Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝালকাঠির পেয়ারার ভাসমান হাটে পর্যটকদের ভিড়

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৮ পিএম

সকাল হলেই মানুষের ভিড় ঝালকাঠি শহরের কলেজ খেয়াঘাটে। ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করার কাজে ব্যস্ত তাঁরা। উদ্দেশ্য একটাই ভীমরুলী গ্রামের চারটি খালের মোহনায় দেশের বৃহত্তম পেয়ারার ভাসমান হাটে ঘুরতে যাওয়া। ট্রলার নিয়ে বাসন্ডা খালের মধ্য দিয়ে একের পর এক ছুঁটছেন পর্যটকের দল। নেচে গেয়ে উৎসবে মাতোয়ারা অনেকেই। কেউ আবার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের দৃশ্য ক্লিক করছেন ক্যামেরায়। কেউবা পেয়ারার ভাসমান হাটের ডিঙি নৌকায় চাষীদের স্বপ্ন বুবনের ছবি ফ্রেমবন্দি করছেন। শুধু নৌ পথেই নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় অনেকে আবার সড়ক পথেও যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট বেচাকেনা চলছে দেশের বৃহত্তম পেয়ারার ভাসমান এ হাটে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঝালকাঠির চাষীরা শত বছর ধরে ৫৭০ হেক্টর জমিতে চাষ করে আসছেন পেয়ারার। সদর উপজেলার ২০টি গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে দেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। এ বাগানে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়। পাইকাররা এই পেয়ারা কিনে ট্রলারে করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্নস্থানে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় সড়ক পথেও বাজারজাত হচ্ছে পেয়ারা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বড় শহরে এ অঞ্চলের পেয়ারার কেজি ৫০/৬০ টাকা হলেও এখানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ টাকায়। এ উপার্জনে সংসার ও ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চলে না বলেও অভিযোগ করেন চাষীরা। ইতোমধ্যে পেয়ারাকে জেলার ব্রান্ডিং পণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহাবুব আলম বলেন, পেয়ারা একটি বিষমুক্ত ফল। এই ফলের বাগান ও দেশের বৃহত্তম ভাসমান হাট দেখতে এসেছি। আমি ও আমার বন্ধুরা মুগ্ধ হয়েছি। খুবই সুন্দর পরিবেশ। রাতে থাকার ব্যবস্থা থাকলে আরো ভাল হতো।

কুয়াকাটা থেকে ঘুরতে আসা আতিকুর রহমান বলেন, কুয়াকাটার পরে যদি কোন ভাল ভ্রমণ ষ্পট থাকে, সেটা অবশ্যই ভীমরুলী পেয়ারার ভাসমান হাট। প্রতি বছর এখানে আমরা বন্ধুরা মিলে আসি। ঘুরে ফিরে আনন্দে সময় কাটিয়ে যাই।
ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষী ভবেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, আমার দুই একর ২৫ শতাংশ জমিতে পেয়ারার বাগান রয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। স্থানীয় বাজারে পেয়ারা পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা পেয়ারা মহাজনদের কাছে বিক্রি করি। মহানরা দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে মধ্যত্বভোগী মহাজন ও পাইকাররা লাভবান হচ্ছেন।
ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারার আড়তদার (মহাজন) কালু হালদার বলেন, সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করেও পেয়ারা চাষীরা ঋণের বোঝা মুক্ত হতে পারছেন না। দারিদ্রতা আঁকড়ে ধরেছে তাদের জীবনযাত্রাকে। আমরা যটতা পারি তাদের সহায়তা করে থাকি। নিজেদের লাভের কথা চিন্তা না করে, চাষীদের সংসারের চিন্তা আমাদের আছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, পেয়ারা চাষীদের সঙ্গে ভীমরুলী ভাসমান হাট বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখানে একটি হিমাগার এবং জেলির কারখানা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও বিদেশে পেয়ারা রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারলে সুস্বাদু এ ফলের চাহিদা বেড়ে যেতো। বিদেশি কোন কম্পানিও তখন এখান থেকে পেয়ারা নিতে আগ্রহী হতেন। আমরা চাষীদের সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। তারা যেকোন পরামর্শ চাইলে তা দ্রুত দেওয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝালকাঠি

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ