাবিত হচ্ছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে না। সরকার এটা ভাবছে না, এক রাজধানীর বেহাল দশাই তার সবটুকু উন্নয়ন খেয়ে ফেলছে। অথচ উন্নতির অন্যতম সূচকই হচ্ছে, রাজধানীকে পরিপাটি করে সাজানো এবং বাসযোগ্য করে তোলা। একজন বিদেশি রাষ্ট্রের সরকার প্রধান যদি বৃষ্টির মধ্যে সফরে আসেন এবং তাকে পানিবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে হয়, তবে আমাদের উন্নয়ন সম্পর্কে তার কী ধারণা হবে? তার কাছে কি মনে হবে না, সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে তা ‘ফানুস’ ছাড়া কিছু নয়? এক পানিবদ্ধতাই সরকারের সব উন্নয়নকে ম্লান করে দিতে যথেষ্ট। এ বিষয়টি সরকারের গভীরভাবে ভাবা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াটার সামিট-২০১৭ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছিলেন, রাজধানীতে নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার ও জলাধার সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত এ পদক্ষেপের শুরু করা হয়েছে, এমন নজির নেই। অথচ এতদিনে পদক্ষেপটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীর চেহারাই বদলে যেত। কাজটি করা যথেষ্ঠ কঠিন। হারিয়ে যাওয়া বা দখল হওয়া খালে ইতোমধ্যে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট হয়ে গেছে। এসব খালের বেশিরভাগই প্রভাবশালীদের দ্বারা দখল হয়ে আছে। এদের প্রভাব উপেক্ষা করে খাল উদ্ধার, জলাধার নির্মাণ সহজ কাজ নয়। আবার সহজও বটে, যদি সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল, অবিচল থাকে এবং পানিবদ্ধতামুক্ত করতে দৃঢ় সংকল্প থাকে। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যত সমস্যাই থাকুক, খাল উদ্ধার, সংস্কার করতে হবে-এ মনোভাব বজায় রাখা গেলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা দেখেছি, সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলে রাস্তা দখল করে গড়ে উঠা বিজয় সরণীর একটি বহুতল ভবন ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। সরকার হাতিরঝিলের বহু অংশ দখলমুক্ত করে উদ্ধার করেছে। এ কাজ সম্ভব হয়েছে, সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলে। এ কথা নিশ্চত করেই বলা যায়, হারিয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করা গেলে শহরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি নৌ যোগাযোগের ফলে যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে। আমরা মনে করি, রাজধানীকে অপরিকল্পিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দিয়ে এখনই এর লাগাম টেনে ধরতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপের অপসংস্কৃতি বাদ দিয়ে সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় করা জরুরী। উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে হলে সরকারকে অবশ্যই ঢাকার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।