Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ষ নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ষ কাজ না পেয়ে শ্রমজীবী মানুষের মানবেতর জীবন-যাপন ষ ঘনকুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে দিনেও হেডল

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। নওগাঁ, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হিমশীতল বাতাসে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় গত এক সপ্তাহযাবত দিনে সূর্যের দেখা মিলছে। হাড় কাঁপানো শীতের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য গরীব মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতার পরশ নিচ্ছে। কুয়াশার চাদরে সারাদিন সূর্য ঢাকা থাকায় ঘর থেকে বেরিয়ে কাজের সন্ধানেও অনেকে যেতে পারেন না। এর ফলে দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান, ঠেলাচালক, কৃষি শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের রোজগার নেই। দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে কাজের আশায় প্রচণ্ড শীতেও অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছে, কিন্তু মিলছে না কাজ। কাজ না পাওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সারাদেশে বাড়ছে শীতজনিত রোগ-বালাই। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার শিশু ও বৃদ্ধ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে সকালেও হেডলাইড জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। গতকালও কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল রাজধানী। সকাল থেকে ঘনকুয়াশার কারণে রাজধানীতে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কিছু কিছু স্থানে কুয়াশা এত ঘন হয়ে জমে যে ২০ হাত দূরের জিনিসও দৃশ্যমান হয় না। শীত ও কুয়াশার এ অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ সংস্থার তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহের শেষে শীতের দাপট আরও বাড়তে পারে। কয়েকটি এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। শৈত্যপ্রবাহ শক্তিশালী হয়ে আরও কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলতি মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তবে এ মাসে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র্র আকার ধারণ বা তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার আশঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল রাজধানীসহ দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার তাপমাত্রাও শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক শূন্য নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পরতে পারে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও -এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

সারাদেশে শীতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হল।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, পৌষ মাসের শেষার্ধে এসে সারা দেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বেড়ে গেছে কুয়াশা ও শীতের দাপট। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল-কনকনে হাওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। এতে করে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শ্রীমঙ্গলে ১০ ডিগ্রি সে.।

শীতের কষ্ট থেকে পরিত্রাণের জন্য ফুটপাত থেকে অভিজাত মার্কেট-শপিংমল পর্যন্ত গরম কাপড়ের বেচা-কেনা জমজমাট। হতদরিদ্র মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ভোর থেকে সকালে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে শহর-গ্রাম-জনপদ। এর ফলে দিনে এনে দিনে খাওয়া গরীব শ্রমজীবী মানুষের রুজি-রোজগারে ভাটা পড়েছে। দু’মুঠো আহার জোগাড় করতে কাজের আশায় ঠায় বসে আছে শ্রমজীবীরা। তেমন মিলছে না কাজ। কুয়াশা ও শীতের কাঁপন বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে জ্বর-সর্দি, কাশি, শ^াসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ হরেক শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়েছে। শীতের তীব্রতা যতই বাড়ছে ততই গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় রস ও গুঁড় এখন আগের মতো মিলছে না। দামও বেড়ে গেছে।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, রাজশাহী অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। রাতভর গাঢ় কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারিদিক। সকাল দশটার আগে রোদের মুখ দেখা যাচ্ছেনা। তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় হিমেল হাওয়ায় জন-জীবন বিপর্যস্ত। মানুষ পশু-পাখি সব কাঁপছে। সামনে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে এমনটা বলছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ। দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ আরো বেকায়দায়। কাজের সন্ধানে কাকডাকা ভোরে গাঢ় কুয়াশার মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে ছুটছে শ্রমবিক্রির স্থান গুলোয়। মাঝে-মধ্যে গাঢ় কুয়াশার ফোটা বৃষ্টির মতো ভেজাচ্ছে। সকল ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চলাচলকারী দুরপাল্লার গাড়িগুলো ঝুকি নিয়ে চলছে। কুয়াশার কারনে স্বল্প গতিতে চলতে হচ্ছে। ফলে সময় লাগছে বেশি। বিশেষ করে ঢাকাগামী বাসগুলো শঙ্কা নিয়ে চলাচল করছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে শীতজনিত রোগবালাই। যক্ষা, হৃদরোগ, স্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বাড়ছে। শিশু ওয়ার্ডে রোগী বাড়ছে এমনটি জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাজারে ইনহেলারের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে দামও। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কারনে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের কৃষক ফসলের যত্ন আত্তি করতে ক্ষেতে যেতে কষ্ট পাচ্ছে কৃষক। মাঠের খোলা হিমেল হাওয়া আরো কাঁপন ধরাচ্ছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আব্দুল সালাম বলেন, পদ্মা পারের এ অঞ্চলে তাপমাত্রা আরো কমে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। শীতে মানুষ কাবু হলেও তাদের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। ভীড় বেড়েছে ফুটপাতের পুরাতন শীত বস্ত্রের দোকানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ব্যাংক গুলো শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এবার তাদের দেখা নেই। ছিন্নমূল মানুষের কথা, শীত শেষ হয়ে গেলে কি তারা আসবে।

বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে উত্তরের হীমেল হাওয়ায় কাঁপছে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল। গত ৫ দিন ধরে শেষরাত থেকে মেঘনা অববাহিকার সব নদ-নদী থেকে দিগন্ত বিস্তৃত দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে মঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। সূর্যের মুখ দেখতে অপক্ষোয় থাকতে হচ্ছে অনেক বেলা অবধি। সাথে তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাপমাত্রার পারদ নামার সাথে ঠান্ডাজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতেই নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিশু ও বৃদ্ধ চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সর্বাধিক। মাঠে বোরো বীজতলাও ক্ষতির মুখে। হিমেল হাওয়ার সাথে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ নিচে নামায় বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরির ক্ষতির মুখে।
গতকাল সকালে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও শুক্রবার সকালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল স্বাভাবিকের ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। তবে সোমবার সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রার পারদ আরো নামবে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের আকাশজুুড়ে হালকা থেকে মাঝারি মেঘের আনাগোনায় সূর্য বারবরই আড়ালে থাকছে। ফলে জনজীবনে সঙ্কট আরো বাড়ছে। হিমেল হাওয়ার হাড়কাঁপান শীতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনই এখন অনেকটা বিপর্যস্ত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুপুরের পরে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এমনকি এ কনকনে ঠান্ডায় দক্ষিণাঞ্চলের মাঠজুুড়ে পাকা আমন ধান কর্তনও মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে।

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, শীতের প্রকোপে বগুড়ায় এখন জবুথবু অবস্থা মানুষের। গত তিনদিন ধরে মৌসুমের সর্বোচ্চ শীত পড়েছে বগুড়ায়। কুয়াশায় সূর্যের আলোও ঢেকে থাকছে। তাপমাত্রা ৭/৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করেই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে বাইরে এসে জীবিকার সন্ধান করতে হচ্ছে। পল্লি এলাকায় বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। সেখানে মানুষের দুর্ভোগও বেশি। মানুষের পাশাপাশি শীতে গবাদিপশুরও কষ্ট হচ্ছে। অবস্থাপন্ন গৃহস্থরা তাদের গবাদিপশুর গায়ে মোটা কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারনের ব্যবস্থা করতে পারলেও গরীব মানুষরা নিজের শীত নিবারণেরই কাপড় পাচ্ছে না। এদিকে শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। ঘনকুয়াশায় আলু ও সরিষা ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, এ জেলায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। শীতে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বেড়ছে। শহর-গ্রাম সর্বত্রই এই অবস্থা। গ্রামে প্রাচীন প্রথার মতো বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে মানুষ। শীতে বেশি সমস্যায় পড়েছে গ্রামে গঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষ। গ্রামে-গঞ্জে বেড়েছে সর্দি-কাশি ও জ্বর। এছাড়াও কক্সবাজারে আগত লাখো পর্যটক ছিলো শীতে কাবু। গত কয়েকদিনে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখার এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার সৈকতে ছিল পর্যটকের ঢল। এই পর্যটকরা শীতে ছিল জবুথবু। আবহাওয়া অফিসের মতে, এই অবস্থা আরো কয়েকদিন চলতে পারে।

শীতবস্ত্রের জন্য হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দিনাজপুরে।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, শীত মৌসুমে দিনাজপুরে ভ্রমনের কথা শুনলেই আঁতকে উঠতে হয়। কারণ হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দিনাজপুরের শীত হয় হাঁড়-কাঁপানো। এই কারণে এই অঞ্চলে একটি প্রবাদ রয়েছে দিনাজপুরে মাঘের শীতে বাঘও কাঁপে। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার পারদ ৪ ডিগ্রিতে নেমে আসার রেকর্ড রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে কনকনে শীত অনুভূত হবে কয়েকদিনের মধ্যেই। এর ওপর রয়েছে শৈত প্রবাহের আশঙ্কা। বলাবাহুল্য শীত মৌসুমে এখন পর্যন্ত দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত হয়নি। বৃষ্টি হলেই শীত শুরু হবে হাঁড় কাঁপানো।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, গত কয়েক দিন ধরে শীত আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেটকে। শীতের তীব্রতায় জনজীবনে নেমেছে স্থবিরতা। ভোর-বিহানে ঘনকুয়াশার চাঁদরে মোড়ে যায় সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকা। গাছ-গাছালিতে শিশির বিন্দুর দাপটও দৃশ্যমান, এতে জবুথবু প্রকৃতির চঞ্চলতা। কুয়াশার তীব্রতায় রাস্তা-ঘাটে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে সিলেটজুড়ে। এদিকে প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। দিনের বেলায় কিছুটা স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকলেও বিকেল থেকে কমতে শুরু করে। রাতে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকে ঘনকুয়াশাও। পাশাপাশি হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়েও দিচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে শীতের পোশাক বিক্রিতে ধূম পড়েছে সিলেটে। নগরীর ফুটপাতে শীতের কাপড় বিক্রি চোখে পড়ার মতো। শহরে এখনও ঠান্ডা সহনশীল মাত্রায় হলেও গ্রাম এলাকায় শীত পড়েছে বেশি। বিশেষ করে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত লাগোয়া জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে খুব বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অপরদিকে, আগামী কয়েকদিনে সিলেটে রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে তাপমাত্রা প্রতিদিন কমছে। ফলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। চলতি মাসের ৩, ৪ ও ৫ জানুয়ারি তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রিতে নেমে আসবে। ফলে শীতের তীব্রতায় প্রত্যন্ত জনপদগুলো কাঁপাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা থেকে ডিএম রেজা জানান, খুলনায় জেঁকে বসেছে শীত। সন্ধ্যা নামতেই কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। সবচেয়ে বেশি দূরবস্থায় রয়েছে শিশু-বয়স্ক ও দরিদ্ররা। ঠান্ডাজনিত নানা রোগব্যধির প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলো শয্যা সঙ্কটে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে, সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতূল। প্রায় ২৪ লাখ জনঅধ্যুষিত খুলনা জেলায় দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ মানুষ। এ হিসাবে জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র। শীত তাদের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মত চেপে বসেছে। দরিদ্রদের শীতবস্ত্র বিতরণে জেলা প্রশাসনসহ বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এগিয়ে এলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই নগণ্য। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। খুলনা সদর হাসপাতাল ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শয্যা না পেয়ে সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে রয়েছেন। শীতে ঘনকুয়াশায় বোরো’র বীজতলা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন কৃষক। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, শীত ও কুয়াশায় ধানের চারার মাথায় পানি জমে থাকা এবং একই সঙ্গে ঠান্ডাজনিত কারণে বীজতলা বিনষ্ট হয়। এ জন্য কৃষকদের পুরো বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বোরোর বীজতলা রক্ষায় এখন পলিথিনই একমাত্র ভরসা।

রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, তীব্র ঘনকুয়াশা আর প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় রংপুরে জেঁকে বসেছে শীত। দু’দিন ধরে চলমান শৈত্য প্রবাহে কাবু হয়ে পড়েছে উত্তর জনপদের মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা থাকবে আরও দুই-তিন দিন চলবে।

পঞ্চগড় থেকে মো. সম্রাট হোসাইন জানান, পঞ্চগড়ে শীতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় প্রতিবারই শীতের প্রকোপ বেশি। পুরো শীত মৌসুমজুড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায়। গতকাল সকাল ৯ টায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবক্ষণ কেন্দ্রে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে শুক্রবার ও শনিবার ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢেকে ছিলো পুরো জেলা। অনেকে খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। পুরান গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শীত উপেক্ষা করে কাজে বেড়িয়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মো. আতিকুল্লাহ জানান, এ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে গত কয়েকদিন যাবত একটানা হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। প্রচণ্ড এই শীতে শিশু ও বয়স্করা কাবু হয়ে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। বিগত বছরগুলোতে সরকারিভাবে না মিললেও বিভিন্ন সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করতো। কিন্তু এবার তেমনটি এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। এ অবস্থায় অসহায় লোকেরা আগুনের তাপ দিয়ে শীতের কষ্ট দূর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত ৪-৫ দিন যাবত ঘনকুয়াশার আচ্ছন্নে প্রকৃতি ঢাকা পড়ে। সূর্য হয়ে পড়ে অদৃশ্য। প্রায়ই সারাদিনেই এই অবস্থা চলতে থাকে। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলে দেখা দিয়েছে মহাসমস্যা ও সেই সাথে ধীর গতিতে চলছে যানবাহান।

শেরপুরের ঝিনাইগতী থেকে এস কে সাত্তার জানান, সীমান্তবর্তী শেরপুর গারো পাহাড়ি অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীতে ভোররাতে ঘনকুয়াশা এবং হাড়কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। গোটা গারো পাহাড়ে শীত জেঁকে বসায় বাড়ছে লেপ-তোশক এবং পুরাতন শীত বস্ত্রের দোকানে ভিড়। সর্দি-কাশি ও জ্বরে, কাহিল ও আক্রান্ত হচ্ছে ছোট ছেলে-মেয়ে, শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। শেরপুরে আবহাওয়া অফিস না থাকায় গারো পাহাড়ের তাপমাত্রা জানা সম্ভব না হলেও প্রচণ্ড ঠান্ডায় মনে হচ্ছে তাপমাত্রা সর্বনিম্মে রয়েছে। তবে রাতে তাপমাত্রা আরো কমে যায় বলে গারো পাহাড়ের শালচূড়া গ্রামের সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল জানান। কুয়াশার কারণে সকাল ও সন্ধার পর যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। বন্দভাট পাড়া গ্রামের শ্রমিক রুস্তম আলী বলেন, ভাই একসপ্তাহ যাবত শীতে মাঠে কাজে যেতে পারছি না।

আরিচা থেকে শাহজাহান বিশ্বাস জানান, ঘনকুয়াশার কারণে আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে স্বাভাবিকভাবে বিগত কয়েকদিন যাবত ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দফা দফায় বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ফলে ঘাটগুলোতে আটকে পড়ছে যাত্রী এবং যানবাহন। আটকে পড়া এসব যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পার হতে। যাত্রীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই ফেরি ঘাটগুলোতে। খাবার, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব যানবাহন শ্রমিক এবং যাত্রীদেরকে। বিশেষ করে এই শীতে মধ্যে বেশি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে শিশু এবং নারী যাত্রীদেরকে।



 

Show all comments
  • Umme Habiba ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৫ এএম says : 0
    এই থেকেই বোঝা যায় আমাদের দেশে এখনও অনেকেই সামর্থ না থাকার কারণে ঠিকমত শীতবস্ত্র জোগাড় করতে পারে না । আমাদের সকলের এসব কার্যক্রমে সামর্থ অনুযায়ী যোগদান করা উচিত ।
    Total Reply(0) Reply
  • Aayati Noor ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৬ এএম says : 0
    এই গরীব মানুষ গুলোই জানে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকাটা কতটা ভয়ংকর আল্লাহ তুমি বাংলাদেশ থেকে ধনী-গরীব ভেদাভেদটা দূর করে তাদের জীবনটাকে সহজ করে দাও
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Yousuf Ali ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৭ এএম says : 0
    হিমেল হাওয়া,ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে পঞ্চগড়ের জনজীবন। তাই এখানকার খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ এবং শীতবস্ত্র বিতরণে সরকার,স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন খান বিদ্যুৎ ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৭ এএম says : 0
    এই মুহূর্তে দরকার যার যার অবস্থান থেকে গরিব মানুষদের কে সাহায্য করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mîltøñ Dëbñæth ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৭ এএম says : 0
    সরকার কি এখানে চোখ পড়েনা
    Total Reply(0) Reply
  • Jakaria Ahmed Shuvo ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৭ এএম says : 0
    আপনারা নিউজ করেন ভালো কথা। তাদের কে কিছু সাহায্যে দিয়ে নিউজ করলে তো আরও ভালো হতো।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Didarul Islam Sakib ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৮ এএম says : 0
    আমরা এতো উন্নয়ন চাচ্ছি না আমাদের দেশের মানুষ যদি তিন বেলা না খেয়ে থাকে কি হবে এতো উন্নয়ন দিয়ে সরকার যদি এইসব খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ায় এই জনশক্তি কে যদি কাজে লাগানো যায় দেশ আপনা আপনি উন্নয়ন হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ