নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শ্মশ্রুমন্ডিত চেহারা, মুখে লেগে আছে প্রশান্তির আভা। প্রাণবন্ত হাসিতে নিপাট ভদ্রলোক হাশিম আমলা নিজের নান্দনিক ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি আলোচনায় আসেন প্রবল ধার্মিকতার জন্যও। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান এই তারকা খেলা আর ধর্ম দুটোকে রাখছেন আলাদা জায়গায়। ধর্মচর্চার শৃঙ্খলা খেলোয়াড়ি জীবনে কাজে লাগে কিনা, এমন কোন ভাবনা মাথায়ও না আসলেও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন খেলাধুলার পরিপুরক বলেই মনে করেন তিনি।
জাতীয় দলের হয়ে একাধিকবার বাংলাদেশে খেলে গেছেন আমলা। বিপিএল খেলতে এলেন এবারই প্রথম। খুলনা টাইগার্সের খেলতে আসা আমলা গতকাল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনের ফাঁকে জানালেন নিজের জীবন দর্শন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী আমলা নিজের ধর্মচর্চাকে পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবন থেকে রাখেন আলাদা। প্রতিটি জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার নিবেদন দিয়ে যাপিত করতে চান জীবন, ‘এই প্রশ্ন আমার অনেক অনেকবার শুনতে হয়েছে। ইসলামের মূল ভিত্তিগুলো খুব সাধারণ এবং আপনাদের প্রায় সবাই সেটি জানে। আমার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ব্যাখ্যা করাও কঠিন। এটি রুদ্ধ নয়, তবে সবকিছুই সংযুক্ত। অনেকে বলে ইসলাম কেমন, ক্রিকেটে আপনার ধর্ম কিভাবে সাহায্য করে। আমার কাছে প্রশ্নটি অদ্ভূত লাগে, কারণ সবাই নিজের জীবন সর্বোচ্চ পছন্দ করে। বাকি সবকিছু নিজের মতোই চলে। ক্রিকেটে সাহায্য করা বা না করার ব্যাপার এটি নয়। ব্যাপারটি হলো, নিজের বিশ্বাসের জায়গায় আমরা কতটা নিবেদন দিতে পারছি। নিজের ক্যারিয়ার বা জীবনে সেরাটা করতে পারাই আসল। ধর্ম ক্রিকেটে সহায়তা করে বা করে না, এরকম কিছু আমার ভাবনায়ও আসে না। ক্রিকেটে সাহায্য করতে পারে বলেই ইসলামের নানা কিছু করতে হবে, এরকম ভাবি না। সেটি বরং কপটতা হবে। আমি নিজের বিশ্বাসের চর্চা করার চেষ্টা করি সর্বোচ্চ, বাকি সবকিছু নিজের মতোই চলে।’
৩৬ বছর বয়সী আমলা গত বিশ্বকাপের পরই ছেড়ে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর প্রায় দেড়যুগ তিন সংস্ক্ররণেই মাতিয়েছেন। বিশেষ করে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসাই ছিলেন তিনি।
ফিটনেসে ঘাটতি নেই, মানসিকভাবেও চাঙা। তার যে সামর্থ্য, হাশিম আমলা অনায়াসে আরও বছর দুয়েক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতেই পারতেন। কিন্তু বিশ্বকাপের পর এই ব্যাটসম্যান অনুভব করলেন তার সময়টা শেষ। আচমকাই তাই দিয়ে দেন অবসরের ঘোষণা। তার মতে সব কিছুরই একটা সময় আছে। তিনি থামতে চেয়েছিলেন এমন ভালো সময়েই।
অবসর পরবর্তী এই দক্ষিণ আফ্রিকান খেলে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন ফ্রেঞ্চাইজি লিগ। ক্যারিয়ারের এই ধাপও রোমাঞ্চ দিচ্ছে তাকে। আগস্টে অবসর নেওয়ার পর আমলা খেলেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-১০ লিগে, এবার ফাঁকা সময় পেয়ে বিপিএল খেলতে চলে এসেছেন বাংলাদেশে। আজ খুলনা টাইগার্সের হয়ে সিলেটেই শুরু হবে আমলার বিপিএল ক্যারিয়ার। দেড় যুগের ক্যারিয়ারে নয় হাজারের উপর টেস্ট রান, আট হাজার ছাড়ানো ওয়ানডে রান। নান্দনিক ব্যাটিং পসরার পাশাপাশি ছিলেন ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি। দশ হাজার টেস্ট রান তো নাগালের মধ্যেই ছিল। চাইলে কি আরও কদিন চালিয়ে যাওয়া যেত না? আমলা পরিসংখ্যান সরিয়ে এক্ষেত্রে শুনেছেন নিজের মনের কথা, ‘নাহ, আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই একটা সময় এটি অনুভব করে। বিশ্বকাপের পর আমি কিছুটা সময় নিয়েছি, কাছের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শরীর যদিও বলছে, আরও কয়েক বছর খেলতে পারি, মানসিকভাবেও চাঙা আছি, কিন্তু সব কিছুরই একটা সময় আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে ভালো সময় কাটিয়েছি। তবে একটা পর্যায়ে থামতেই হয়। আমি কৃতজ্ঞ যে এত সময় ধরে খেলতে পেরেছি এবং ভালো সময়েই থামতে চেয়েছি।’
ওয়ানডেতে দ্রুততম ছয় হাজার ও সাত হাজার রানের রেকর্ড আছে, দ্বিতীয় দ্রুততম আট হাজার রানের রেকর্ড আমলার। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সাদা পোশাকেও বেশি ঝলমল করতেন আমলা। নয় হাজারের উপর রান করেছেন, ২৮ সেঞ্চুরি আছে। সেসব পেছনে পড়ে আছে। নেই কোন খেদ, ‘না, টেস্ট ক্রিকেট মিস করছি না। যেটা বললাম যে একটা পর্যায়ে উপলব্ধি হয় যে যথেষ্ট খেলেছি। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই খুশি, খুবই কৃতজ্ঞ। খেলাটায় আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটি ভাগাভাগি করতে সবসময়ই উপভোগ করি। এখন সময় নতুন অধ্যায়ের।’
খুলনা টাইগার্সে আমলা পাচ্ছে স্বদেশী রবি ফ্রাইলিঙ্ক আর রাইলি রুশোকে, দলে আছেন অনেক দিনের চেনা মুশফিকুর রহিম। তাদের সঙ্গে বিপিএলে সময়টা দারুণ উপভোগ্য হওয়ার আশায় ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, ‘আমি উপভোগ করছি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই রোমাঞ্চকর। যতটা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি সেজন্য কৃতজ্ঞ। এখন আরেকটি অধ্যায়। বিপিএল খেলার সুযোগ পেয়েছি। এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততার কারণে সেভাবে সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এবার সময় এসেছে এবং এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।