পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পদ্মাসেতুতে গাড়ি চলাচলের প্রথম দিনে ইতি-নেতি অনেক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। স্বপ্নের সেতু দেখতে অসংখ্য মানুষের ভিড় প্রত্যক্ষ করা গেছে। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের আধিক্য লক্ষ করা গেছে। মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, হৈ চৈ স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা আবেগের একটি জায়গা। সেতুদর্শনে সেই আবেগের প্রকাশ ঘটেছে। প্রথম দিনেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতকারীরা প্রত্যাশিত সুফল পেয়েছে। বরিশাল থেকে ঢাকা আসতে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। অথচ, সেতু চালুর আগে সাত-আট ঘণ্টা পার হয়ে যেতো। প্রথম সেতু দেখা এবং প্রথম দিনে সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়া অবিস্মরণীয় এক স্মৃতি ও ঘটনা। এটা মানুষকে বিশেষভাবে তাড়িত করেছে। এই সঙ্গে ওইদিন এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে দুই যুবক প্রাণ হারিয়েছে। বিআরটিসির একটি বাসের ধাক্কায় সেতুর টোলপ্লাজার দুটি ব্যারিয়ার ভেঙ্গে গেছে। এক যুবককে সেতুর স্টিল ব্যারিয়ারের নাট খুলতে দেখা গেছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। পরে যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেক যুবক সেতুতে মুত্রত্যাগ করে স্মরণীয় হতে চেষ্টা করে। তার এ অভব্য আচরণ নিন্দিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া সেতুতে শোয়া, বসা, দৌড়ানো, হাঁটা, রেলিংয়ে হেলান দেয়া, ছবি তোলা, গাড়ি রাখা ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। বলা যায়, নিয়ম ভাঙ্গার একটা প্রতিযোগিতা চলেছে। পদ্মাসেতু কেপিআইভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান, সংরক্ষিত এলাকা। এতে বসা, হাঁটাচলা, গাড়ি দাঁড় করানো এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ, এ সবই চলেছে বিনা বাধায় ও ফ্রি স্টাইলে। সেতুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে এরূপ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
পদ্মাসেতুর মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা যেরূপ নিখুঁত-নিñিদ্র হওয়ার কথা, বলা বাহুল্য, সেরূপ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। প্রথম দিনের ঘটনাবলি তারই প্রমাণ বহন করে। অকাম্য-অভব্য ঘটনার পাশাপাশি রীতি-নিয়ম ভাঙ্গার যে হিড়িক চলেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা প্রতিরোধ করতে পারেনি। এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই সেতুর নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। প্রথম দিন সেতু ও সেতু এলাকায় জনসমাগম, গাড়ি-ঘোড়ার সংখ্যা এবং মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে, এটা কর্তৃপক্ষের আন্দাজ করা এবং সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। উপযুক্ত সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব থাকার কারণেই সেতুতে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, টোলপ্লাজার ক্ষতি, নাট-বল্টু খোলা, মুত্রত্যাগ এবং রীতি-নিয়ম লংঘনের ঘটনাগুলো ঘটতে পেরেছে। সেতুর নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করার লক্ষ্যে সেতুর দুই পাড়ে দুটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অথচ, ওই দুই থানা-পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতাই লক্ষ করা যায়নি। জানা গেছে, থানা দুটির এখতিয়ারভুক্ত এলাকাই নাকি এখনো ঠিক করা হয়নি। সেতু কর্তৃপক্ষও উপযুক্ত প্রহরা, সম্পদ সুরক্ষা, গাড়ি ও লোকজন নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা ও পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে পারেনি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার গলদও দেখা গেছে। সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। আগেই এই নির্দেশনা দেয়া হলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও দুটি মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো না। বিভিন্ন তথ্য ও সমীক্ষায় এটা বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির একটা বড় কারণ বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা ও দুর্ঘটনা। গত ঈদের সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রায় ১০০ জন প্রাণ হারায়। এর পরেও বহুজন প্রাণ হারিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং মহাসড়কসমূহে মোটর সাইকেল চলাচল রহিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা তাদের মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। কোনো দাবি, প্রতিবাদ, প্রতিবন্ধকতাকে একেবারেই গ্রাহ্য করা যাবে না। প্রয়োজনে মোটরসাইকেল জব্দ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেতুতে গাড়ি থামানোর নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে। সেতু দেখার নামে নিয়ম লংঘনের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে।
পদ্মাসেতু জাতীয় স্থাপনা। এ সেতু আর পাঁচটা সেতুর মতো সেতু নয়। এটা দেশের দুই অংশের মধ্যে সংযোগসেতু। নানা বাধা-বিপত্তি এবং দেশি-বিদেশি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মাসেতু আমাদের জাতীয় গর্ব, অহং, সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক। দৈশিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এ সেতুর ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। এর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা সর্বাবস্থায় নিশ্চিত রাখতে হবে। এ সংক্রান্ত নিয়ম-রীতি-নির্দেশ কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কোনো ব্যতিক্রম, তা লোকজনের দিক থেকে হোক বা কর্তৃপক্ষের দিক থেকে হোক, হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণ যথেষ্ট সচেতন ও দায়িত্বশীল হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেতুর নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটবে। আমরা আশা করবো, প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে যথাযথ ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।