Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমলাদের লাগাম টেনে ধরুন

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২২, ১২:১৮ এএম

সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের যে নির্দেশনা দিয়েছে, সরকারি আমলারাই তা থোড়াই কেয়ার করছে। সরকারি অফিসে আগের মতোই বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। ফ্যান, বাতি, এসি চলছে সর্বক্ষণ। সরকারি অফিসের খরচপত্র অর্থাৎ কেনাকাটায় কৃচ্ছ্রতার লেশমাত্র নেই। একইভাবে জ্বালানি ব্যবহার ও ব্যয় এতটুকু কমেনি। ‘জ্বালানি ব্যয়ে আমলারা বেপরোয়া’, শীর্ষক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে আমলাদের যথেচ্ছ গাড়ি ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তারা বাজার-সদাই, ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেয়া, স্ত্রীর শপিং ইত্যাদি কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাদের ড্রাইভাররা গাড়িতে এসি চালিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সুখনিদ্রা দিচ্ছে। বরাবরই আমলারা সরকারি গাড়ি ব্যবহারে কারো কোনো তোয়াক্কা করেন না। কোনো কর্মকর্তার হয়তো একটি গাড়ি ব্যবহার করার কথা, কিন্তু তিনি একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন। গাড়ির তেলসহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয় সরকারকে। প্রকল্পের গাড়িও তারা অনেকেই ব্যবহার করেন। প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর ওই প্রকল্পের গাড়ি জমা হওয়ার কথা। কিন্তু কমই জমা হয়। অনেক সময় তাগাদা দিয়েও গাড়ির খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রকল্প চলাকালে কিংবা শেষ হওয়ার পর তার গাড়ি মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। প্রকল্পের গাড়ি নিখোঁজ থাকা বা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ। বিনা সুদে ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনার একটা সুবিধা আছে সরকারি কর্মকর্তাদের। অনেক কর্মকর্তাই এ সুবিধা নিয়েছেন। এই ব্যক্তিগত গাড়ি, পরিচালনা বাবদ সরকার থেকে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এভাবে একজন কর্মকর্তা (সবাই নয়) সরকারি গাড়ি প্রকল্পের গাড়ি ও সরকারি ঋণে কেনা ব্যক্তিগত গাড়ি পরিচালনা করেন। এতে জনগণের ট্যাক্সের টাকার কী পরিমাণে অপচয় হয়, সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ যথার্থই বলেছেন, আমলাদের এই যথেচ্ছ গাড়ি ব্যবহার বা গাড়ি বিলাস বন্ধ হলে শোডশেডিং ও জ্বালানি কৃচ্ছ্রতার প্রয়োজন হতো না।

আমাদের দেশে বেসামরিক-সামরিক আমলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর মধ্যে পড়েন। তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা এত বেশি, সাধারণ মানুষ যা ধারণাও করতে পারে না। রাষ্ট্র তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করতে এতটুকু কার্পণ্য করে না। রাষ্ট্র পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন বলে রাষ্ট্র তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। অথচ, অনেক সময় তারা একথা স্মরণ রাখেন না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বেড়েছে। তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। তারা মনে করে, তারাই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। সরকারও তার স্বার্থে তাদের তোয়াজ করে চলে। সরকার যেমন জনসাধারণকে তোয়াক্কা করে না, তেমনি প্রশাসন এবং পুলিশও করে না। জনসাধারণ উভয়ের কাছে অপাংতেয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জনগণের সেবক, একথা এখন আর সত্য নয়। তারা এখন প্রভুতে পরিণত হয়েছেন। জনগণ কার্যত গোলাম এবং শোষণের উৎসে পরিণত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাতে মানুষের জীবনযাপন অসম্ভবপর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, মূল্যস্ফীতি হ্রাসের কোনো উদ্যোগ নেই। এর ওপর সেবাপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। তার প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে। প্রতিটি দেশই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা অবলম্বনের পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কৃচ্ছ্রতার কোনো কর্মসূচীই এখানে যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যহত হওয়া ছাড়াও মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই দু’ ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতার দৃষ্টান্ত সরকারের দিকে থেকেই আগে স্থাপন করা উচিত ছিল। তা করা হয়নি বরং ব্যতিক্রমই লক্ষ করা যাচ্ছে। যাদের কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার কথা, সেই সরকারি আমলারাই তা অমান্য ও লংঘন করছেন।

দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে দুর্নীতি, অপচয় ও ক্ষমতার অপব্যবহার নেই। এসবের মাধ্যমে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের মধ্যেও সরকারি কর্মকর্তাদের অবস্থান নিচে নয়। সাধারণ মানুষ অপরিসীম দুঃখ-কষ্টে থাকলেও তাদের ভোগ-বিলাসের সীমা নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তাদের অন্যায়-অনৈতিক কাণ্ড এবং ভোগ-বিলাসের রাস টেনে ধরতে হবে। সরকারকেই সেটা করতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের সংকট আরো বাড়তে পারে। আশংকার এই পটভূমিতে সকল ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা কার্যকর করার বিকল্প নেই। তেমনি দুর্নীতি, দৃষ্কৃতি ও অপচয় বন্ধ করতে হবে। সরকারি অফিসের কেনাকাটার খরচাপাতি যেমন কমাতে হবে, তেমনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের খরচের বাজেট কমাতে হবে। প্রশাসন ও পুলিশের বাজেট কমাতে হবে। একইভাবে সামরিক বাজেটও হ্রাস করতে হবে। কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। নতুন কোনো মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া যাবে না। সকল ক্ষেত্র ও পর্যায়ে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগ ও পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমলাদের লাগাম টেনে ধরুন
আরও পড়ুন