Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতে শরীরের যত্ন

ডা: মাও: লোকমান হেকিম | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:২২ পিএম

আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে দেহে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। পরিবেশের তাপমাত্রা কম আর্দ্রতা বেশি, ধুলোবালি, ধোঁয়া, সুগন্ধি, ফুলের রেণু, তীব্র গন্ধ, ঠান্ডা ইত্যাদির কারণে এ সমস্যাগুলো দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ত্বক ও শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতায় ভোগে থাকে। পাতা ঝরার দিনগুলো রুক্ষতার ছাপ ফেলে যায় ত্বকের ওপর। শরীরের কিছু অংশ আবার একটু আগেভাগেই আক্রান্ত হয় শীতে। যেমন হাত-পা ও ঠোঁট। পায়ের পাতায় ফাটল ধরা, হাত খসখসে হয়ে যাওয়া অথবা ঠোঁট ফেটে যাওয়ার মতো বিব্রতকর ব্যাপারগুলো এড়াতে চাই বিশেষ পরিচর্যা। 

আসুন তাহলে জেনে নেই শীতে শরীরের যতœ সম্পর্কে-
* পায়ের যত-শীতে পা ফাটার প্রবণতা কম-বেশি সবারই দেখা যায়। সবসময় পরিষ্কার রাখলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন অনেকটাই। গোসলের সময় পিউমিস স্টোন দিয়ে পায়ের গোড়ালি ঘষে মরা চামড়া তুলে ফেলুন। তারপর পা মুছে গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান। শীতকালে পায়ের যতেœ মাসে অন্তত দু’বার পেডিকিউর করানো জরুরি। ঘরে বসেও করতে পারেন পেডিকিউর। এ জন্য হালকা গরম পানিতে শ্যাম্পু, স্যাভলন ও লবণ মিশিয়ে পা বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। তারপর নেইল ফাইনার ও বাফার দিয়ে নখ শেপ করে কাটুন। ব্রাশের সাথে শ্যাম্পু লাগিয়ে নখগুলো ভালো করে ঘসে পরিষ্কার করে দিন। কিউটিকল সফটনার বা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নখের কিউটিকল নরম করে মরা চামড়া তুলে ফেলুন। তারপর সামান্য অভিল অয়েল পায়ের গোড়ালি থেকে ওপর পর্যন্ত ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। সাবান-পানিতে পা ভালো করে ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে নিন। এরপর আঙুল ও গোড়ালিতে ভালো করে ফুট লোশন লাগান। তবে যাদের পা ফাটার প্রবণতা খুব বেশি তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* হাতের যতœ- শীতের বাতাসে হাতের চামড়া যেহেতু খসখসে ও রুক্ষ হয়ে পড়ে, তাই এ সময় প্রয়োজন বিশেষ যতেœর। যারা পানির কাজ বেশি করেন তারা তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে নেবেন একটু পরপর। কাজ শেষ হয়ে গেলে হাতে ময়েশ্চারাইজার বা হ্যান্ড ক্রিম লাগিয়ে নিন। এছাড়া গ্লিসারিন ও গোলাপজল সমপরিমাণ মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন হাতে। ত্বক বেশি রুক্ষ হলে ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। সেক্ষেত্রে হাতে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। হাতের আঙুল নরম ও মসৃণ রাখতে সপ্তাহে একবার অলিভ অয়েল গরম করে হাতের আঙুলে লাগাতে পারেন। হাতের ত্বক খসখসে হয়ে গেলে লেবুর রসে এক চামচ মধু বা চিনি মিশিয়ে পুরো হাতে ঘষুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পাকা কলা চটকে তাতে দুই টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে মিশ্রণটি কনুইয়ে মালিশ করুন। চিনি গলে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এতে কনুইয়ের রুক্ষতা দূর হবে। অনেকের কনুইয়ের অংশ কালো হয়ে বিশ্রী দেখায়। এ দাগ দূর করতে লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হাতের যতেœ ঘরে বসেও মেনিকিউর করতে পারেন। এ জন্য প্রথমেই রিমোভার দিয়ে পুরনো নেইল পলিশ তুলে নেইলকাটার দিয়ে নখ শেপ করে কেটে নিন। তারপর সামান্য অলিভ অয়েল তুলায় ভিজিয়ে প্রতিদিন নখে লাগান। ৫ মিনিট পর এক বাটি কুসুম গরম পানিতে আধা চামচ শ্যাম্পু গুলে হাত ডুবিয়ে রাখুন। নেইল ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে নখ পরিষ্কার করুন। এবার হাত ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে নিন। তারপর ময়েশ্চারাইজার বা হ্যান্ড লোশন লাগান।
* ঠোঁটের যতœ- শীতকালে ঠোঁট ফাটার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সবাইকেই। একটু সচেতন হলে আপনি এ সমস্যা এড়াতে পারেন। শীতের সময় ঠোঁট একটু পরপর শুকিয়ে যায়। অনেকের আবার ঠোঁট ফেটে চামড়া ওঠে। এ থেকে মুক্তি পেতে ঠোঁটে সবসময় লিপবাম অথবা ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখতে হবে। গ্লিসারিন ও কোকো বাটার বেসড লিপবাম ব্যবহার করুন। অনেকের জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর অভ্যাস থাকে; কিন্তু এটি একেবারেই উচিত নয়। এতে ঠোঁট আরও শুষ্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন ঠোঁট পরিষ্কার করতে ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার করুন। মাঝে মধ্যে ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঠোঁট ঘষে নিন। এতে মরা কোষগুলো ঝরে যাবে। রাতে শোয়ার আগে অবশ্যই ক্রিম বা লোশনে তুলা ভিজিয়ে ঠোঁট ভালো করে মুছে ভ্যাসলিন লাগিয়ে নেবেন। সকালে উঠে ভেজা সুতি কাপড় দিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করে নিন। মধু ও গ্লিসারিন মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট নরম থাকবে। ঠোঁট কালচে হয়ে গেলে দুধের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ফাটা ঠোঁটে লিপস্টিক লাগালে মোটেও ভালো দেখায় না। লিপস্টিক লাগানোর একটু আগে ঠোঁটে ভ্যাসলিন ঘষে নিন। তারপর ভেজা তুলা দিয়ে ঠোঁট মুছে লিপস্টিক লাগান, অনেকক্ষণ থাকবে। এ সময় ম্যাট লিপস্টিক একেবারেই ব্যবহার করবেন না। ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ গ্লসি লিপস্টিকে রাঙান ঠোঁট। সাধারণত ভিটামিন-সি’র অভাবে ঠোঁট ফাটে বেশি। তাই ভিটামিন সি’র উৎস হিসেবে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ টক জাতীয় ফল খাওয়া ভাল।
পরিমিত ও নিয়মিত আহার, শারীরিক ব্যায়াম, বিশ্রাম, নিদ্রা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত।

চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ