পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দুই সিটিতে চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। যদিও এ নির্বাচন সারা দেশে হচ্ছে না, সীমাবদ্ধ রয়েছে শুধু রাজধানী ঢাকার দুই সিটির মধ্যে, তবুও এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র কতটা নিরাপদ হওয়ার সুযোগ পাবে, তা অনেকটা বোঝা যাবে। কারণ রাজধানী ঢাকা শুধুমাত্র একটি মহানগর নয়, এখানে বাস করেন দেশের সকল জেলার লোকজন পেশাগত দায়িত্ব পালন ও জীবিকার প্রয়োজনে। সুতরাং এ নির্বাচনকে গুরুত্বহীন হিসাবে মনে করবার কোনো বাস্তব সুযোগ নেই।
যদিও রাজধানী ঢাকার এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক সংগঠনই, তবুও বাস্তবতার নিরিখে সকলেই স্বীকার করবেন, মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। যদি দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ থাকতো, তাহলে দুই প্রধান দলের যে কোনটির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেরকম পরিবেশ ও পরিস্থিতি না থাকাতে এ নির্বাচনে শাসক দল তথা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আমরা এ ধরনের আশংকা পোষণ করি কেন? এ প্রশ্নের জবাবে শুধু এইটুকুই বলতে পারি বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণেই আমাদের মনে এ আশংকা যে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। দেশে যদি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কারণ দেশের মানুষ দেশের দুই প্রধান দলের সমর্থকে বিভক্ত। যেহেতু দেশের দুই প্রধান দলের একটি (আওয়ামী লীগ) দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে, তাই দেশের জনগণ অন্তর থেকে চায় যে এবার অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ক্ষমতায় আসুক।
আমরা এসব কথা বলছি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের জানা থাকার কথা যে, অতীতে দেখা গেছে দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা থাকায় দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরপর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ লাভ করেছে। দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের এটাও স্মরণ থাকার কথা যে, দেশের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থার ঠিক অব্যবহিত পূর্বে তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাময়িক ক্যু’র মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এবং বেশ কিছুদিন তাঁর স্বৈরশাসন চালিয়েছিলেন।
সে সময় দেশে পুনরায় গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই প্রধান দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একমত হয় যে, দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সে লক্ষ্যে দেশের দুই প্রধান দল একমত হয় যে, এই নির্বাচন হতে হবে দেশের সুপ্রীম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মনে থাকার কথা, ঐ ব্যবস্থাধীনে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনে সমর্থ হন দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং সংসদে বিরোধী দলের প্রধান নেতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান মন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষে প্রধানত বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দাবির মুখেই সংবিধান সংশোধন করে দেশের সকল জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়।
এই ব্যবস্থা যে বাংলাদেশের বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক তা বাস্তবে প্রমাণিত হয়। এই ব্যবস্থাধীনে দেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে বিজয়ী হয়ে দুই প্রধান দলই পরপর সরকার গঠনের সুযোগ লাভ করে।
কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দেশের সংবিধান পুনরায় সংশোধন করে নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান চালু করা হলে সেই যে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তার আর কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে না। সেই ধারা অনুসারেই এখন চলছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার, যার কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনাই অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না।
সেই নিরিখেই বলতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতা-ক্ষুধার আধিক্যের কারণে এই ভুল বা অন্যায়টুকু না করতো, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে অতীতের মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখতো তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখনও বিপন্ন হতো না।
কিন্তু দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ অতীতে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র অক্ষুন্ন রাখার জন্য যে সমঝোতায এসেছিল তা থেকে সরে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা অস্বীকার করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তন করায় তাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে অনুকূল জনমত থাকার পরও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। ফলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অদূর ভবিষ্যতে পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এবার উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান দেশ ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে। আগেই বলে রাখছি বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থা এক নয়। বাংলাদেশে যেভাবে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে, ভারতে ঠিক সেরূপে নয়। ভারতের পরিস্থিতি ভিন্ন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে হামলা-মামলার মধ্যে চাপে রেখে তাদের স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতে তেমনটি হয়নি। সেখানে চলছে উৎকট মুসলিম-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতা।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অতীতে এক সময় তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটের মুখ্য মন্ত্রী থাকাকালে মুসলিম বিরোধী গণহত্যায় নেতৃত্বদানের মাধ্যমে ‘গুজরাটের কশাই’ নামে কুখ্যাতি লাভ করেন।
এককালের সেই ‘গুজরাটের কশাই’ নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতে দীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী মুসলমানদের জীবন বিপন্ন করে তোলা।
ভারতে বর্তমানে চলছে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় মেয়াদ। প্রথম মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারণাকালে নরেন্দ্র মোদীর নিজ দল বিজেপির সমর্থক কর্মীরা প্রকাশ্যে জনগণের কাছে এই যুক্তিতে পুনরায় তাকে ক্ষমতায় বসানোর আবেদন করতে লজ্জা বোধ করেননি যে, ভারতে মুসলমানদের দুর্বল ও নিশ্চিহ্ন করতে হলে নরেন্দ্র মোদীকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় পর নরেন্দ্র মোদী তার সমর্থক কর্মীদের অভিলাষ পূরণে সর্ব প্রথম যে কাজটি করেন তা হলো ভারতের একমাত্র মুসলিম-প্রধান রাজ্য কাশ্মীরের জন্য অতীতের দেয়া বিশেষ স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে নিয়ে কাশ্মীরকে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং সেখানে সেনাবাহিনী বাহিনী পাঠিয়ে কাশ্মীরের মুসলমানদের ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন প্রভৃতির মাধ্যমে জীবন বিপন্ন করে তোলা।
শুধু কাশ্মীরে নয়, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলছে নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতন। এসব নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন সব মুসলমান, যারা যুগ যুগ ধরে ভারতে বসবাস করে আসছেন। এর ফলে ভারত থেকে এখন নির্যাতিত মুসলমানদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এসব নির্যাতনের ফলে দীর্ঘকাল ভারতে বসবাসকারী সত্তর বছর বয়সী একজন মুসলমানকে সম্প্রতি বলতে শোনা গেছে, সত্তর বছর বয়সে এখন বুঝতে পারছি, ভারত মুসলমানদের জন্য বসবাসের উপযুক্ত জায়গা নয়।
শুধু ভারতের অভ্যন্তরে বসবাসকারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমানুষিক হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি অমানবিক আচরণ নয়, ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা ভারত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করেন, তাদেরকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মাধ্যমে হত্যা, অপহরণ প্রভৃতি অন্যায় আচরণও বহু গুণে বেড়ে গেছে ভারতের বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে।
ঢাকার অন্যতম বাংলা দৈনিক সমকাল এর গত ২৬ জানুয়ারি রবিবার সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় ভারতের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার খবর দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যার প্রধান শিরোনাম ছিল: ‘সীমান্ত আতঙ্ক আর কতকাল’? উপশিরোনাম ছিল: ‘হত্যা বন্ধে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই’।
এই সংবাদ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে: ১০ বছরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে প্রাণহানি হয়েছে মোট ৩৩২ বাংলাদেশি নাগরিকের। এ সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটুকু বলেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেছেন যে, ‘আশা করি বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে গুরুত্ব দেবে ভারত। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মতো এইটুকু বলেই তাঁর দাঁয়িত্ব শেষ করেছেন যে ‘সীমান্ত হত্যা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ কী প্রকারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা তিনিও পরিষ্কার করে বলেননি।
ভারত যে এই ব্যাপারে মোটেই আন্তরিক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় দৈনিক ইনকিলাব এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে, যার শিরোনাম ছিল: ‘পতাকা বৈঠকে সাড়া দেয়নি বিএসএফ’। বিএসএফ সম্পর্কিত আরেকটি খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাবে যার শিরোনাম ছিল: বাংলাভাষীদের (বাংলাদেশী অভিযোগে) ঠেলে দিতে তৎপর বিএসএফ।’
এসব ঘটনা প্রমাণ করে ভারত শুধু শত শত বছর ধরে ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের চরম নির্যাতনের শিকার করতেই তৎপর নয়, ভারতের বাংলাভাষাভাষী নাগরিকদের বাংলাদেশি অভিযোগে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতেও সংকল্পবন্ধ।
এসবের পরও যদি বাংলাদেশের কোনো কোনো নেতা (যেমন ওবায়দুল কাদের) বলেন ভারত আমাদের প্রকৃত বন্ধু দেশ, তাহলে তাঁকে প্রশ্ন করতে হয়, ভারতের নেতাদের সুদৃষ্টি আকর্ষণে ভারতকে আর কতটা তোয়াজ করতে হবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।