Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে শীতের পোশাক বিক্রি বেড়েছে

ব্র্যান্ড পোশাক ও ফুটপাথে বিক্রি বেশি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

পৌষ মাস চলছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে কনকনে ঠান্ডা অনেক আগেই দেখা দিলেও রাজধানী ঢাকাবাসীকে কনকনে ঠাণ্ডার অনুভূতি পেতে পৌষের অর্ধেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সকাল ও রাতে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের পাশাপাশি তাপমাত্রার পারদও ছিল নিম্নমুখী। ফলে শীত নিবারণে ব্র্যান্ডের পোশাক (দামী) বিক্রির দোকানগুলোতে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। ফুটপাতের ও ভ্যানের অস্থায়ী দোকানগুলোতেও ছিল একই চিত্র। শুধু ভিন্নতা দেখা গেছে নন-ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রির মার্কেটগুলোতে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেট, শপিং মল ও ফুটপাত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাহারি রং ও ডিজাইনের শীতের পোশাকে সয়লাব প্রায় প্রতিটি দোকান। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সাইজ ও মানের জ্যাকেট, সোয়েটার, ব্লেজার, হুডি, সুইফ শার্ট, মেগি হাতা জ্যাকেট, মোটা কাপড়ের টি-শার্ট, মাফলার, কানটুপিসহ হরেক রকমের শীতবস্ত্র।

এসব শীতের পোশাক কিনতে ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলোতে। তবে সেই ভিড় শুধু বড় বড় শপিংমল ও ফুটপাতের দোকানেই দেখা গেছে। নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেটের মতো নন-ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি করা মার্কেটগুলোতে শপিং মলের তুলনায় ক্রেতা নেই বললেই চলে। এসব দোকানের বিক্রেতাদের দাবি, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জীবন-যাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এবার শীতের পোশাক কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এছাড়া এলসি বন্ধ থাকায় খুব বেশি নতুন ডিজাইনের পোশাকও দোকানে তুলতে পারেননি তারা। তাই সাধারণ মানুষ গত বছরের পোশাক দিয়েই এবারের শীত নিবারণ করছেন।

ঢাকার অভিজাত মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, শীতের তীব্রতা বাড়ায় গত কয়েকদিনে ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি বেড়েছে। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে গিয়ে তা লক্ষ্যও করা যায়। এ শপিং মলের দর্জি বাড়ি নামের পোশাক কোম্পানীর কর্মকর্তা জানান, শীতের শুরু থেকেই বেচাকেনা ভালো। গত কয়েকদিন শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিক্রিও বেড়েছে।

ইজি ব্র্যান্ডের নামের আরেক ব্যাণ্ডের কাপড় বিক্রেতা জানান, শীতের শুরুর তুলনায় গত কয়েকদিনে দিনে শীতের পোশাক বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আবহাওয়া এমন থাকলে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
রিচম্যানের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে শীত বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তাই শীতের পোশাক কেনায় মানুষের আগ্রহ তেমন একটা থাকে না। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ঠাণ্ডা পড়ায় আমাদের ব্যবসাও বেড়েছে। এক সপ্তাহে প্রায় ২০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। এই শপিং মলের ইনফিনিটি, ইস্ট্যাসি, জেন্টেল পার্ক, মেনস ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

শীতের পোশাক বিক্রির আরেকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো সারা লাইফস্টাইল। তাদের ঢাকার বেশ কয়েকটি আউটলেটে ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় রয়েছে সেখানে। যাদের বেশিরভাগই এসেছেন শীতের পোশাক কিনতে। বিক্রেতারা জানান, তাদের প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। তবে শীতের পোশাকের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের শুরু থেকে তাদের বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। গত কয়েকদিনে শীত বাড়ায় বিক্রি আরো বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে পছন্দমতো পণ্য দিতে পারায় তাদের পোশাকগুলোর প্রতির ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন-ব্র্যান্ডের (সাধারণ মান) পোশাক বিক্রির মার্কেটগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতের পোশাক কেনার ক্রেতা কম। তারপরও যারা কেনার ছিল তারা শীতের শুরুতেই কিনেছেন। এখন শীতের তীব্রতা বাড়ায় নতুন করে আর ক্রেতা বাড়েনি। উল্টো কমেছে। শহিদুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, গত বছর এ সময় দোকানে ক্রেতার ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যেত না। এবার ক্রেতা কম। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে বিক্রি কিছু বেড়েছে। সারাদিন ডাকাডাকি করেও ১০-১২ জন ক্রেতা পেতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শীতের পোশাক বিক্রেতারা বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার করণে মানুষের আয় কমেছে। কিন্তু হুরহুর করে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। তাই মানুষ খরচ কমাতে পোশাকের মতো সৌখিন পণ্য কেনা বন্ধ রেখেছেন। আগে যেখানে মানুষ দুটি শীতের পোশাক কিনতো, এবার সেখানে কিনছে মাত্র একটা। আবার অনেকে গত বছরের শীতের পোশাক দিয়েই এ বছরের প্রয়োজন মিটিয়ে নিচ্ছেন। এ দোকানেই কথা হয় শীতের পোশাক কিনতে আসা একজন কর্মজীবী বদরুল হোসেন বলেন, ঢাকায় খুব একটা ঠাণ্ডা পড়ে না। কিন্তু কয়েকদিন ধরে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। রাতে মোটরসাইকেল চালাতে অসুবিধা হওয়ায় ভালো মানের একটি জ্যাকেট কিনতে এসেছি।

গাউছিয়া সুপার মার্কেটে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শীতের পোশাক কিনতে এসেছেন রফিকউল্লাহ। দামাদামি করে নিজের জন্য এক হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে একটি ব্লেজার কিনে তিনি বলেন, ঢাকায় তো শীত সেভাবে পড়ে না। তাই শীতের পোশাক খুব একটা কেনাও হয় না। তারপরও নতুন বছরে নতুন কিছু কেনার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু নতুন কোনো ডিজাইন না পাওয়ায় মাত্র একটি ব্লেজার কিনেছি।

এদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাত ঘরে দেখা যায়, ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান দিয়ে ও ভ্যানে করে যারা শীতের পোশাক বিক্রি করেন তাদের বেচাকেনা বেড়েছে। এসব দোকানের ক্রেতা মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের ফুটপাতে দোকান দিয়ে ব্লেজার বিক্রি করেন মো. মুসা হোসেন জানান, গত কয়েকদিনে তার বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শীতের শুরুতে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার ব্লেজার বিক্রি করলেও এখন প্রতিদিন বিক্রি করছেন ২০ হাজার টাকার পণ্য। প্রতিটি ব্লেজারের মূল্য রাখছেন এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা শীত যে পরিমাণ পোশাক বিক্রির আশা করেছিলাম তা এখনো শুরু হয়নি। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। যাদের খুব প্রয়োজন তারা ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন, মার্কেটগুলোতে যাচ্ছেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীতের পোশাক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ