পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
সিরিয়ার যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনো। ২টি বিশ্বযুদ্ধের থেকেও দীর্ঘ সময় ধরে চলছে সিরিয়ার যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমান, এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। আর জীবিতদের ৯০ ভাগই জীবন কাটাচ্ছেন প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে। সিরিয়ার অর্থনীতিতে এই যুদ্ধের কারণে ক্ষতির পরিমাণ এক হিসেবে বলা হয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি ডলার। সম্প্রতি দেশটির মুদ্রার মানে নজিরবিহীন ধস নামে। সেখানে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে খাদ্যাভাব। সিরিয়ায় খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে দ্বিগুণ। এরওপর আরেকটি নতুন আঘাত হিসেবে সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে যাচ্ছে এ সপ্তাহেই। এই গভীর সঙ্কটের কারণে বিক্ষোভকারীরা আবার ফিরে এসেছে রাজপথে। তারা খোলাখুলিভাবেই ২০১১ সালের মতো করে সেøাগানগুলো দিচ্ছে, যার মূল দাবি বাশার আসাদ সরকারের পতন। সিরিয়া যুদ্ধের আঁচ পৌঁছে গেছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পরিবারেও। প্রকাশ্যে এসেছে ক্ষমতাসীন পারিবারটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ। এ নিয়ে মার্কিন সংবাদ সংস্থা ফরেন পলিসির প্রকাশিত নিবন্ধটি ৪ পর্বে প্রকাশ করা হ’ল : ১৯৮০’র দশকে ফ্রান্স তার কিছু অংশ তুরস্ককে ছেড়ে দিলে সুন্নী মুসলমান অধ্যুষিত সিরিয়ায় আলাবিদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য ফরাসিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন আলি সুলায়মান আল-ওয়াহিশ। তিনি আলেপ্পোতে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সহায়তা করেছিলেন। তিনি ছিলেন সিরিয়ার স্বল্প কয়েকজন শিক্ষিত আলাবি গোত্রের মধ্যে একজন এবং তার গ্রামের একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিয়মিত কোনো সংবাদপত্র রাখতেন। আলি দুর্বলদের রক্ষার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তার কৃতিত্বের জন্য তার গোত্রের মানুষ তাকে আরবিতে আল-আসাদ বা সিংহ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং ১৯২৭ সালে তিনি তার উপাধিকে বংশপদবী হিসেবে গ্রহণ করেন। আলী সুলায়মান আল-ওয়াহিশ ওরফে আলী সুলায়মান আল-আসাদ (১৮৭৫ থেকে ১৯৬৩) লাতাকিয়ায় আলাবিদের নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের পিতা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পিতামহ। তিনি হয়তো কল্পনাও করেননি যে, তার বংশধররা কেবল দেশ শাসনই করবে না বরং একদিন ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হওয়া রাষ্ট্রের সর্বস্ব লুট করতে দ্ব›েদ্ব লিপ্ত হবে। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে আলীর পুত্র রিফাত তার বড় ভাই এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেছিলেন। হাফেজ নিজেই এর এক দশক আগে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। হাফেজ সাফল্যের সাথে ভাই রিফাতকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং নিজ পুত্র বাশার আল-আসাদকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে পারিবারিক ও অন্যান্য বিদ্রোহ দমন করতে হয়। বাশার তার পিতার কথায় যথাযথভাবে মনে গেঁথে নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিদ্রোহ দমনে সিরিয়জুড়ে বোমাবর্ষণ এবং লাখ লাখ লোককে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করেন। তিনি তার কয়েক ডজন চাচাত ভাইকে আর্থিক প্ররোচনা ও তাদের জীবনের প্রতি চিরকালীন হুমকির মাধ্যমে শক্তভাবে কব্জা করেন। তবে, গত মাসে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। বাশারের মামাতো ভাই এবং পরিবারের এক ধনী সদস্য রামি মাখলুফ তার বিরুদ্ধে ২৩ কোটি ডলার অনাদায়ী কর প্রদানের জন্য প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে তথাকথিত পারিবারিক সংহতি ভেঙে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তারপর থেকে আসাদের বেশ কয়েকজন চাচাত ভাইবোন প্রকাশ্যে বাশার সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। মাখলুফের সমালোচনা বাশার শাসনের পক্ষে একটি পারিবারিক বিভক্তির প্রতিচ্ছবি বলে মনে করা হচ্ছে। বাশার যদি তার পরিবার এবং অন্যান্য সহ-ধর্মবাদীদের আনুগত্য হারিয়ে ফেলেন, তবে তিনি আদৌ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন কিনা, তা ভাবনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।