Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত থেকে কেন গরু আসবে?

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

কুড়িগ্রামের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাকারবারিরা গরু পাচারের এক বর্বর পন্থা বেছে নিয়েছে। তা একদিক যেমন অমানবিক অন্যদিকে তেমনি মর্মান্তিক। ভারতের চোরাকারবারিরা রাতের অন্ধকার ও ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে কলাগাছ অথবা কাঁশের ভেলার সঙ্গে গরুর পা বেঁধে ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়। ওপার থেকে বাংলাদেশে ভাসতে ভাসতে আসা এসব গরুর মধ্যে শত শত গরু মারা যায় ব্রহ্মপুত্রের চরে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, একটি- দুটি নয় ১০-১২টি চরে এরকম শত শত গরু মরে পড়ে আছে। বেশি লাভের আসায় গত এক মাস ধরে ভারতীয় চোরাকারবারিরা ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ কালাইয়ের চর উজান থেকে বাংলাদেশী চোরাকারবারিদের উদ্দেশে ¯্রােতে ভাসিয়ে দেয় এসব গরু। কিছু গরু এপারের চোরাকারবারিরা উদ্ধার করতে পারলেও দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া গরুগুলো অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা যায়। মৃত এসব গরুই আটকে আছে বিভিন্ন চরে। ইনকিলাবের কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে গিয়ে অগণিত মৃত গরু দেখতে পেয়েছেন। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পর ভয়ে এই অভিনব অথচ নিষ্ঠুর উপায় বের করেছে চোরাকারবারিরা। অসংখ্য গরু এভাবে মরে পচে পড়ে থাকায় এলাকার পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা দায় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আগে গোসলসহ বিভিন্ন কাজে ব্রহ্মপুত্রের পানি ব্যবহার করা গেলেও এখন আর পাড়ে আসা যাচ্ছে না। পরিবেশ ও পানির এই মারাত্মক দূষণে রোগব্যাধি বিস্তারের আশংকা করা হচ্ছে। মৃত ও জীবিত পশু-পাখি থেকে বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ রোগব্যাধি হতে দেখা যাচ্ছে। সোয়াইনফ্লু এবং করোনভাইরাসের কারণ যে পশু, তাতে দ্বিমত নেই। কাজেই, সব ব্যাপারেই সতর্ক ও সাবধান হওয়া প্রয়োজন। অবিলম্বে চরগুলো থেকে মৃত গরু অপসারণ ও নিরাপদ স্থানে প্রথিত করা খুবই জরুরি। স্থানীয় প্রশাসনকে এই কাজটি দ্রুত করতে হবে। আর এ রকমভাবে গরুর চোরাচালান অবিলম্বে রহিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, গরুসহ গবাদিপশুসম্পদে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ভারত থেকে গরু চোরাচালান এখনো টিকে আছে। এক সময় ৫০ লাখের বেশি গরু ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে ও চোরাপথে বাংলাদেশে আসতো। তখন দেশ ভারতীয় গরুর ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল। ক’বছর আগে হঠাৎ করে ভারত সরকার গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে, যাতে চোরাপথেও গরু না আসতে পারে। একই সঙ্গে সেখানে গরু জবাই ও খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়। স্বাভাবিক কারণেই গরু আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বড় রকমের সংকটে পতিত হয়। এক বছর অসুবিধা হলেও অবশ্য পরবর্তী বছর থেকে সংকট কেটে যায়। বিশেষ উদ্যোগ ও উদ্যম গরুসহ গবাদিপশু লালন-পালন বেড়ে যায়। এখন শুধু ভারত কেন, কোনো দেশের গরুরই প্রয়োজন নেই বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাহিদার অতিরিক্ত গরু উৎপাদিত হচ্ছে এবং অচিরেই দেশ গরু বা গরুর গোশত রফতানিকারী দেশের কাতারে স্থান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, ভারত থেকে চোরাপথে গরু আসবে কেন? ভারত থেকে একটি গরু আসা মানে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়া। গরু চোরাচালান ডেড স্টপ করতে হবে। চোরাচালানিদের কঠোর হস্তে নিরন্ত করতে হবে। ভারতের ‘গোকান্ডের’র কথা কারো অজানা নেই। ক্ষমতাসীন বিজেপি গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। এর পেছনে মুসলমানদের ওপর এক হাত নেয়া যে বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল, সেটা বুঝা গেছে, গরু জবাই ও গরুর গোশত খাওয়ার অভিযোগে বেশ কিছু মুসলমানের হত্যা করার মধ্য দিয়ে। অনেকেরই জানা, ভারত গরুর গোশত রফতানিকারক প্রথম দুটি দেশের একটি। গরু জবাই নিষিদ্ধ হলে গরুর গোশত ও রফতানি হয় কীভাবে? গরুকে আরাধ্য মেনে মানুষ হত্যা করতে যাদের বাঁধে না, তারাই আবার গরুর গোশত রফতানি করে। আসলে এখানে অর্থই প্রধান বিবেচ্য। ভারতীয় গরু চোরাকারবারিদের বাংলাদেশে গরুর পা বেঁধে ভাসিয়ে দেয়ার পেছনেও অর্থই মূল লক্ষ্য। এখানেও কিন্তু গোহত্যার দায় থেকে যাচ্ছে।

গরুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ ও গোমৃত্যুর দায় বাংলাদেশের চোরাকারবারিরাও এড়িয়ে যেতে পারে না। ইসলাম পালিত পশুসহ জীবমাত্রের প্রতিই কোমল ও মানবিক আচরণ করতে বলেছে। সেদিক দিয়ে বিচার করলে চোরাকারবারের মতো একটা অবৈধ বা অপরাধের কাজ করার পাশাপাশি তারা প্রাণী হত্যার অপরাধেও দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে। বিষয়টি তাদের ভালোভাবে উপলব্ধি করা উচিৎ এবং স্বেচ্ছায় চোরাকারবার থেকে নিজেদের সরিয়ে আনা উচিৎ। ভারতীয় গরুর আমাদের প্রয়োজন নেই। অতএব, আমদানি বন্ধ। চোরাচালানও বন্ধ। গরু আমদানি ও চোরাচালান বারিত না হলে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন ও ব্যহত হবে। আমাদের খামারী, চাষী, পশুপালকরা তাদের গরু বা গবাদীপশুর ন্যায়সঙ্গত মূল্য পাবেনা। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নিরুৎসাহিত হবে, যা গবাদীপশুর ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিনষ্ট করবে। আমাদের মাইন্ড সেটটা এমন হতে হবে যে, কোনো অজুহাত বা উপলক্ষেই ভারত থেকে আমরা গরু আনবো না, আসতেও দেবো না। গরুর গোশতের দাম যদি কোনো কারণে আরো বেড়ে যায়, আমরা প্রতিজ্ঞা থেকে সরবো না। প্রয়োজনে কম খাবো কিংবা একেবারেই খাবো না। জনগণ পর্যায়ে এই মাইন্ড সেট গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো ক্ষেত্রে পরনির্ভরতা বেশি হয়ে গেলে জনস্বার্থ রক্ষা এবং বিপদ ও বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। পিঁয়াজের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে। ভারত আকস্মিকভাবে পিঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে পিঁয়াজের দামে যে উল্লস্ফন ঘটে, এখনো তা নমিত হয়নি। এও মনে রাখতে হবে, পরনির্ভরতা জাতীয় আত্মশ্লাঘার পরিপন্থী।



 

Show all comments
  • jack ali ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:১৬ পিএম says : 0
    Unfortunately our Bangladesi people do no love our country as such they are committing so many type of crime... When majority people are criminal the government become criminal as well.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন