চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুসলিমবিশ্বের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠী বা সংস্কৃতির অনবরত একটি যুদ্ধ চলছেই। ইউরোপে মুসলিম বসনিয়া ও কসবোর সঙ্গে খৃস্টান সার্ভদের ২ বছরব্যাপী একটি যুদ্ধ শেষ হলো। অবশ্য এ যুদ্ধে খৃস্টান অধ্যুষিত দেশ আমেরিকা ও ইউরোপ মুসলিমদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে। আর সে কারণেই দুই বছরে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আমেরিকা যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়লে যুদ্ধ শেষ হতে বহু বছর লেগে যেতো হয়তো। এশিয়া ও ইউরোপের সীমান্তে আরমেনিয়ানরা মুসলিম আজারিজদের কচুকাঁটা করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ভারতীয় সেনাবাহিনি কাশ্মিরের মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের নির্বিচারে হত্যা করছে বলে মুসলিমরা দীর্ঘদিন যাবত অভিযোগ করে আসছে। গুজরাতে মুসলিমহত্যা ও উত্তরপ্রদেশে অযোদ্ধায় মুসলিমদের বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে হিন্দুদের মন্দির বানানো ও ক্রমাগত ইসরাইল ও প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ ও আমেরিকানদের ইসরাইলকে নিঃশর্ত সমর্থন দান, এসব ঘটনাকে এক করে লন্ডনের বিশ্ব মুসলিমউম্মাহ বলেনÑ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে সমস্ত বিশ্বই যুদ্ধ করে মুসলিমদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে।’ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল হান্টিংটন মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর চিন্তাচেতনা ও এই ছোট ছোট যুদ্ধ ও জিহাদি আন্দোলনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে সঠিকভাবেই মূল্যায়ন করেছেনÑ‘আজকের বিশ্বে বিরোধ কোনো ব্যক্তি বা কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্য রাষ্ট্রের বিরোধ নয়, বরং এক সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির।’ মিস্টার হান্টিংটন এটাকে পষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ নামে আখ্যায়িত করেছেন। ১৯৯৩ সালে মিস্টার হান্টিংটন ঋড়ৎবরমহ অভভধরৎং ম্যাগাজিনে পষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হং প্রবন্ধে তার বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্বব্যাপী এক বির্তকের অবতারণা করেছেন। যখন ‘হামাস’ বা প্যালেস্টাইনের উগ্রবাদী ইসলামি সংগঠন আমেরিকা বা যেকোনো পশ্চিমা দেশের সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করার ফতোয়া দেয় অথবা তাদের জিম্মি করে, তখন তাকে যুদ্ধ বলেই ধরে নিতে হবে। পশ্চিমা দেশের নাগরিকরা ‘হামাস’ বা তাদের কার্যকলাপকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলে থাকে এবং ৯৫% সাধারণ মানুষ তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। অপরপক্ষে মুসলিম জনগোষ্ঠীর (বিশেষকরে আরব জনগোষ্ঠীর) ৯৫% জনতা যখন এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে সমর্থন করে ও মুক্তিযুদ্ধ বলে দাবি করে, তখন তাকে কি বলা হবে? মুক্তিযুদ্ধ নাকি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ? উত্তর অতি সহজ। এটা ‘পার্সপেক্টিভ’ বা দৃষ্টিকোণের আওতাভুক্ত। যদি পশ্চিমা দেশের নাগরিক হন, তাহলে এটা হবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। আর যদি কোনো মুসলিম দেশের নাগরিক হন, তাহলে এটা প্যালেস্টাইনিদের মুক্তিযুদ্ধ বলে মনে করবেন। মুসলিমদের মাঝে ইদানিং এই ভাবের উদয় হয়েছে, পশ্চিমা খৃস্টানদের সঙ্গে তাদের বিগত দিনের ফেলে আসা ‘ক্রুসেড’ আবার নতুন করে চালু হয়েছে। আর এটার ভিত্তিতেই মিস্টার হান্টিংটন তার পষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ থিওরির অবতারণা করেছেন মাত্র এক দশক আগে। যেকোনো সাধারণ মুসলিমই আমেরিকাবিরোধী। কেননা আমেরিকা প্যালেস্টাইন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন করে থাকে। ১০০ জন অনারবি মুসলিম লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদের ৫০ জন বছরে দু’বার মাত্র নামাজ পড়েন। আর তা হচ্ছে ঈদের নামাজ। বাদ বাকি অর্ধেক কখনও নামাজ পড়েননি ও স্থানীয় মসজিদ কোথায়, তাও ঠিকমতো জানেন না। তারা সকলেই মনে করেন আমেরিকা তাদের শত্রæ। কেননা আমেরিকা প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ও ইসরাইলের পক্ষে। অপরপক্ষে ১০০ জন আমেরিকার সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের বয়স চল্লিশোর্ধ এবং তারা কখনও ভোট দেননি, তাদের ধারণা, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী; মুসলিমরা ইসরাইলের মতো গণতান্ত্রিক সরকারকে ধ্বংস করতে চায় ও যেকোনো আমেরিকান নাগরিককে হত্যা করতে চায়। এটাকে কি বলবেন? এই পরস্পরবিরোধী দুই সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী মুখোমুখি ঈষধংয ড়ভ ঈরারষরুধঃরড়হ-এর ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে লন্ডনের - One of the commonest prophecies of the mid-1990 is that the Muslim world is heading for a fight with other parts of the world that do not share its religion-political opinions: above all, worry nervous Europeans, a fight with Europe. On current evidence, this is by no means impossible.
অনেকেই পষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ-এর প্রশ্নে অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরোধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। ল্যাটিন আমেরিকার সংস্কৃতি মূলত ঙৎঃযড়ফড়ী ঈযৎরংঃরধহ সংস্কৃতি। এরা রক্ষণশীল ও মৌলবাদি খৃস্টান। আর অপরপক্ষে আমেরিকাসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ চৎড়ঃবংঃধহঃ খৃস্টান। কিন্তু সংস্কৃতিগত ছোটখাটো বিরোধ থাকলেও পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকার পষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ বলতে যা বোঝায়, তা নেই। এবার যদি চীন ও জাপানের সংস্কৃতির কথায় আসা যায়, তাহলে দেখা যাবে জাপান ও চীনের সংস্কৃতি পশ্চিমা উদার সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আর এটা ধর্মীয়, সামাজিক এমন কি অর্থনীতিগতভাবেও সম্পূর্ণ আলাদা, তবুও পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে দৃশ্যত কোনো পরারষরুধঃরড়হ-এর পষধংয নেই। ভারতের কথায় যদি আসা যায়, তাহলে দেখা যাবে ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতির কোনো বিরোধ পরিলক্ষিত হয় না। অথচ পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় মুসলিম, পাকিস্তানের মুসলিম ও বাংলাদেশের মুসলিমদের একটি পষধংয ড়ভ পরারষরুধঃরড়হ আছেই। পরারষরুধঃরড়হ এর এই বিরোধ প্রসঙ্গে ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ পত্রিকা লিখেছে- clash of civilization Av‡QB| civilization Gi GB we‡iva cÖm‡½ The Economist cwÎKv wj‡L‡QÑ As a general thesis, this may be true enough; but, of the eight civilizations that Mr. Huntington lists, four or five do not really fit his definition. Latin America is not fundamentally different from the western culture that brought it into being, as both parts of its name suggest. The same can be said, with little more hesitation, about the Slavs of the Orthodox Christian tradition, who are admittedly different from the Protestant and Catholic West but probably not enough to be called a separate civilization. With one more degree of hesitation, that also applies to Japan and its connection with the Chinese culture to its west. The culture of India’s Hindus is indeed sui generis, but Hinduism is not—and probably never will be—a player on the world stage. And Africa, as Mr. Huntington himself seems to admit, is not really in this league.
গত ২৫ বছরে আরব ও মুসলিমবর্জিত দেশগুলি জ্ঞানবিজ্ঞানে বিশেষকরে অর্থনীতিতে অনেক অনেক দূর এগিয়েছে। জিডিপি বেড়েছে বহুগুণ। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মান বেড়েছে বহুগুণ। যদি এশিয়ার কথা ধরি, তাহলে দেখতে পাই এশিয়ার অমুসলিম দেশগুলি বিশেষকরে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশগুলি অর্থনীতিতে বহু উন্নতিসাধন করেছে। অপরপক্ষে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান গত ২৫ বছরে তুলনামূলক অর্থনৈতিক উন্নতি বলতে গেলে শূন্যের খাতায়। এবার আসা যাক গাল্ফ রাষ্ট্রের কথায়। ১৯৮০ সালে গাল্ফ দেশগুলি তেল বিক্রি করে যে আয় করতো, এখন সে আয় কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৮ সালে সৌদিআরব তেল বিক্রি করে আয় করেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। আর খরচ করেছে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, সৌদিআরবের বাজেট ঘাটতি ১৩ বিলিয়ন ডলার। গাল্ফ রাষ্ট্রসমূহে কোনো পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কর্মকাÐ না থাকায় এবং দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সম্পদের সঠিক তথ্য জনগণের কাছে না থাকায় সাধারণ জনগণ (বিশেষকরে ২৫ বছরের নিচের যুবকদের) রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিনামূল্যে সুযোগ-সুবিধে পাওয়ার আকাঙ্খা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। কিন্তু আর্থিক কারণে রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধে দেওয়ার ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে সমাজে একটি বাড়তি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়াও মুসলিম আইনে ট্যাক্স দেওয়ার বিধান না থাকায় সরকারের আয় ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে। একদিকে সরকারের আয় কমছে, অন্যদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহঃরঃষবসবহঃ ঢ়ৎড়মৎধস খরচ ক্রমেই বাড়ছে। সৌদিআরবের বহঃরঃষবসবহঃ ঢ়ৎড়মৎধস এতো বেড়েছে যে, বাজেটের ৬০% ভাগেরও বেশি খরচ হচ্ছে সে খাতে। কারণ সরকারকে নাগরিকদের বৈদ্যুতিক বিল, পানির বিল, কোনো কোনো ক্ষেত্রে টেলিফোন বিল ও বাসা ভাড়ার সুযোগ-সুবিধে দিতে হয়। পশ্চিমা দেশগুলির নাগরিকগণ যে নাগরিক সুবিধেগুলি ভোগ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, সেগুলি গাল্ফ দেশের নাগরিকগণ বিনামূল্যে বসে বসে পাচ্ছেন। ফলে নাগরিকদের মাঝে একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে, সে সুবিধেগুলি রাষ্ট্র তাদের সরবরাহ করতে বাধ্য। এই বহঃরঃষবসবহঃ ঢ়ৎড়মৎধস এর সংস্কৃতির কারণে গাল্ফ রাষ্ট্রগুলির বহঃরঃষবসবহঃ ঢ়ৎড়মৎধস বন্ধ করা মূলত অসম্ভব। কাজেই অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, আগামী ২০ বছরে মধ্যে গাল্ফ রাষ্ট্রগুলি কেবল বহঃরঃষবসবহঃ ঢ়ৎড়মৎধস-এর কারণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির পর্যায়ে চলে আসবে। মুসলিম দেশসমূহ দিনদিন গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছে। এর ফলে গোটা মুসলিম কমিউনিটি এক লজ্জাজনক অবস্থায় পড়েছে। তাই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে পরাজিত মুসলিম সংস্কৃতি তাদের পরাজয়ের গÐি ঢাকার জন্য ধর্মের আশ্রয় নিচ্ছে এবং পশ্চাদমুখী ১৪০০ শতাব্দ সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর পশ্চিমাবিশ্ব উন্নততর প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের মানোন্নত করছে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জিডিপি বাড়াচ্ছে। আর মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। আর এই সামাজিক অস্থিরতা ক্রমাগতভাবে পষধংয ড়ভ ঈরারষরুধঃরড়হ-এর জন্ম দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।