পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরদার সিরাজ, মন্দা মোকাবেলার জন্য বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে আলোচনা চলছে। মিডিয়ায়ও এ ব্যাপারে অনেক নিউজ-ভিউজ প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক মহামন্দার ঢেউ ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। কয়েক মাস যাবত আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থা চলবে, যতদিন বৈশ্বিক লকডাউন থাকবে। আর রেমিটেন্স পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ, বৈশ্বিক মহামন্দা ও জ্বালানি তেলের মূল্য রেকর্ড পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো ও তেল রফতানিনির্ভর দেশগুলো চরম অভিবাসী ও শরণার্থী বিরোধী হয়েছে। তারা ট্রাম্পের মতো ‘আমরা ফাস্ট’ নীতি গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে সুনামি চলছে বলে উল্লেখ করে গত ১০ মে জাতিসংঘের মহাসচিব এ থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবুও সেসব দেশ থেকে ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী স্ব স্ব দেশে ফেরত আসছে বাধ্য হয়ে। এর আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী ফেরত এসেছে। আরও বিভিন্ন দেশ প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে ফেরত আনার জন্য। এ প্রেক্ষিতে জানানো হয়েছে, লকডাউন উঠে গেলে তাদেরকে ফেরত আনা হবে। সেসব শ্রমিকের মোট সংখ্যা ১০ লাখের মতো বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। এখানেই শেষ নয়। এর বাইরে আরও বহু শ্রমিক বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসতে বাধ্য হবে। কারণ, তাদের কোনো কাজ নেই। মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা হয়েছে। সেখানে ধর-পাকড় চলছে। সেখানে ১২ লাখের মতো বাংলাদেশি আছে। বিশ্বের ১৬৯টি দেশে এক কোটির অধিক শ্রমিক রয়েছে আমাদের, যার ৭৫% রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, সেখানে অর্থনৈতিক মহাধস চলছে। তাই নতুন করে সেখানে শ্রমিক প্রেরণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। পশ্চিমা দেশগুলোতেও তাই। তাই নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে। কিন্তু মহামন্দার কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে। ফলে নতুন শ্রম বাজার খুঁজে পাওয়া কঠিন। অপরদিকে,দেশের গার্মেন্টের অবস্থা কী হবে তা এখনই বলা দূরহ। কারণ, আমাদের গার্মেন্ট রফতানির প্রধান বাজার পশ্চিমা দেশগুলো। মহামন্দার কারণে চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে তাদের। এটা যতদিন থাকবে, ততদিন তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে না। ফলে আমাদের গার্মেন্ট রফতানি সহজে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে কি-না সন্দেহ আছে। দেশের অন্য পণ্য রফতানির পরিমাণও খুব কম। তাও বন্ধ হয়ে গেছে বৈশ্বিক লকডাউনের কারণে।
দেশে প্রায় এক দশক যাবত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ খুব কম, জিডিপির এক শতাংশেরও নিচে। দেশীয় বেসরকারি বিনিয়োগও তেমন হচ্ছে না দীর্ঘদিন। সহসাই বৃদ্ধিও পাবে না মন্দার কারণে। তবে সরকারি বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে,যা মূলত: বিদেশি ঋণনির্ভর। উপরন্তু সে বিনিয়োগ হয়েছে প্রধানত অবকাঠামো নির্মাণে, যাতে সরাসরি কর্মসংস্থানের হার তেমন নেই। এটাও এখন স্থবির হয়ে পড়তে পারে বৈশ্বিক মন্দার জন্য। তাই প্রতি বছর যত লোক শ্রম বাজারে এসেছে, তত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি দেশে। ফলে বেকারত্ব সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মন্দার কারণে বেকারত্ব আরও বাড়বে। ব্যাংকের অবস্থা চরম নাজুক হয়ে আছে খেলাপি ঋণের ভারে। আমানতের হারে খেলাপির পরিমাণ বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। তেমনি আদায়ের অবস্থাও। তবুও যেটুকু আদায় হতো, এখন তাও হবে না মন্দার কারণে। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলো আরও ন্যূজ্ব হয়ে পড়েছে ৯-৬ সুদে। কারণ, নগণ্য সুদের কারণে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। যেটুকু আছে, তা থেকে সরকার ঋণ নিচ্ছে। ফলে বেসরকারি ঋণ প্রাপ্তি কমে গেছে। উপরন্তু করোনা মোকাবেলার জন্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার, যা দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। সর্বোপরি সরকার নির্দেশ দিয়েছে ২ মাস ব্যাংক ঋণের সুদ হিসাব করা যাবে না। তাতে আয় কমে যাবে ব্যাংকগুলোর। সবমিলে ব্যাংকগুলো মরণদশায় পড়েছে! তাই অনেক ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিছু ব্যাংক বেতন, কর্মচারী ও শাখা হ্রাস করে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। শেয়ার বাজারের অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে আছে দীর্ঘদিন যাবত। বহু চেষ্টা করেও চাঙ্গা করা যায়নি। কারণ, নতুন করে কেউ আসছে না এখানে। শেয়ার কেলেঙ্কারিদের শাস্তি না হওয়ায় শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে, যা সহজে ফিরে পাওয়া কঠিন। রাজস্ব আদায় বিশ্বে কেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যেও সর্বনিম্ন। বৃদ্ধি করার শত চেষ্টা করেও তেমন সাফল্য আসেনি। যেটুকু আদায় হতো, তাও থমকে গেছে করোনা সংকটে। তাই রাজস্ব আয় দিয়ে রাজস্ব ব্যয় মিটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে এখন।
এতসব নেতিবাচক খবরের মধ্যে কৃষি খাতের অবস্থা খুব ভালো। কয়েক বছর যাবত লাগাতর বাম্পার ফলন হচ্ছে সব ফসলের। এবারও হয়েছে। উপরন্তু এ বছর ধান উৎপাদনে একধাপ এগিয়ে বৈশ্বিক তৃতীয় হয়েছে বলে ইউএসডিএ’র সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে। দেশে খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। তাই এখন কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পই প্রধান সম্বল। এসবের উন্নয়ন করেই টিকে থাকতে হবে। কিন্তু সেটাও লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সম্প্রতি করা এক গবেষণা রিপোর্ট প্রণিধানযোগ্য। তাতে বলা হয়েছে, ‘দেশে মে মাস পর্যন্ত লকডাউন থাকলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতভিত্তিক এই গবেষণা করা হয়েছে। সে হিসাবে লকডাউনের কারণে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে কৃষিতে-২০০ কোটি, শিল্পে-১,১৩১ কোটি ও সেবা খাতে ২ হাজার কোটি টাকা করে। এই গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ও ঢাবির অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, লকডাউনের মেয়াদ বাড়লে ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। মে মাস শেষে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২,১৭,৮০০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের মোট জিডিপির প্রায় ৯%।’ ব্যবসায়িক নেতা একে আজাদও বলেছেন, ‘একটি করে দিন যাচ্ছে আর ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে লকডাউনের কারণে!’ তাই করোনা মোকাবেলার জন্য সরকার ৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ২৬০ কোটি ডলার ঋণ-অনুদান সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। অপরদিকে, এ বছর দেশের প্রবৃদ্ধির হার অনেক কমে যাবে বলে বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে। যেমন: বিশ্ব ব্যাংক বলেছে ৩%, আইএমএফ বলেছে ২% আর বিবিএস অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে বলেছে ৫.৫% প্রবৃদ্ধি হবে। মহাক্ষত সৃষ্টি হয়েছে পরবর্তী ৪ মাসে। সেটা কি পূর্ববর্তী ৮ মাসের সাথে মিলে গড়ে ৫.৫% হবে? তথাপিও দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, কভিড-১৯ মহামারিকালে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির ৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নবম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। এই হচ্ছে দেশের আর্থিক খাতের চিত্র। এখন দেখা যাক দেশের কালো টাকার চিত্র কী?
দেশে দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তবে এটা নতুন নয়। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই চলে আসছে দুর্নীতি। তখন এর পরিমাণ ছিল খুব কম। দুর্নীতির ব্যাপকতা শুরু হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে। রিলিফের কম্বল ও রেশন কার্ড দিয়ে যার যাত্রা শুরু।তাই বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আর কম্বল পেয়েছি ৮ কোটি। তবুও আমার কম্বল কই? মানুষ পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি!’ পরবর্তীতে দুর্নীতি বাড়তে বাড়তে বিএনপি সরকারের আমলে পরপর তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর বর্তমান সরকারের সময় আকাশচুম্বী হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু তাতেও বিন্দুমাত্র কমেনি! তাই দুর্নীতি নেই, দেশের এমন যায়গা খুঁজে পাওয়া দূরহ। দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আবশ্যক বলে ব্যাপক জনমত রয়েছে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? যে যায় লংকায়, সে হয় হনুমান। তাই দুদককে পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করা হয়নি। দুদক দিয়ে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যা’হোক, দেশে দুর্নীতি তথা কালো টাকার পরিমাণ কত তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। এ ব্যাপারে প্রকাশিত দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তির অভিমত প্রণিধানযোগ্য। জিএফআই রিপোর্ট-২০১৯ মতে, ‘২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৬,৩২৮ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫.৩০ লাখ কোটি টাকা। একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৯০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। পণ্য আমদানি ও রফতানি, হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন ও ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে এই পাচার হয়েছে। এভাবে টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।’ ইউএনডিপি রিপোর্ট এবং পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসেও দেশের টাকা পাচারের তথ্য এসেছে। সুইস ব্যাংকও প্রকাশ করেছে কোন দেশের লোকের কত টাকা আমানত আছে, যার মধ্যে অনেক বাংলাদেশির নাম আছে। দেশের মিডিয়া, বিভিন্ন মহল ও জাতীয় সংসদেও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে এ ব্যাপারে। ২০১৯ সালে প্রাক্তন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, এমপি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ১০ বছরে ৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।’ এই পাচারকৃত টাকায় কানাডায় বেগম পাড়া এবং মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে সেকেন্ড হোম করা হয়েছে বলেও পত্রিকায় প্রকাশ। এই পাচারকৃত অর্থের সবই দুর্নীতির টাকা। টিআই’র বৈশ্বিক দুর্নীতি সূচক-২০১৯ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪তম (নিম্নতম থেকে) স্কোর-২৬, গত বছর ছিল ১৩তম ও স্কোর-২৬। সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত একবার জাতীয় বাজেটের সময় বলেছিলেন, ‘দেশের জিডিপির ৬০% কালো টাকা। আগে পুকুর চুরি হতো এখন সাগর চুরি হয়’। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন-২০০৫ মতে, ‘২০০২-০৩ সালেও বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩৭.৭%’। গত বছরের ২৮ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় সরকারি একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত জানান, দেশে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ জিডিপির ৪২-৮০ শতাংশের মধ্যে। টাকার অংকে এর পরিমাণ কমপক্ষে ১৭.৫ লাখ কোটি টাকা, যা তিনটি জাতীয় বাজেটের সমান। আর পুঞ্জীভূত অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ ৩০-৪০ লাখ কোটি টাকার মতো, যা বর্তমান জিডিপির দ্বিগুণ’ বলে গত ১৯ এপ্রিল এক দৈনিকে প্রকাশ। স্মরণীয় যে, ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীদের তথ্য আছে বছর ভিত্তিক। তাতে দেখা যাবে গত ১০ বছরে এর সংখ্যা কত আর বাকী সময়ের কত? দ্বিতীয়ত বিবিএস রিপোর্টেও ধনী হওয়ার ঊর্ধ্বমুখিতা ও নিম্নমুখিতার পরিসংখ্যান আছে। তৃতীয়ত অতি দ্রæত ধনী হওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরা কি সকলেই সৎ উপার্জনকারী? নিশ্চয় নয়। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে তার কিছু স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে করোনার ত্রাণ ও রেশন কার্ড নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ক্যাসিনোর মতোই অনেক কেলেঙ্কারি বেরিয়ে আসবে! মোট কথা, দুর্নীতি ব্যাপকতর হয়েছে। তাতে প্রতি বছর কমপক্ষে ২-৩% প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জবাবদিহি না থাকার কারণেই এটা হয়েছে। আর জবাবদিহি না থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে, গণতন্ত্র কম, উন্নতি বেশি নীতি। আর এই কু-নীতির কারণেই উন্নতি বলতে মুষ্টিমেয় কিছু বাটপার রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছে আর সাধারণ মানুষ যে তিমিরে ছিল সেখানেই আছে। আর গণতন্ত্রের অবস্থা হয়েছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মতো! উল্লেখ্য যে, কালো টাকার সবই দুর্নীতির নয়। বৈধ অর্থও অপ্রদর্শিত থাকলে কালো টাকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
যা’হোক, কালো টাকার পরিমাণ যাই হোক, এখন সেই টাকা বিনা শর্তে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করছেন। তাদের অনেকেই এও বলছেন, ২০১৬ সালে ভারতে বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়ায় সেখানে ৯.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ইতোপূর্বে আমাদের দেশে দীর্ঘদিন যাবত কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশ্য, তাতে কঠিন শর্ত ছিল অনেক। তবুও এই সুযোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। অপরদিকে, জাতীয় সঞ্চয়পত্রেও বিপুল কালো টাকা প্রবেশ করেছিল। সেটা রোধ করার জন্য কয়েক মাস আগে জাতীয় সঞ্চয়পত্র খুলতে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্রে আমানতের পরিমাণ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু সেই টাকা কোথায় গেছে তার হদিস নেই। অনুমেয়, হয় বিলাসিতায় ব্যয় হয়েছে, না হয় গোপনে অলসভাবে রাখা হয়েছে, অথবা পাচার হয়েছে। অথচ এই অর্থ কালো টাকা হলেও তা দিয়ে সরকার উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে পারত। তাতে বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমতো।
করোনা মহামারি চলছে। এর শেষ কবে তা অজানা। কারণ, এটা শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ। পুনরায় ফিরে আসছে। চীনে তাই হয়েছে। সর্বোপরি হু সম্প্রতি বলেছে, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হয়তো কখনোই পৃথিবী থেকে চিরতরে যাবে না। এইচআইভি ভাইরাসের মতো কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী করোনা স্থানীয় ভাইরাস হয়ে যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে সব মানুষকে এটির সঙ্গে লড়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে। এদিকে, করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা খুব ফলদায়ক হিসাবে প্রমাণিত হয়নি বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, ইবোলার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে ৪০ বছর আর ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে ৮০ বছর লেগেছে। ১৮ বছরেও সার্সের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা যায়নি। উপরন্তু হুর মহাপরিচালক গত ১১ মে বলেছেন, ‘করোনার টিকা আসতে এখনো ১৬ মাস সময় লাগবে।’ অবশ্য বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো করোনার জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছে। এর আগে আরও ২৪ হাজার আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু এর সাথে করোনার ওষুধ আবিষ্কারের কোন সম্পর্ক নেই। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এই অবস্থায় প্রতীয়মান হয়, করোনার সাথে মিলে-মিশেই থাকতে হবে মানুষকে। আর যেসব ভাইরাস ও ব্যাধিকে মোকাবেলা করে বাঁচতে হচ্ছে মানুষকে, ঠিক তেমনিভাবে করোনাকেও মোকাবেলা করে থাকতে হবে। আর যদি করোনা মহামারি এখনই বন্ধ হয়ে যায়, তবুও এর দ্বারা গত ৪-৫ মাসে বিশ্বের যে ক্ষতি হয়েছে তা ভয়াবহ, যা পুষিয়ে নিতে অনেক সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে মানুষকে যুদ্ধ করতে হবে ক্ষুধা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে। এতে জয়ী হয়েই টিকে থাকতে হবে। নতুবা পরিণতি হবে মারাত্মক। তাই বিভিন্ন দেশ আর্থিক পুনর্গঠনে বিপুল অংকের কর্মসূচী ঘোষণা করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত ১২ মে ২০ লাখ কোটি রুপির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন (পূর্বে ঘোষিত প্রণোদনাসহ), যা সে দেশের জিডিপির ১০%। আমাদেরও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কর্মসূচী ঘোষণা করতে হবে। সেটা ভারতের মতো ২০ লাখ কোটি টাকার না হলেও অন্তত ৫ লাখ কোটি টাকার হতে হবে। কিন্তু দেশের আর্থিক অবস্থার যে দৈন্যদশা, তাতে বিষয়টি খুব কঠিন। তবুও গরীব মানুষকে বাঁচাতে তাই করতে হবে। কারণ, নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ এর ভাষায়, ‘অর্থনীতির চালিকাশক্তি গরীব মানুষ, ধনীরা নয়।’ উপরন্তু ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে হবে, যাতে বেকারত্ব শতভাগ দূর করতে না পারলেও অন্তত হ্রাস করা যায়। নতুবা তরুণরা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে, যা সামাল দেওয়া দূরহ হবে। তাই ইতোমধ্যেই বিডা বিশেষ বিবেচনায় বিনিয়োগের নতুন নীতি ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে। এই অবস্থায় কালো টাকার যদি কিয়দাংশও বিনিয়োগ হয় তাহলে দেশের কল্যাণ হবে। তবে কঠিন শর্ত থাকলে তা আগের মতোই বিনিয়োগ তেমন হবে না। তাই অন্তত দুই বছরের জন্য বিনা শর্তে তথা অতিরিক্ত কর আরোপ এবং এনবিআর ও দুদকের জবাবদিহিমুক্ত হিসাবে কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে আইনগতভাবে। তাহলে কালো টাকার কিছু হলেও বিনিয়োগ হবে। আর যেটুকু হবে তাতেই লাভ। কারণ, বিনিয়োগ করার সুযোগ না পেলে তো সেই টাকা গোপনেই থেকে যাবে অলসভাবে কিংবা পাচার হয়ে যাবে। তাতে দেশের বিন্দুমাত্র কাজে আসবে না। তাই বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া একদিক দিয়ে ভালো।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।