শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
(নববর্ষ সংখ্যায় প্রকাশিতের বাকি অংশ)
বাড়ির বুড়ি দাইমার কাছেই থাকতো মুন্নী আর বুলা।
সব ভাই বোনদের খুব যতœ করতো সেই দাইমা।
ওই দাইমাকে একেক সময় মা ডাকতে ইচ্ছে করতো কামরানের।
সেই প্রথম সুন্দরী মেয়েদের ওপর থেকে মন বিষিয়ে উঠেছিল তাঁর।
এরপর বাবা আর বিয়ে করেন নি। বন্ধু বান্ধবরা অনেক বুঝাতেন।
বলতেন-এতোগুলো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে সামলানোর জন্যে ঘরে একটা বউ আনা দরকার।
বাবা বলতেন-
ঃ নিজের সন্তানদেন ফেলে রেখে চলে গেছে একজন। আর পরের সন্তানদের সামলাবার জন্যে আরেকজন আসবে কোন দায়ে ঠেকে? খুব শিক্ষা হয়েছে আমার।
শিক্ষা হয়ে গেছে কামরানেরও। কিন্তু সেটা আরো পরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে একটা স্কলারশীপ নিয়ে বিদেশে যাবার চেষ্টায় খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন কামরান।
এরই মধ্যে ওর জীবনে এলো নীলা। অল্প ক’দিনের মধ্যেই জয় করে নিল কামরানের মতো ছেলেকে। নতুন করে আশার আলো দেখলো কামরান।
রাতটুকুন ছাড়া সবসময় সবকাজের সঙ্গী এখন শুধু নীলা।
ভালোবাসার কাঙ্গাল কামরানও নিজেকে ধন্য মনে করলো নীলার মতো মেয়ের ভালোবাসা পেয়ে।
একদিন সুযোগ বুঝে নীলা বলেই বসলো যে-
কামরানকে ছেড়ে তার পক্ষে এখানে একা থাকা কোন রকমেই সম্ভব নয়।
কাজেই-
তারও যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কামরানও একেবারে মরিয়া হয়ে উঠলো নীলাকে সাথে নিয়ে আমেরিকা যাবার জন্যে।
বহু খাটা খাটনি আর আনুষ্ঠানিকতার পর দু’জনার যাওয়ার প্রস্তুতি পর্ব সারা হলো।
ছোট ভাই দুটি মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে।
বিয়ে হয়ে গেছে বোন দুটির। দু’টো বাড়ির একটি ভাড়া দিয়ে, অন্যটিতে সবাই থাকে।
কামরান এখন অনেকটা দায় মুক্ত। নিজেকে নিয়ে ভাববার সময় এসেছে ওর।
বাবা সবই জানতেই।
ওদের যাবার আগে কলমা পড়িয়ে বিয়ে দিলেন ঘরোয়াভাবে।
ঘনিষ্ঠ দু’একজন ছাড়া বাইরের কেউ জানতো না।
নীলার কোন গার্জেন ছিল না। বাড়িতে সৎ মা।
বাবা কিছু কিছু হাত খরচ দেন বটে; কিন্তু তাতে কিছুই হয় না।
বিকেলের দিকে পারটাইম কিছু কাজ ও টিউশশনি করে চলতো ওর।
ঢাকায় হলে থাকতো। কাজেই ও নিজেই নিজেই গার্জেন ছিল।
কামরানের জীবনের যত গ্লানি, হতাশা আর দুঃখকে অল্প কদিনের মধ্যে ভুলিয়ে দিল নীলা, ভালোবাসার প্লাবনে।
এবং একদিন দু’জনেই চলে গেল আমেরিকা, প্রায় দুই বছরের জন্যে।
প্রায় বছর খানেক পরের কথা। একদিন কামরান বাইরে থেকে এসে দেখে-ব্যাগ গোছাচ্ছে নীলা।
জিজ্ঞেস করতেই বলল-
ঃ আমার এক বান্ধবীর সাথে দেখা হঠাৎ একটা স্টোরে, খুব ধরেছে- ওর বাড়িতে দু’দিন থাকতে। আমাদেরও তো দেশে ফেরার সময় হয়ে এলো। তাই ভাবছিলাম-
এক কথায় রাজী হয়ে গেলেন কামরান।
বললেন-
ঃ বেশ তো থাকো। কিন্তু ডার্লিং দু’দিনের বেশী নয়। তোমাকে ছাড়া আমার অবস্থা-বুঝতেই পারছো-
ঃ অফ কোর্স-
হাসলো নীলা।
পরদিন সকালে বের হবার আগে কামরান বললেন-
ঃ চল তোমায় আগে তোমার বান্ধবী বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর একটু এ্যাম্বিসিতে যাব।
নীলা কামরানের গলা জড়িয়ে ধরলো আহলাদে।
বলল-
ঃ নো থ্যাঙ্কস। তোমাকে কষ্ট করতে হবে না ডার্লিং। আমার বান্ধবী নিজে এসে নিয়ে যাবে আরো ঘন্টা খানেক পরে। ততক্ষণে আমি তোমার দু’দিনের রান্নাটা রেডি করে ফ্রীজে রাখি। বাকি কাজও গুছিয়ে রেখে যাচ্ছি সব। আমার এ্যাবসেন্সে যেন তোমার কোন কষ্ট না হয়।
নীলাকে কাছে টেনে আদর করলেন কামরান।
বললেন-
ঃ ‘ও’ কে’ । সত্যি নীলা তুমি আমার জীবনে আছো বলেই-
কামরানের মুখে হাত চাপা দিল নীলা।
বলল-
ঃ আর একটিও কথা নয়। তোমার কাজের দেরি হয়ে যাচ্ছে। এসব আবেগের কতা বলার জন্যে সারাটা জীবন তো পড়েই রয়েছে।
হেসে বেরিয়ে গেলেন কামরান। নীলা ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল।
এরপর দুদিন অতিবাহিত হয়ে তৃতীয় দিন ভোরে টেলিফোন বেজে উঠলো।
কামরান ঘুম চোখেই রিসিভার তুলে নিল।
হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো নীলার কণ্ঠ।
ঃ গুডমর্নিং ডার্লিং। স্যরি এতো ভোরে তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম। কামরান বালিশটা টেনে নিল বুকের কাছে।
ঘুম জড়ানো চোখে বলল-
ঃ গুডমর্নিং নীলা- কই কখন আসছো তুমি ? ভীষণ মিস করছি তোমাকে।
ওদিক থেকে নীলার কণ্ঠ হেসে উঠলো জল তরঙ্গের মতো।
বলল-
ঃ স্যরি ডার্লিং। আমি আসছি না।
কামরান বললেন-
ঃ ইয়ার্কী রাখো। প্লীজ লক্ষ্মীটি- বড় তাড়াতাড়ি।
নীলা আবার হাসলো।
বলল-
ঃ বিশ্বাস হচ্ছে না? আলমারীটা খুলে দেখ। আমি আমার সব কিছু নিয়ে চলে এসেছি। আর কখনই আমি তোমার কাছে ফিরে যাব না। কোন বান্ধবী নয়- বন্ধু এখানে চমৎকার বয়ফ্রেন্ড পেয়েছি আমি জীবনকে উপভোগ করবার জন্যে। অনেক বড় চাকরি করে।
কামরান বলল-
ঃ নীলা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? আমাদের ভালোবাসা, বিয়ে এতো দিনের দাম্পত্য জীবন-
নীলা বলল-
ঃ সব মিথ্যে। তুমি দেশে ফিরে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে নিও প্লীজ। বাই
ওপাশ থেকে রিসিভার রেখে দিল নীলা।
কামরান যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না।
ও স্বপ্ন দেখছে নাতো?
হাতে মুখে বার কয়েক চিমটি কেটে দেখলেন-
না। জেগেই আছে সে।
কিন্তু এ কি করে সম্ভব?
নীলার মতো মেয়ে...?
উঠে আলমারীটা খুললেন কামরান। এবং স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ভেতরটা একেবারে ফাঁকা। নীলার কোন চিহ্ন নেই কোথাও । সব শূন্য।
আবার বিছানায় এসে বসে পড়লেন কামরান। মাথাটা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। কামরান ভেবে পান না কেন নীলা এমন করলো।
কি দরকার ছিল এই প্রতারণার?
কিসের অভাব ছিল ওর?
প্রাচুর্যের?
এতোদিনের প্রেম, ভালোবাসা, দাম্পত্য জীবন-সব মিথ্যে হয়ে গেল
আরেকজনের অর্থের কাছে?
কি করে এই প্রলোভনে পড়ে গেল নীলা?
কি করে ছেড়ে যেতে পারালো সে কামরানকে।
একটু পরেই আবার ফোন বেজে উঠলো।
রিসিভার তুলেই নীলার কণ্ঠ শুনলেন কামরান।
ঃ এতোক্ষণে তোমার নিশ্চয়ই বিশ্বাস হয়ে গেছে যে আমি সত্যি তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছি।
শোন, তোমার টাকা পয়সা আমি কিছুই আনিনি। কারণ ওটা আনলে তোমার দেশে ফিরে যেতে কষ্ট হবে।
তুমি এতো ভালো যে, তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাইনে। শোন, আমাকে ফিরে পাবার কোন রকম চেষ্টা চালাবে না। তাহলে বিপদে পড়বে। আমি চাই, তোমার কাজ শেষ করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও।
লাইনটা কেটে গেল ওপাশ থেকে। রিসিভার হাতে বসে রইলেন কামরান। একটি কথাও বলতে পারলেন না। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।