পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পরিবারের স্বৈরশাসন অবসানের দাবিতে পাঁচ বছর আগে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাদের সে দৃঢ়তা আজো আছে, কিন্তু বিপ্লবের লক্ষ্য নিয়ে দুঃখ ও হতাশাও আছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে বলবৎ অস্ত্রবিরতির মধ্যে সিরীয় গণঅভ্যুত্থানে পাঁচ বছর পূর্তি হল। যুদ্ধহীন পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় ফিরে আসে, ২০১১ সালের সেই মূল সেøাগান দেয়।
দেশ থেকে পালিয়ে আসা ও বর্তমানে তুরস্কে বসবাসরত সিরিয়ার অধিকার কর্মী আম্মার জেলো বলেন, আমি মনে করি, দুর্বল অস্ত্রবিরতি সামান্য পরিমাণে হলেও বিপ্লবকে তার মূলে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের ছাইয়ের মধ্য থেকে যেমন ফিনিক্স পাখির পুনর্জন্ম হয় সেভাবে হয়ত বিপ্লব আবার ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। জেলো জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় পরিচয়ে নিজেকে আখ্যায়িত করতে রাজি নন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি একজন সিরীয়। ক্রমবর্ধমান বিভক্তির শিকার একটি দেশে এ পরিচয় অর্থবহ। তিনি একাই শুধু বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে পুনরুত্থিত শক্তির বলে উল্লসিত নন। হতে পারে যে এ অনুভূতি অকালপক্ক। বাশার এসেছেন ক্ষুদ্র আলাবি গোষ্ঠী থেকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নী মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা তাকে সমর্থন করে।
বৃহত্তর অধিকার ও স্বাধীনতার দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল। সরকার প্রচ- শক্তি ব্যবহার ও গণগ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার সহিংস ভাবে তা দমন করে।
এর পরে শুরু হয় সশস্ত্র-সংঘাত যার ফলে ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১ কোটি ১০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়।
অস্ত্রবিরতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে আলোচনা শুরুর চেষ্টা চলছে। তবে এখনো তাতে সাফল্যের আশা করছে না কেউই।
বহু লোকের জন্য কয়েক বছরের যুদ্ধ হচ্ছে অভিশাপ। তাদের ক্রোধের লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট বাশার যিনি অবরোধ, ব্যারেল বোমা ও রুশ বিমান হামলার সাহায্যে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। তিনি শুধু জঙ্গিদের উপরই হামলা করছেন না, স্কুল ও হাসপাতালও ধ্বংস করছেন।
বিদ্রোহী অধিকৃত আলেপ্পোর একজন সমাজকর্মী মাহমুদ শাহাবি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাশারকে শাসন ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা। তিনি বলেন, ২০১১ সালের শুরু থেকেই আমরা জানি যে এর জন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে। পাঁচ বছর পর আমরা আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা সে যে মূল্যই দিতে হোক না কেন। উল্লেখ্য, আবার যদি সহিংসতা শুরু হয় তাহলে আলেপ্পো আবার অবরোধের শিকার হবে।
অন্যদের আরো অনেক বেশি আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।
লড়াইয়ে ব্যাপক ধ্বংসের শিকার প্রাচীন হোমস শহরে প্রথম প্রতিবাদে অংশ নেয়া ওমর আল হালাবি স্বীকার করেন পরিকল্পনা মত কিছু ঘটেনি। তিনি বলেন, আমার হৃদয় প্রতিদিন কাঁদে, বিশেষ করে যে প্রিয়জনদের হারিয়েছি তাদের জন্য। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বিপ্লবকে তুলে আনতে হবে ও তা চালিয়ে যেতে হবে।
হালাবি বলেন, আমরা পিছনে যেতে পারি না। আমাদের বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে উগ্রপন্থীরা আমাদের স্বপ্ন চুরি করে নিতে পারে।
এটা গোটা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার মাত্রাই শুধু নয় অথবা গোলযোগের সুযোগে একদা উদার নীতির দেশটির অভ্যন্তরে ইসলামিক স্টেটের দুর্নীতিগ্রস্ত খিলাফত প্রতিষ্ঠা নয়।
বর্তমানে বৈরুতে বসবাসকারী রাঘদ দামেস্কে প্রথম বিক্ষোভের স্মৃতিচারণ করেন যখন নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে বাশারের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। এ নারী এখন বিপ্লবের উপর পুরুষদের প্রাধান্য দেখছেন। তিনি বলেন, আমরা একত্রে স্বৈরাচারের সম্মুখীন হয়েছি। আমরা বন্দিত্ব ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। দেশের সকল অংশের নারীরা বিক্ষোভ আন্দোলনে জড়িত ছিল। খ্রিস্টান, মুসলিম, উদার ও রক্ষণশীল সবাই এতে যোগ দিয়েছিল।
রাঘদ আক্ষেপ করে বলেন, পাঁচ বছর পর দেখলাম আমাদের ভূমিকা প্রান্তিকীকৃত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকীকরণ শুধু রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের ব্যাপারেই নয়, এটা এমন কিছু ঘরেই যার শুরু এবং যা সামাজিক পরিবর্তন দাবি করে।
যে সব খ্রিস্টান সিরিয়ার নগর, শহর ও গ্রামজুড়ে আসল বিক্ষোভের জোয়ারে শামিল হয়েছিলেন তাদের একজন মারওয়ান বলেন, আন্দোলনের জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন অথচ তিনি বিশ^াসঘাতকতার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আশা করেছিলাম যে আমি এক মুক্ত সিরিয়ায় বাস করব। কিন্তু যখন উগ্রপন্থীরা এল তখন আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। লেবানন প্রবাসী মারওয়ান বলেন, তারা আমাদের খ্রিস্টানদের কাফের হিসেবে দেখতে শুরু করল।
তিনি বলেন, আমি সিরিয়া ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম, কারণ উপলব্ধি করলাম যে বিপ্লব যেখানে যাচ্ছে আমি তার অংশ নই। আমি মনে করি যে ২০১১ সালে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল তা মৃত।
উত্তরপশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব একমাত্র প্রদেশ যার প্রায় পুরোটাই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রণে। এ প্রদেশের বেশিরভাগ অংশই কট্টরপন্থী আহরার আল শাম ও আল নুসরার পরিচালনাধীন।
সম্প্রতি গণতন্ত্রের দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হলে আল-কায়েদা কঠোর হাতে দমন করে। তারা বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় ও অংশগ্রহণকারীদের গ্রেফতার করে। ইদলিবের এক অধিবাসী ফাইরাস বলেন, তাদের কাছে গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে ধর্মের বিরোধিতা। এরা হচ্ছে বিপ্লবের প্রথম শত্রু।
রামি আল হোমসি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেছেন। তিনি এখন আরো হাজার হাজার স্বদেশী উদ্বাস্তুর সাথে ইউরোপে বাস করছেন। তিনি দূর থেকে স¦দেশের দিকে লক্ষ্য রাখছেন।
তিনি মনে করেন, বাশারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এখন দুর্বল হয়ে গেছে। তবে অস্ত্র বিরতিকালে বিরোধীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ থেকে আবার শক্তি সঞ্চারিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি জানি যে বিপ্লবের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এখনো তা সফল করতে পারি। আমরা যারা শুরু করেছিলাম তারা যদি নাও পারি আমাদের পরের প্রজন্ম হয়ত এ লড়াই চালাবে। আমি আশা হারাইনি। সূত্র ডিপিএ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।