Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৬ বছর ধামাচাপা সচিব প্রশান্তের দুর্নীতি অনুসন্ধান

দুদকের আমলা-প্রীতি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ১২:১৪ এএম

প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তা (সচিব) প্রশান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি চাকরিতে থেকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা,‘একটি বাড়ি-একটি খামার’ প্রকল্প এবং সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে নানামাত্রিক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানও শুরু হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে সংস্থাটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তার বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানটি ধামা-চাপা দিয়ে রাখেন। সেই সঙ্গে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকেও বদলি করেন বরিশাল। একের পর এক পরিবর্তন করা করা হয় কর্মকর্তা। ফলশ্রুতিতে ৬ বছরেও দাখিল হয়নি প্রতিবেদন। বহুল বিতর্কিত সচিব প্রশান্ত কুমার রায় মূলত, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়ায় দীর্ঘ দিন চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সূত্রটি জানায়, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে প্রকল্প-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ড. প্রশান্ত কুমার রায় বেনামী সদস্যদের নামে ঋণ দেখিয়ে ৬৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেনÑ মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৪০ হাজার ১২৩টি সমিতি গঠন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬৮টি পরিবারের মধ্যে ঋণ হিসেবে ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়।

প্রকল্পের চক্রাকালে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ৫০৮ কোটি টাকা। অনাদায়ী পড়ে আছে ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। প্রশান্ত কুমার রায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের অলস অর্থ নিয়মবহির্ভূতভাবে কম সুদে দু’টি বেসরকারি ব্যাংকে রেখে আর্থিক সুবিধা নেন। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা হয়েও তিনি ‘ডেনিম পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ ও ‘ডেনিম এক্সপোর্ট প্রসেসিং লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যবসায়ীর কাছে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির চুক্তি করেন এবং তার কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।

এসব দুর্নীতি অনুসন্ধানে নিয়োগ দেয়া হয় দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. জুলফিকার আলীকে। তিনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেন। অনুসন্ধান অনেকটা গুছিয়ে আনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে বদলি করা হয় দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে। দায়িত্ব দেয়া হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা পরিচালক (উপ-সচিব) কাজী শফিকুল আলমকে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় এই কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমারের সম্পদ বিবরণী তলব করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে অনুসন্ধান আর এগোয়নি। পরে অনুসন্ধানে নিয়োগ দেয়া হয় উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। তিনি ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর প্রশান্ত কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছেÑ মর্মে দুদকে বিবরণী দাখিল করেন। পরে আবারও বন্ধ হয়ে যায় অনুসন্ধান। মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সম্প্রতি প্রশান্তর দুর্নীতি অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বদলি করা হয় রংপুর। দায়িত্ব দেয়া হয় উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমানকে।

এ কর্মকর্তা অনুসন্ধানের বর্তমান পর্যায়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রশান্ত কুমার রায় এবং তার ঘনিষ্ট দুই নারীর আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে ৭টি ব্যাংকের কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দেন তিনি।

তবে অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় প্রশান্তু কুমার রায় কয়েকবছর আগেই স্বাভাবিক অবসরে চলে যান। জানা গেছে, তার অনুরোধেই অবসর গ্রহণ পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি তৎকালীন কমিশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদকের আমলা-প্রীতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ