Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলিম জাগরণে আব্বাস উদ্দীন

জোবায়ের আলী জুয়েল | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

আব্বাস উদ্দীন বাংলার লোক সঙ্গীতের এক প্রবাদ পুরুষের নাম। গায়ক আব্বাস উদ্দীন আহমদের জন্ম কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার অর্ন্তগত বলরামপুর গ্রামে। তিনি জন্মগ্রহন করেন ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর। বাবার নাম মোহাম্মদ জাফর আলী। কোচবিহার জেলার একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ও জোতদার ছিলেন। মা’ হিরামন নেসা।
আব্বাস উদ্দীন আহমদ শৈশব কাল থেকেই তীক্ষ্ম বুদ্ধি ও মেধা সম্পন্ন ছিলেন। লেখাপাড়ায় তিনি খুবই ভাল ছাত্র ছিলেন।
কোচবিহারের বলরামপুর প্রাইমারি স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতে খড়ি। পঞ্চম শ্রেণীতে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তুফান গঞ্জে অধ্যয়ন কালে স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন।
আব্বাস উদ্দীন আহমদ ১৯২০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন তুফান গঞ্জ হাই স্কুল থেকে। ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজে। কৃতিত্বের সাথে আই,এ পাশ করার পর তিনি বি, এ পড়তে আসেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে এবং পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে তিনি এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি দিন লেখাপাড়ার সুযোগ পাননাই। এরপর তিনি বি, এ ভর্তি হন কোচবিহার কলেজে। কিন্তু এখানে বি, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন নাই।
কলকাতা মহানগরীতে বিশের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করেন সংগ্রামী শিল্পী জীবন। বাংলাদেশের মুসলমানের হৃদয়ে পৌছানোর ছিল সে সময় দুটি পথ। তার একটি তাদের মনের কথা এ দেশের লোকগীতি, অপরটি তাদের প্রাণের কথা ইসলামী গান। আব্বাস উদ্দীন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সুকৌশলে বেছে নিয়েছিলেন এই দুটি পথ। বাংলা গানের ইতিহাসে নজরুল ও আব্বাসউদ্দীন এ দুটি নাম যেদিন যুক্ত হলো সেদিন থেকে সঙ্গীতে অনুপস্থিত বাঙ্গালি মুসলমানের দীনতা ঘুচলো। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট এর পর তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন। চাকরী নিয়েছিলেন পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে।
কোচবিহারের এক অনুষ্ঠানে আব্বাস উদ্দীনের গান শুনে কাজী নজরুল ইসলাম বিমোহিত হয়েছিলেন। তাকে তিনি কলকাতায় আসার আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন।
আব্বাস উদ্দীন আহমদ মাত্র ২৩ বছর বয়সে কলকাতায় গ্রামোফন কোম্পানীতে দুটি আধুনিক গান রেকর্ড করেছিলেন বিমল দাশ গুপ্তের সহায়তায়।
এরপর আব্বাস উদ্দীন আহমদ কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এ সময় কাজী নজরুল ইসলামের গভীর সান্নিধ্যে আসেন আব্বাস উদ্দীন। কাজী নজরুল ইসলামের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগীতায় আব্বাস উদ্দীনের কন্ঠে ইসলামী গানের পাশাপাশি একাধিক ভাওয়াইয়া গানের রেকর্ড হয়েছিল।
নজরুল গান লিখছেন, সূর দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দীনের বলিষ্ঠ দরদী কন্ঠে সে গান রেকর্ড, জনসভা ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে বাংলা দেশের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছে। ভাওয়াইয়া গানে বাংলা দেশের মানুষের অন্তর আবহমান কাল হতে হয়েছে সমৃদ্ধ। শিল্পী আব্বাস উদ্দীন ভাওয়াইয়া গান কে জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি ভাওয়াইয়া গানকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত মানুষের মুখ থেকে তুলে এনে শহরের শিক্ষিত মানুষের ড্রইংরুমে জায়গা করে দিয়েছিলেন। ভাওয়াইয়া গানকে যারা গ্রামের অভব্য শ্রেণীর গান বলে ঘৃণা করতেন তারাও গোপনে তাদের ড্রইং রুমে বসে বিমূগ্ধ হয়ে শুনতেন আব্বাস উদ্দীন আহমদের মধূঝরা কন্ঠের ভাওয়াইয়া।
আব্বাস উদ্দীন আহমদের কন্ঠে গীত গ্রামোফন কোম্পানীতে তাঁর বহুগানের রেকর্ড এর সন্ধান পাওয়া গেছে এর মধ্যে ৮৪টি ইসলামী গান, পল্লীগীতি ৫৮টি, ভাওয়াইয়া ৩৭টি, কাব্যগীতি ৩১টি এবং তাঁর আধুনিক গানের সংখ্যাও অজস্র। এমনকি ইসলামী গানকে তিনি কন্ঠে ধারণ করেছিলেন বলেই তৎকালীন মুসলিম রেঁনেসার সূত্রপাত হয়েছিল। যে মুসলমানরা গান কে হারাম বলে কানে আঙ্গুল দিতেন, তারাই পরবর্তীতে আব্বাস উদ্দীনের কন্ঠে অবাক বিস্ময়ে শুনতেন ‘মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ ‘ত্রি ভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়’ প্রভৃতি বিখ্যাত ইসলামী গান। পরবর্তীতে নজরুলের লেখা ও সূর করা রোজা, নামাজ, হজ্ব, যাকাত, শবেবরাত, ঈদ, ফাতেহা, নাতে রসূল, ইসলামী গজল প্রভৃতি অনেক কন্ঠ দিয়েছিলেন আব্বাস উদ্দীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলিম জাগরণে আব্বাস উদ্দীন
আরও পড়ুন