Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের যেসব দেশে রয়েছে পঙ্গপাল খাওয়ার চল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২০, ৫:৩০ পিএম

ভারতে এখন আতঙ্কের আরেক নাম পঙ্গপাল। ভারতে বলে শুধু নয়, মিশর, ইজরায়েল, আফ্রিকার দেশগুলিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঝোড়ো হাওয়ার মতো পঙ্গপালের ঝাঁক বিভীষিকা তৈরি করে। ক্ষেতের ফসল তছনছ করে, টন টন শস্য দানা সাবাড় করে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। তবে তফাৎটা হচ্ছে ভারতে পঙ্গপাল খাবার অভ্যাস তেমন তৈরি হয়নি, কিন্তু এশিয়ার বেশ কিছু দেশে পঙ্গপাল বেশ উপাদেয় খাবার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঙ্গপালের মধ্যে ভরপুর প্রোটিন রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৩-২৮ গ্রাম। পঙ্গপালের লার্ভায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন রয়েছে ১৪-১৮ গ্রাম। ডেসার্ট পঙ্গপালের প্রতি ১০০ গ্রামে ফ্যাট রয়েছে ১১.৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ২৮৬ মিলিগ্রাম। তাছাড়া ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। পঙ্গপাল রেঁধে খাওয়ার নান রকম রেসিপি আছে। মুচমুচে ভাজা করে, সিদ্ধ বা হাল্কা ভাপিয়ে পঙ্গপাল নাকি বেশ উপাদেয়। আবার শুকিয়ে রেখে পরে সেটা রান্না করে খাওয়ার অভ্যাসও আছে। ওই অনেকটা শুঁটকির মতো।

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্ব দিকে উত্তর কিভুর রাজধানী গোমা। রুক্ষ, আগ্নেয়গিরি ঘেরা এই শহরের সিংহভাগ দারিদ্রসীমার নীচে। খাদ্যাভাসে পোকাতেই এরা স্বচ্ছন্দ। বাজারে রীতিমতো পসরা সাজিয়ে পোকা কেনাবেচা চলে। ঝিঁঝিঁ, গঙ্গাফড়িং, মথের লার্ভা। তবে উপাদেয় ও সুস্বাদু পোকা হিসেবে পঙ্গপালের কদর একটু বেশি। প্রোটিনও ভরপুর এবং পুষ্টিও মেলে।

মধ্যপ্রাচ্যেও পঙ্গপাল খাওয়ার রীতি রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলিতে আবার খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে নানা রকমের পোকা। তার মধ্যে রয়েছে পঙ্গপালও।

ইয়েমেনিরা আবার সরকারি নিষেধ অমান্য করেই দিব্যি পঙ্গপাল রান্না করে খেয়ে চলেছে। মরক্কোতে তো পঙ্গপাল রান্নার বিশেষ রেসিপিও রয়েছে। আরব, মিশর, মরক্কোর বাজারে ভাল দামেই পঙ্গপাল কেনাবেচা চলে। তার রান্নারও অনেক ধরন আছে।

এই অমেরুদণ্ডী সন্ধিপদ প্রাণীর অনেক প্রজাতি রয়েছে। চেনা পরিচিত প্রজাতি হল ডেসার্ট লোকাস, যা উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির পঙ্গপালদের দেশ ঘোরার নেশা রয়েছে। মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এই পরিযায়ী পঙ্গপালরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ায়। ২০০৩-০৪ সালে এমনই লক্ষাধিক ডেসার্ট পঙ্গপালের ঝাঁকের কারণে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। মাইগ্রেটরি লোকাস্ট বা পরিযায়ী পঙ্গপালের এই প্রজাতির আবার কয়েকটি ছোট ছোট গোষ্ঠী আছে। তারা আফ্রিকা, এশিয়া, নিউজিল্যান্ডে চড়ে বেড়ায়। ২০১৩ সালে এমন পঙ্গপালের হানাকে বিধ্বংসী বলেছিল মাদাগাস্কার।

তবে এই পঙ্গপাল খাওয়ার অভ্যাসটা ঠিক কবে থেকে তৈরি হয়েছে তার সঠিক সাল, তারিখ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই পোকা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে, যার কিছুটা প্রয়োজনের তাগিদে আর বাকিটা কোনও না কোনওভাবেই স্থানীয় রীতি-রেওয়াজের মধ্যে ঢুকে গেছে। বাইবেলেও মধু দিয়ে পঙ্গপাল খাওয়ার কথা রয়েছে।

পোকা খাওয়ার অভ্যাসকে বলে এন্টোমোফ্যাগি। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ বিশ্বের নানা দেশের খাদ্যাভাসেই পোকা রয়েছে। সমীক্ষা বলছে ৮০ শতাংশ মানুষ ‘এন্টোমোফ্যাগাস’। হাজারেরও বেশি ধরনের পোকা রয়েছে তাদের খাবারের তালিকায়। মেক্সিকোতে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পোকার চল রয়েছে।

‘ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন’ এবং ‘ম্যাডিসন নেলসন ইনস্টিটিউট ফর এনভায়োরনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর গবেষকেরা জানিয়েছেন, কীট-পতঙ্গের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন-সহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। পাশাপাশি, এরা শরীরে বাসা বাধা ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াগুলিকে নষ্ট করে, রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। পোকার মধ্যে রয়েছে চিটিন নামে একপ্রকার ফাইবার যা সাধারণত ফল বা সব্জির ডায়েটারি ফাইবারের থেকে অনেক আলাদা। এই ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অন্ত্রে সাহায্যকারী ব্যকটিরিয়া ‘প্রোবায়োটিকস’ তৈরিতে সাহায্য করে, যেগুলি খাদ্যনালীতে বাসা বাঁধা ক্ষতিকর ব্যকটিরিয়াগুলিকে সমূলে বিনাশ করে। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ জায়গায় ‘ইনসেক্ট ইটিং কালচার’ শুরু হয়েছে। যেখানে পোকামাকড়ের তালিকায় রয়েছে, পিঁপড়া ছোট কীট বা পতঙ্গ রেশম মথ এবং অবশ্যই পঙ্গপাল। সূত্র: দ্য ওয়াল।



 

Show all comments
  • Humayun ৩০ মে, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    But not should eat like that kind of animals
    Total Reply(0) Reply
  • Dwijendra kumar Debnath ৩১ মে, ২০২০, ৯:৪৭ পিএম says : 0
    What about Chinese? Are they eating locust?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিস্ময়কর

২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ