পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীতে বনানীর এক চীনা নাগরিকের মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাড়ির ৬ষ্ঠ তলায় ভাড়া থাকতেন চীনা নাগরিক জো জিয়ান হু। জো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছিলেন। পদ্মাসেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনায় পাথর সরবরাহের কাজে যুক্ত ছিলেন। বুধবার দুপুরে অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের দেয়াল ও সীমানা প্রাচীরের মাঝখানে মাটির নিচে চাপা দেওয়া লাশের পায়ের গোড়ালি ও চুলের অংশবিশেষ অনাবৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাড়ির কেয়ারটেকাররা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। জো হুইয়ের বাসার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তার অফিসকক্ষে ধস্তাধস্তি ও রক্তের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছে পুলিশের তদন্তকারীরা। প্রাথমিক আলামতে এটা প্রায় পরিষ্কার যে, জো হুইকে হত্যা করা হয়েছে। দেড় বছর আগে জো ওই বাসায় উঠেছিলেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন উত্তরায় বসবাস করেছেন বলে জানা যায়। সুবাস্ত মাহবুবা হাইটস নামের বাড়িটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মুছে ফেলা হয়েছে এবং প্রায় দেড় মাস ধরে সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। চীনের হুজিয়ান শহরের বাসিন্দা জো হুই ঢাকায় সেকেন্ড হোম হিসেবে বসবাস করছিলেন। তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে এসে তার সাথে বসবাস করতেন।
পদ্মাসেতুসহ বড় বড় স্থাপনায় পাথর সরবরাহের কাজসহ বাংলাদেশে বসবাস ও ব্যবসায় জড়িত চীনা নাগরিকের অপমৃত্যু বা হত্যাকান্ড অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। এ ধরনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়। একজন বিদেশি নাগরিক অপমৃত্যুর শিকার হলে অপরাপর বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব অবধারিত। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগসহ সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পগুলোতে চীনা বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় চীনা নাগরিক হত্যার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ইতিপূর্বে গত জুন মাসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লার থেকে পড়ে সাবিন্দ্র দাস নামের একজন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে চীনা শ্রমিকদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা। সংঘবদ্ধ আক্রমণে এক চীনা কর্মীর মৃত্যুসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। ফলে প্রায় উদ্বোধন হতে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। সে ঘটনাকেও গুজব ছড়িয়ে সাবোট্যাজ বা অন্তর্ঘাত বলে মনে করেছেন অনেকে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং চীনা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতেই এমনটা করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার মাধ্যমে আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করা বিনিয়োগ ও উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। বিদেশিরা নিরাপত্তা না পেলে বা যখন তখন আক্রান্ত হলে সে আস্থার পরিবেশ বিঘিœত হতে বাধ্য। একটি নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী চক্র বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসী চক্রের চারণভূমি হিসেবে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিটি নাশকতামূলক ঘটনার কথিত আইএস’র দায় স্বীকার ও সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশিত হয়। বনানীর হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরও আইএস দায় স্বীকার করেছিল। সে মামলার বিচারিক আদালতের রায়ও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সাথে আইএসকে সম্পৃক্ত করতে রায়ের দিনও রহস্যজনকভাবে দ-প্রাপ্ত আসামীদের মাথায় আইএস’র টুপি পরিয়ে দেওয়া হয়। এ থেকে সহজেই বুঝা যাচ্ছে, একটি চক্র বাংলাদেশে আইএস’র তৎপরতা প্রমাণে সদা সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে এটি একটি অনেক বড় চক্রান্তের অংশ। উল্লেখ্য, হোলি আর্টিজান হামলায় ৭ জাপানি এবং ৯ ইতালীয় নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। জাপানি প্রকৌশলীরা মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে কাজ করছিলেন। আর ইতালীয়রা বেশিরভাগই ছিলেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। হোলি আর্টিজান হামলার পর জাপানি উন্নয়ন সহযোগিতা এবং গার্মেন্ট ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিলেও ইতোমধ্যে তার উত্তরণ ঘটেছে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চীনের বিনিয়োগ আমাদের জন্য বিকল্পহীন অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে। চীনের বিনিয়োগ ও সহযোগিতায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহুদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারিত হয়েছে। চীনা নাগরিক হত্যা করে এবং চীনা বিনিয়োগে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে গোলযোগ সৃষ্টি করে কোনো পক্ষ যদি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়, তবে তা অবশ্যই নস্যাৎ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। উপযুক্ত তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে জো জিয়ান হুইয়ের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।