Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিস্ময়কর আউটে বঞ্চনার কালিমা!

‘আম্পায়রদের অমার্জনীয় ভুল’

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকার স্বপ্নের পালে দারুণ হাওয়া দিচ্ছিল দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু। তবে হঠাৎই সব এলোমেলো। এবারও আম্পায়ারের একটি ভুল সিদ্ধান্ত পাল্টে দিল দৃশ্যপট। তাতে এক লহমায় স্বপ্নের আকাশ থেকে বাস্তবের কঠোর জমিনে ভ‚পাতিত বাংলাদেশ।
ঘটনা বাংরাদেশ ইনিংসের ১১তম ওভারে। সৌম্য সরকার আউট হওয়ার পর উইকেটে এসেই শাদাব খানের পঞ্চম বলটা ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু শটটা ঠিকভাবে খেলতে পারলেন না। বল সাকিবের ব্যাট ছুঁয়ে লাগল বুটে। পাকিস্তানের বোলার-ফিল্ডারদের আবেদন সাড়া দিয়ে অদ্ভুত, বিস্ময়কর, রহস্যজনকভাবে আম্পায়ার এলবিডবিøউ দিয়ে দিলেন সাকিবকে!
সাকিব সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। মাঠে তার শরীরিভাষাই বলে দিচ্ছিল, তিনি নিশ্চিত এলবিডবিøউ হননি। টেলিভিশন রিপ্লেতেও পরিষ্কার দেখা গেছে সাকিবের ব্যাট অতিক্রম করার সময় সেটি ছুঁয়ে গেছে শাদাবের বল। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে জিম্বাবুয়ের টিভি আম্পায়ার ল্যাংটন রুসেরে শেষ পর্যন্ত ফিল্ড আম্পায়ারের এলবিডবিøউর সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে মাঠেই বিস্ময় প্রকাশ করেন সাকিব। কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন বল তার ব্যাট ছুঁয়ে তবেই বুটে লেগেছে। ওদিকে আম্পায়ারের নাকি মনে হয়েছে বল ব্যাটে লাগেনি, সরাসরি বুটে লেগেছে। আল্ট্রা এজে যেটা দেখা গেছে সেটা ব্যাট এবং মাটির সংঘর্ষের কারণে। যদিও পরে টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে, সাকিবের ব্যাট মাটিতে স্পর্শই করেনি।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তবু ডাগআউটে ফিরে যান সাকিব। সেখানেও আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। অ্যাডিলেড ওভালের প্রেসবক্স ও কমেন্ট্রিবক্সেও বিস্ময়। বাংলাদেশের ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান তো কোনো রাখঢাক না রেখেই বলে দিয়েছেন, ব্যাট মাটির অনেক ওপরে ছিল। কাজেই ওটা ব্যাটের সঙ্গে মাটির সংঘর্ষ নয়। তিনি বুঝতে পারছেন না কেন সাকিবকে আউট দেওয়া হলো! বিস্মিত পাকিস্তানের সাংবাদিকেরাও। সাকিবের আউট নিয়ে এমন প্রশ্ন, বিস্ময়, সংশয় আরও অনেকেরই। আম্পায়ারদের ভুল হতেই পারে। হরহামেশা কত ভুলই তো দেখা যায়। তবে টিভি আম্পায়ারের এমন ভুল বিরল বটে।
খোঁজ নিতে গিয়ে ল্যাংটন রুসেরে লিখে গুগলে সার্চ দিলে যে লিংকগুলো সামনে আসে, সবই তার ভুলের খবর। কবে কোন ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে তিনি ভুল করেছেন, সেসবের তালিকা। গতকালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকান এই আম্পায়ার সম্পৃক্ত ছিলেন এই বিশ্বকাপেরই অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান ম্যাচের এক ভুলের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময় একটা ওভার ৫ বলেই শেষ করে দিয়েছিলেন তিনি ও পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম দার। রুসেরে এ রকম অনেক ভুল আগেও করেছেন, যে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন গতকাল টেলিভিশন আম্পায়ার হিসেবে সাকিবকে দেওয়া এলবিডবিøউ।
ম্যাচে এবিসি রেডিওর হয়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কার্ল হুপার। স্বগোতোক্তি করে বললেন, ‘হোয়াট ওয়াজ দ্যাট? সাকিবের এলবিডবিøউ সিদ্ধান্তটি কী ছিল...!’ ব্য্যাপারটি হজম করতে কিছুটা সময় নিয়ে ক্যারিবিয়ান জার্সিতে ১০২ টেস্ট ও ২২৭ ওয়ানডে খেলা অলরাউন্ডার হুপার বলে গেলেন, ‘শকিং...।’ হুপারের পাশের কক্ষেই টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল ব্রডকাস্টারের হয়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তিনিও জানালেন এই আউট নিয়ে মতামত। যদিও তার মন্তব্য কিছুটা সাবধানী। তবে যা বোঝাতে চাইলেন, তা ফুটে উঠল যথেষ্টই, ‘এটা... এটা বিতর্কিত বটে। সব ধরনের প্রযুক্তি ও রিপ্লে নিয়েও আসলে বলা এতটা কঠিন। তবে আল্ট্রা এজ দেখে মনে হয়েছে, বল যখন ব্যাটের পাশ দিয়ে গিয়েছে, একটা শব্দ হয়েছে। সে তো সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নিয়েছে, তাই না? আমি আসলে জানি না... যা দেখেছি, সেটিই কেবল বলতে পারি। তাকে হতাশ ও বিরক্ত মনে হয়েছে। তবে তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমি নিশ্চিত, এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। খেলার ধরনই এরকম।’
আরেক ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার ইয়ান স্মিথের মতামতও জানা গেল। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই কিপার ব্যাটসম্যান প্রশ্ন তুললেন টিভি আম্পায়ারের প্রক্রিয়াটা নিয়ে, ‘জানি না কী হলো... কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এটি হলো। তবে যে প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হোক না কেন, এর একটি ব্যাখ্যা থাকা উচিত।’ টুইটারে সাবেক অজি ক্রিকেটার ব্র্যাড হগ আম্পায়ারদের সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘টুর্নামেন্টে কিছু সন্দেহজনক সিদ্ধান্তের ছায়া পড়েছে। ব্যাট কি মাটিতে লেগেছে নাকি বলে?’ এমন বাজে সিদ্ধান্তের পর চুপ থাকতে পারেননি সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার আকাশ চোপড়াও। লিখেছেন, ‘সাকিবের ব্যাট একেবারেই মাটি স্পর্শ করেনি। শুধু ব্যাটের ছায়ায় ফোকাস করুন। একটি গজাল ছিল। বল ব্যাটে আঘাত করা ছাড়া আর কিছুই হতে পারত না। আম্পায়ারিংয়ের বাজে সিদ্ধান্তের শিকার বাংলাদেশ।’
এর আগে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও আম্পায়ারিং নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল বাংলাদেশের। ভারতের ‘ফেক ফিল্ডিং’ সত্তে¡ও ৫ রান না পাওয়া, বৃষ্টির পর দ্রæত খেলা শুরু করে দেওয়া; আপত্তি ছিল এসব নিয়ে। ভারতের বিপক্ষে ৫ রানের হারের পরও বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা বেঁচে থাকে। গতকাল অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের চমক জাগানো জয়ের পর তো বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটা হয়ে দাঁড়ায় অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনাল- যে জিতবে সেই সেমিফাইনালে। কিন্তু এই ম্যাচেও দুর্ভাগ্যের শিকার বাংলাদেশ, দুর্ভাগ্য সাকিবেরও।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়তো বড় কোনো আশা ছিল না বাংলাদেশের। তবু পর পর দুই ম্যাচে আম্পায়ারদের ‘ভুলে’র শিকার হওয়াটা অপ্রত্যাশিত। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ে তাই হারের যন্ত্রণার চেয়েও যেন বেশি হচ্ছে বঞ্চনার অনুভ‚তি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিস্ময়কর আউট
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ