পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। আর মাত্র ১৫ মাস পরেই এ সেতু যানবাহনের জন্য উন্মোচন হবে। রাজধানীর সঙ্গে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকার দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ। অর্থনৈতিক দিক থেকে অযুত সম্ভাবনা নিয়েও এ এলাকাটি পিছিয়ে রয়েছে দেশের বাদবাকি এলাকা থেকে। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সেতুর ওপর দিয়ে চলবে বাস-ট্রাক প্রাইভেট কারসহ সব যান্ত্রিক যানবাহন। চলবে ট্রেনও। রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় তখন যাতায়াত সহজতর হয়ে উঠবে। গড়ে লাগবে অর্ধেকেরও কম সময়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই সেতুর নির্মাণকাজের মূল অংশের ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। নদীশাসনের কাজও শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। সব মিলিয়ে অগ্রগতির পরিমাণ ৭৮ শতাংশ। কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে পদ্মাসেতুর কাজ।
পদ্মাসেতু নির্মাণ হচ্ছে ৪২টি পিয়ার বা পিলারের ওপর, যার মধ্যে ২৬ নম্বর পিয়ারটি ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে। এই পিয়ারের পাইলিং কাজ শেষ হওয়ায় এখন ভিত্তি বা বেস ক্যাপের কাজ চলছে। পদ্মাসেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে দ্রুতবেগে। বাড়বে জীবনযাত্রার মান। পদ্মার বুক চিরে সেতুর এক প্রান্ত ছুঁয়ে থাকবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, অন্য প্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরা। পদ্মার বুকে যে স্বপ্নের যাত্রা হয়েছিল তা এখন বাস্তবে রূপ দিতে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত হাজার শ্রমিক ঘাম ঝরাচ্ছেন। এ সেতুর ২৬টি স্প্যান ইতিমধ্যে বসে গেছে। যার মধ্য দিয়ে সেতুর অর্ধেকের বেশি দৃশ্যমান। বাকি আছে ১৫টি স্প্যান। সেতু সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, জুলাইয়ের মধ্যেই পিয়ারের ওপর সব স্প্যান বসানো সম্ভব হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সুফল হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হবে। কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনীতির জন্য বয়ে আনবে সুসংবাদ। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থবরাদ্দ করেও তা প্রত্যাহার করেছিল অসত্য অভিযোগে। তারপর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ বিশাল সেতু নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। এ চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশই যে জিতবে সেটি ক্রমেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে শেখ হাসিনাই মূল শক্তি। শেখ হাসিনার হাত দিয়েই পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে। এই সেতু প্রধানমন্ত্রীর সাহসের ফসল। এটা তার একক কৃতিত্ব। তার একক সিদ্ধান্তের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। কোনো একটি অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া কিন্তু এমনি এমনি লাগে না। এ জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মিত হচ্ছে এটা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের এ জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। পদ্মা সেতুতে প্রত্যক্ষভাবে হাজার খানেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে এই সেতু পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে।
সরকার যে উন্নয়ন কাজ করে তার উদ্দেশ্য থাকে উন্নয়নের জন্য রাস্তা বা পথ তৈরি করে দেয়া। সেই উন্নয়নের রাস্তাকে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা গড়ে তোলে। সেই সব প্রতিষ্ঠানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। পদ্মাসেতু তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদেরকে ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পদ্মাসেতু এককভাবে অর্থনেতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবে না। অন্যদের অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে মাত্র। তাই আমাদের পদ্মাসেতু নির্মাণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।