পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বহু আগেই রাজধানী ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী নগরীতে পরিণত হয়েছে। অসভ্য ও হতাশার নগরীর পাশাপাশি বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও নানা অব্যবস্থাপনার শীর্ষ তালিকায়ও স্থান পেয়েছে। একটি নগরীতে বসবাসের জন্য ন্যূনতম যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন, এই নগরীতে তার অভাব রয়েছে। রাজধানীর সুযোগ-সুবিধা কেমন হয়, এ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ নগরবাসীর তেমন হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই। অবৈধ, দখল, দূষণ, বিশৃঙ্খল যানবাহন, যানজট, পানিবদ্ধতা থেকে শুরু করে এমন কোনো সমস্যা নেই, যা রাজধানীতে দেখা যায় না। বিশ্বের অন্যান্য রাজধানীতে যা নেই বা যা দেখা যায় না সে সম্পর্কে জানতে বা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলে ওইসব নগরীর অধিবাসীদের ঢাকা আসতে হবে। ঢাকা শহর দেখে তাদের একটা কথাই মনে হতে পারে, প্রকৃতপক্ষেই এ শহর সভ্য নগরী হতে পারে না। এই যে বিশ্বে রাজধানীর এত দুর্নাম, এ নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। থাকলে যেসব অন্তহীন সমস্যা তা নিরসনে কিছুটা হলেও উদ্যোগ নিত। আমরা রাজধানীর উন্নয়ন এবং সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন মেয়াদী উদ্যোগ ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার কথা শুনি। তবে সেগুলো কবে বাস্তবায়ন শুরু হবে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ফলে দিনের পর দিন রাজধানীর বিরাজমান অব্যবস্থাপনা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, রাজধানী যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকুক?
কোনো দেশেরই রাজধানী সবার বসবাসের জন্য নয় কিংবা যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করার জন্যও নয়। এর নির্দিষ্ট বিধিবিধান বা শৃঙ্খলা থাকে। সম্ভবত ঢাকাই একমাত্র শহর যেখানে এই বিধিবিধানের কোনো বালাই নেই। এখানে যে যেমন খুশি চলছে, যেভাবে খুশি সেভাবে এর সম্প্রসারণ করছে। এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং রাজধানীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার জন্য যেসব কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তারাও কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। ফলে ঢাকা বাসযোগ্য ও সভ্য নগরীতে পরিণত হবে, এমনটা আশা করা যায় না। ঢাকার যানজট, পানিবদ্ধতা, দূষণ নতুন কিছু নয়। যানজটে অর্থনীতির কত ক্ষতি হয়, তার হিসাব বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যানজটে পড়ে কর্মজীবী মানুষের প্রতিদিন ৩২ লাখ শ্রমঘন্টা নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য বছরে এক লাখ কোটি টাকা। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এতে মানুষের শারিরীক ও মানসিক যে ক্ষতি হয়, তার মূল্যও অনেক। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যানজটের কারণে রাজধানীতে এখন গাড়ির গতি আর মানুষের হাঁটার গতি প্রায় সমান হয়ে পড়েছে। গাড়ির গতি ঘন্টায় ৭ কিলোমিটার, আর হাঁটার গতি ৫ কিলোমিটার। বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতায় কী দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়, তা সকলেরই জানা। রাজধানীর সুয়্যারেজ ব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে, আধা ঘন্টার মাঝারি বর্ষণে তা তলিয়ে যায়। এর কারণ, রাজধানীর সুয়্যারেজ ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীর শতকরা ৮০ ভাগ এলাকায় সুয়্যারেজ ব্যবস্থা নেই। এটা কল্পনাও করা যায় না। একটি আদর্শ ও বাসযোগ্য রাজধানীতে চলাচলের জন্য আয়তনের ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকায় রয়েছে ৭ ভাগ। এই অল্প রাস্তার মধ্য দিয়েই চলছে হাজার হাজার যানবাহন। তার ওপর, রয়েছে অব্যবস্থাপনা। চালকরা যেখানে সেখানে তাদের ইচ্ছামতো বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায়। প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন সড়ক দখল করে পার্কিং করে। এখন রাজধানীর যে পরিস্থিতি, তাতে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। অথচ এই ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও তার সিকিভাগ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদার শেষ না থাকলেও নগরীর শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের সেবা নগণ্য। অপ্রতুল এই সেবা ও ব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে যানবাহনের চালকরা কোনো শৃঙ্খলা মেনে চলছে না। এসব সমস্যার মধ্যে জীবনযাপনের সাথে জড়িয়ে থাকা নগরসেবার অন্যান্য সুবিধাও নগরবাসী পাচ্ছে না। এটি এমনই এক রাজধানী যেখানে নির্ধারিত দাম দিয়েও যথাযথ গ্যাস ও পানি পাওয়া যায় না। নগরবাসী নিয়মিত ট্যাক্স দিলেও তার সেবা পাওয়া দূরে থাক উল্টো প্রতিনিয়ত কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশ্বের এমন কোনো রাজধানী আছে কিনা যেখানে নগরবাসী সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, তা আমাদের জানা নেই।
অমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি এবং ক্রমেই উন্নত দেশে পরিণত হবো বলে বলছি। রাজধানীকে অবাসযোগ্য ও নিরন্তর সমস্যার মধ্যে রেখে এই উন্নতি কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি অথচ তার মান-মর্যাদার প্রতিফলন রাজধানীতে নেই এবং তা কবে কাক্সিক্ষত মানের হবে তার কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না। আমরা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এবং বিজয়ীদের কাছ থেকে রাজধানীকে বাসযোগ্য করার অসংখ্য প্রতিশ্রুতি পেয়ে থাকি। তাদের এ প্রতিশ্রুতির দশভাগের একভাগও যদি বাস্তবায়িত হতো, তাহলেও রাজধানীর উন্নতির কিছুটা চিত্র দেখা যেত। পরিতাপের বিষয়, নগরবাসীর সামনে মেয়রদ্বয়ের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না। তাদের ভোগান্তি হচ্ছে, প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব অনন্ত সমস্যা নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। অথচ রাজধানীর সেবাখাতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলেও তার কোনো ন্যূনতম সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থ খরচ হচ্ছে, সেবা পাওয়া যাচ্ছে না, এমন তুঘলোকি কান্ড বিশ্বের কোনো রাজধানীতে হওয়ার নজির নেই। আমরা মনে করি, রাজধানীর বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব পরিকল্পনা রয়েছে বা নেয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বস্তবায়ন করা দরকার। বিদ্যমান সমস্যা বাড়তে না দিয়ে সীমাবদ্ধ করে সমাধান করতে হবে। এতে কিছুটা হলেও নগরবাসী উপকৃত হবে। যুগের পর যুগ সমস্যা বহাল তবিয়তে থাকবে সমাধান হবে না, এটা হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।