পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত মাসাধিককাল ধরে দেশের মানুষ এক অন্যরকম পুলিশ প্রত্যক্ষ করছে। এ পুলিশ সজ্জন, সহৃদয়, মানবিক এবং বিপদাপদে প্রকৃত বন্ধু-স্বজনের মতো। এই করোনাকালে পুলিশের স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ যেন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। পুলিশ মানুষের বিশ্বস্থ বান্ধব, সেবক ও সাহায্যকারী, এটা আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ শুনে আসছি। কিন্তু পুলিশের এহেন রূপ আমরা কমই দেখেছি। পুলিশ একটি সেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। আইনশৃংখলা সুরক্ষা, মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও সহায়তা, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন এবং দেশজুড়ে অভয় পরিবেশ নিশ্চিত করাই পুলিশের উল্লেখযোগ্য প্রধান দায়িত্ব। এসব দায়িত্ব পালনে দুঃখজনক অপূর্ণতা ও ঘাটতি আমরা ইতোপূর্বে বরাবরই লক্ষ করেছি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের মধ্যে এ ধারণার জন্ম হয়েছে যে, পুলিশ কখনো মানুষ হবে না। বিস্ময়ের ব্যাপার, এই মাসাধিককালে আমরা ব্যতিক্রমই দেখতে পাচ্ছি। পুলিশ সম্পর্কে অভিযোগের কোনো অন্ত নেই। মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অসদাচারণ ছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, দখল, মাদক কারবার, ধর্ষণ ইত্যাদি এমন কোনো অপরাধ নেই, যার অভিযোগে পুলিশ অভিযুক্ত নয়। অথচ দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ ওঠেনি বললেই চলে। এই ব্যতিক্রম পুলিশের ভাব-মর্যাদাই বাড়ায়নি, মানুষের মধ্যে শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। অনেকেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কথা জানেন। এ ধরনের জনবান্ধব পুলিশ বিশ্বে আরও আছে। তারা জেন্টলম্যান পুলিশ হিসেবে খ্যাত। কত রকমভাবে পুলিশ জনবান্ধব হতে পারে, তার নজির তারা স্থাপন করেছে। আমাদের দেশের মানুষ তাদের মতো বান্ধব পুলিশ প্রত্যাশা করেছে। সে প্রত্যাশা তাদের পূর্ণ হয়নি। করোনাকালে পুলিশের হিতৈষি ভূমিকা থেকে নতুন আশাবাদ জাগ্রত হয়েছে।
আমাদের পুলিশও যে জনমুখী, জনহিতৈষি ও জনবান্ধব হতে পারে, সেই বিশ্বাস এখন অনেকটাই দৃঢ়মূল হয়েছে। এই সময়ে আইনশৃংখলা সন্তোষজনক এবং আগের চেয়ে অনেক ভালো। একই সময় করোনাসম্পর্কিত দায়িত্বও পুলিশকে পালন করতে হচ্ছে। এরকম প্রাণঘাতী মহামারী অতীতে দেখা যায়নি। পুলিশের করোনাসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন তাই সম্পূর্ণ নতুন। এ দায়িত্ব সাফল্য ও কৃতিত্বের সঙ্গেই পুলিশ পালন করছে। করোনাকেন্দ্রিক পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করা, সুরক্ষাসমগ্রী বিতরণ করা, চিকিৎসাবঞ্চিতদের থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঘরে থাকা মানুষের কাছে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছে দেয়া, কোয়ারেন্টাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকদের খুঁজে বের করা এবং লকডাউন এলাকায় মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়া করোনায় মৃতদের দাফনের ব্যবস্থায় সহায়তা করা ইত্যাদি। সারাদেশেই পুলিশের তরফে অসহায় ও নিরন্ন মানুষের জন্য যতটা সম্ভব খাদ্য বিতরণও করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, পুলিশ চেষ্টা করছে মানুষের পাশে থাকার। এখন সেটাই পুলিশের জন্য খুব জরুরি কাজ। এ মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো পুলিশ তার নিজের দায়িত্ব বলেই মনে করছে। বলাবাহুল্য, এ কারণে পুলিশ মানুষের এত কাছাকাছি আসতে সমর্থ হয়েছে, আপনজনে পরিণত হয়েছে। নতুন আইজিপি ড. বেনজীর আহমদকে এ উপলক্ষে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন, পুলিশকে মানুষের আশা-ভরসার জায়গা বানাতে চাই। এটাই যদি লক্ষ্য হয়, আমাদের স্থির বিশ্বাস, ভবিষ্যতে পুলিশ মানুষের আরো কাছাকাছি আসতে, আরো সহায়ক ও বান্ধব হতে পারবে।
এই ব্যতিক্রমী ভূমিকা, এই সেবামূলক মনোভাব ও আচরণের জন্য আমরা পুলিশকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। আমরা তো ব্যতিক্রমী পুলিশ, মানবিক পুলিশ, সেবক পুলিশ এবং সবক্ষেত্রে ভরসা করা যায়, এমন পুলিশই কামনা করি। পুলিশের এই আচরণ, ভূমিকা ও সেবা আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলেই আমরা আশা করি। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে বলা দরকার যে, পুলিশের মধ্যে সামান্য সংখ্যক সদস্য অমানবিক, দুর্নীতিবাজ, অপরাধপ্রবণ ও বেপরোয়া। তাদের কারণে গোটা পুলিশের বদনাম ও অখ্যাতি হয়। তাদের ব্যাপারে সতর্ক ও কঠোর হলেই পুলিশের কাক্সিক্ষত ভাবমর্যাদা ও সুনাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাকালে পুলিশ অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা। করোনাযুদ্ধে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করছে ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসাকর্মীরা। এর পরই পুলিশ। তারপর প্রশাসন, মিডিয়াকর্মী ও অন্যান্য। আমরা জানতে পেরেছি, করোনা প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ৫৮ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া কোয়ারেন্টানে রয়েছে ৬৩৩ জন এবং আইসোলেশনে আছে ৯ জন। যারা আক্রান্ত হয়েছে, যারা কোয়ারেন্টাইনে ও আইসোলেশনে আছে, আমরা তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। তাদের চিকিৎসা ও সেবার যাতে কোনো ত্রু টি না হয়, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত একজন ডাক্তার মৃত্যু বরণ করেছে এবং তার চিকিৎসায় ত্রু টি হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আর কোনো করোনাযোদ্ধার যাতে এরকম পরিণতি না হয়, সেটাই কাম্য। পুলিশসহ যারা জানবাজি রেখে দায়িত্ব পালন করছে তাদের প্রণোদনা দিতে হবে, সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।