পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়ক-মহাসড়কের মাঝে যানবাহনের অবৈধ ইউটার্ন মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে। যে কোনো গাড়ি চলমান সড়কে হঠাৎ করেই ইউটার্ন নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে যানবাহনের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করছে। গত সপ্তাহে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক যুগ্মপরিচালক তার দুই মেয়েসহ নিহত হন; তার কারণ এই ইউটার্ন বা সড়কে গাড়ি ঘোরানো। একটি বিশাল লরি ঘোরানোর সময় যুগ্মপরিচালকের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতেই তিনিসহ তার দুই মেয়ে নিহত এবং তার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে গুরুতর আহত হন। সমৃদ্ধ একটি পরিবার নিমেষে শেষ হয়ে যায়। এ ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে রয়েছে সড়ক-মহাসড়কের অবৈধ ইউটার্নগুলো। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অসংখ্য অবৈধ ইউটার্ন রয়েছে। দীর্ঘ এই পথে সত্তর থেকে আশিটি ইউটার্ন রয়েছে এবং তা দিয়ে যানবাহন ঘোরানো হচ্ছে। এর ফলে একদিকে সড়ক-মহাসড়কের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থকছে। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই নয়, দেশের প্রায় সব সড়ক-মহাসড়কে এই অবৈধ ইউটার্ন রয়েছে। অথচ এ নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে হাইওয়ে পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
মহাসড়কের যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার কোনো কিছুই আমাদের দেশের মহাসড়কে দেখা যায় না। মহাসড়ক বলতে যা বোঝায় তা হতে হয় বাধামুক্ত ও মসৃণ। এর সাথে অন্য কোনো সংযোগ সড়ক যুক্ত হবে না। যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে হবে অনেকটা একরৈখিক। কেবল গুরুত্বপূর্ণ নগর বা স্থান ছাড়া এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহাসড়ক এভাবেই নির্মিত হয়েছে। আমাদের দেশের মহাসড়কের এমনই দশা যে এর নির্মাণ প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার সাধারণ সড়কের মতো করা হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে একটানা দ্রæত গতিতে যানবাহন চালিয়ে যাওয়ার জো নেই। কিছুদূর না যেতেই ইউটার্ন। ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি থমকে যাচ্ছে। এমনকি সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা, পার্কিং, বাজার, বাসস্ট্যান্ড এবং যখন-তখন গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো মহাসড়কের বৈশিষ্ট্যকে ব্যাহত করছে। এসব কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষের অমূল্য প্রাণ চলে যাচ্ছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বছরের পর বছর ধরেই আলোচনা চলছে। এর রাশ টেনে ধরার জন্য আইন-কানুন প্রণয়ন থেকে শুরু করে অনেক ব্যবস্থার কথা শোনা যায়। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমার ক্ষেত্রে কোনোই প্রভাব পড়ছে না। বরং দিন দিন বেড়ে চলেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২১৯টি। এতে নিহত হয়েছে ৪৬২৮ জন। আহত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি। এ পরিসংখ্যান যে দৃশ্যমান বা জ্ঞাত দুর্ঘটনার চিত্র, তা বলা বাহুল্য। এর বাইরে আরও অসংখ্য দুর্ঘটনা অজ্ঞাত অবস্থায় রয়েছে, যা পরিসংখ্যানে ঠাঁই পায়নি। সড়কে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, তার সব কারণই চিহ্নিত হয়েছে এবং এসব সমাধানের উপায়ও বাতলে দেয়া হয়েছে। এসব কারণের মধ্যে যন্ত্র চালিত যানের চেয়ে এগুলোর পরিচালকদের আচরণই মূখ্য। যারা যানবাহন চালায় তাদের একটি শ্রেণী হাইওয়েতে উঠলেই যেন উড়তে শুরু করে। সড়ক-মহাসড়কের নিয়ম-কানুন আর তখন মনে থাকে না। তখনই কারো কারো মনে পড়ে যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়। অবশ্য সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার সাথে যারা থাকে তাদের মধ্যেও দৃশ্যমান ত্রæটি-বিচ্যুতি রয়েছে। সাধারণত সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের নির্দিষ্ট গতিসীমা রয়েছে। সড়কের কোথায়, কোন স্থানে, কত গতিতে যানবাহন চলবে তা নির্দিষ্ট করা ছাড়াও সড়ক সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন রয়েছে। দেখা যায়, এসব নিয়ম-কানুনের কোনো কিছুই যথাযথভাবে সড়ক ব্যবহারকারীরা মেনে চলে না। এসব দেখভাল করার জন্য যে হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে, তারাও যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। তাদের বিরুদ্ধে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি এবং অযথা হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ পুরনো হলেও এর প্রতিকার হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এখন দুর্ঘটনার নতুন উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউটার্ন। এর ব্যবহারেও কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। কোনো কোনো স্থানে ইউটার্ন নিষিদ্ধ থাকলেও সেখান দিয়ে অবাধে ইউটার্ন নেয়া হচ্ছে। এমন অনিয়ম হলে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ছাড়া কমার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
সাধারণত সড়কের একপাশ থেকে অপর পাশে যাওয়ার জন্য ইউটার্ন ব্যবহার করা হয়। তবে তা নির্দিষ্ট, নিরাপদ ও উপযুক্ত স্থানেই সৃষ্টি করা হয়। দুঃখের বিষয়, সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যথাযথভাবে ইউটার্ন সৃষ্টি এবং তার ব্যবহারের উপযোগিতার ধারণা অনেকের মধ্যেই দেখা যায় না। যেসব স্থানে ইউটার্ন সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ লেখা রয়েছে এবং কেন তা নিষিদ্ধ, এ সম্পর্কে কোনো দিক নির্দেশনা পরিলক্ষিত হয় না। অনেক স্থানে ইউটার্নের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও তা সৃষ্টি করা হয়েছে। একটি মহাসড়কে যদি অসংখ্য ইউটার্ন সৃষ্টি করা হয়, তবে তার গতি হ্রাস পাওয়া এবং দুর্ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। তার ওপর অবৈধ পার্কিং, বাস স্ট্যান্ড, বাজার মহাসড়কের বিষফোঁড়া হয়ে রয়েছে। আমরা মনে করি, দেশের মহাসড়কগুলোকে এর বৈশিষ্ট্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। মহাসড়ককে নির্বাধ, গতিশীল ও মসৃণ করতে হবে। যেমন খুশি তেমন ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। অবাঞ্চিত ইউটার্ন নিষিদ্ধ করে প্রয়োজনীয় স্থানে তা বলবৎ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।