Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমলারা দিকনির্দেশনা জানতে মুখিয়ে

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিব সভা আজ তিস্তা সেচ প্রকল্পের ২৭ কোটি টাকার জ্বালানি ও ১২ কোটি টাকার সার সাশ্রয়

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

তিন বছর পর আজ শুরু হচ্ছে সচিব পর্যায়ের বৈঠক। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে আগামী দিনের অনেকগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে হলে জানা গেছে। একই সঙ্গে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তি তথা সচিবদের আগামী এক বছর সরকার পরিচালনার দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক হলেও সরাসরি সভা হয়নি। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য সচিবদের সভায় গুরুত্বপূর্ণ কী কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী সচিবদের কী দিক-নির্দেশনা দেন সেটা জানার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, সচিব বৈঠকে খাদ্য উৎপাদন, জ্বালানি, সার, তিস্তা সেচ প্রকল্পসহ অনেকগুলো বিষয় এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভূপরিস্থ সেচের পানি সরবরাহ করে ২৭ কোটি টাকার জ্বালানি এবং ১২ কোটি টাকার সার সাশ্রয় হয়েছে। তিস্তা সেচপ্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে এক লাখের বেশি হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। ফলে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বাড়বে। একইসঙ্গে অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। যার বর্তমান বাজারমূল্য এক হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ৮৬ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আজ সচিব সভায় উখাপন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অধিকতর উন্নীতকরণ, পরিবেশ তথা জীব বৈচিত্র রক্ষা ও প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত ৪৫ লাখ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধমে করা হবে সেটি বলা হয়েছে। তা সচিব সভায় উখাপন করা হচ্ছে।

আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২৭ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় নিকার এবং দুপুর ১টায় সচিব সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুই নদীর নামেই হচ্ছে নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ। এর মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে পদ্মা বিভাগ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে হবে মেঘনা বিভাগ নির্ধারণ করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলে জানা গেছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ে সচিব সভার কার্যপত্রে বলা হয়,দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১ অনুযায়ী খাদ্য-পানি ও বিদ্যুৎ বিবেচনা করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৩৯টি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৬ দশমিক ৪৯ লাখ হেক্টর এলাকায় সেচ এলাকা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল ও ডোবা পুন:খনন প্রথম পর্যায়ে ১০৯টি ছোট নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি ডোবা পুন:খননের পর তা প্রাকৃতিক পানি ক্যানেল হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

চলতি আমন মৌসুমে তিস্তা সেচ ক্যানেল প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভূপরিস্থ সেচের পানি সরবরাহ করে প্রায় ২৭ কোটি টাকার জ্বালানি এবং ১২ কোটি টাকার সার সাশ্রয় হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া ১৪১টি হাওরে ২৯০৬ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪ দশমিক ৯৩ লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য জমির ফসল প্রতিবছর আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া প্রতিবছর প্রকল্পের পূর্ব অবস্থা অপেক্ষা ১১১ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিকটন অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন হচ্ছে।তবে কৃষকদের দাবি, নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধার। শুকনো মৌসুমেও স্বচ্ছ পানি প্রবাহের সাথে আছড়ে পড়ে ঢেউ। শ্যালো মেশিনের বদলে ক্যানেলে পানিতে কৃষিকাজে ব্যস্ত চাষীরা। তিস্তা সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বড় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার দাবি এ অঞ্চলের মানুষের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদ পযর্ন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি নীলফামরী জেলার সদর, সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, ডিমলা ও জলঢাকা, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিবন্দর এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া, সদর, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে বাস্তবায়িত হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ ইনকিলাবকে বলেন, চলতি আমন মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভূপরিস্থ সেচের পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে প্রায় ২৭ কোটি টাকার জ্বালানি এবং ১২ কোটি টাকার সার সাশ্রয় হয়েছে। ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। ১৪১টি হাওরে ২৯০৬ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪ দশমিক ৯৩ লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য জমির ফসল প্রতিবছর আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে। সেচ প্রকল্প সব সময় দেশের জন্য ইতিবাচক। তিস্তা ব্যারেজের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বছরে হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের পানির অভাবে প্রকট শস্যসংকট একটি চিরন্তন সমস্যা। শুষ্ক মৌসুমে তো বটেই আমন মৌসুমেও খরা দেখা দেয়। একমাত্র তিস্তা ছাড়া অন্যান্য ছোট নদী এবং খালে পানি প্রবাহ খুবই কম। তাই তিস্তা নদীতে ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ব্রিটিশ আমলেই সৃষ্টি হয়। লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গুড্ডিমারী ইউনিয়নের পিত্তিফোটা মৌজার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যারেজ নির্মিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ৭৯ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বাড়ানো হয়। তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে বুড়িমারী স্থল বন্দরের কার্যকারিতাও বাড়ে। তিস্তা ব্যারেজের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের ফলে লালমনিরহাট জেলা থেকে রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমেছে। এই ব্যারেজের উজানে তিস্তা নদীর বামতীর বরাবর অ্যাফ্লোক্স বাঁধ ঠ্যাংঝারা বর্ডার (ভারত) পর্যন্ত বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ফলে এই অংশের সাত কিলোমিটার নদী ভাঙন হতে মুক্তি পেয়েছে। উজানের বালুময় জমি উর্বর ফসলি জমিতে পরিবর্তিত হওয়ায় কৃষিতে ব্যপক উন্নতি হয়েছে। ৬ হাজার হেক্টর ভূমি নদী গর্ভ হতে উদ্ধার পূর্বক ফসলি জমিতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে। তিস্তা ব্যরেজ নির্মাণের ফলে অনাবাদি জমি জমি ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। নতুন প্রকল্পের ফলে বছরে আরো হাজার কোটি টাকার ফসল মিলবে।

উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের পানির অভাবে প্রকট শস্যসংকট একটি চিরন্তন সমস্যা। শুষ্ক মৌসুমে তো বটেই আমন মৌসুমেও খরা দেখা দেয়। একমাত্র তিস্তা ছাড়া অন্যান্য ছোট নদী এবং খালে পানি প্রবাহ খুবই কম। তাই তিস্তায় ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ব্রিটিশ আমলেই সৃষ্টি হয়। প্রকল্পের আওতায় ৭৭১ কিলোমিটার খাল ও সেচ কাঠামো শক্তিশালীকরণ, ৭২ কিলোমিটার সেচ পাইপ স্থাপন, ১ হাজার ৮৫টি সেচ কাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এছাড়া ২৭টি কালভার্ট, চারটি সেতু, ৬০টি নিকাশ কাঠামো, ২০টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ৬টি রেগুলেটর মেরামত করা হবে। এর পাশাপাশি ২৭০ হেক্টর জলাশয় পুনঃখনন, সাড়ে ৯ কিলোমিটার পরিদর্শন রাস্তা ও ফুটপাত স্লাব ও ৬৮ কিলোমিটার পরিদর্শন রাস্তা মেরামত করা হবে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গুড্ডিমারী ইউনিয়নের পিত্তিফোটা মৌজার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যারেজ নির্মিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ৭৯ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বাড়ানো হয়। এছাড়া তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কার্যকারিতাও বাড়ে।

তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগের ফলে লালমনিরহাট জেলা থেকে রাজধানীসহ দেশের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমেছে। এই ব্যারেজের উজানে তিস্তার বামতীর বরাবর অ্যাফ্লোক্স বাঁধ ঠ্যাংঝারা বর্ডার (ভারত) পর্যন্ত বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ফলে এই অংশের সাত কিলোমিটার নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। উজানের বালুময় জমি উর্বর ফসলি জমিতে পরিবর্তিত হওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ৬ হাজার হেক্টর ভূমি নদীগর্ভ থেকে উদ্ধার পূর্বক ফসলি জমিতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমলারা দিকনির্দেশনা জানতে মুখিয়ে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ