Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়নি

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

চলতি অর্থবছরে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতাটি ছিল নতুন প্রতিশ্রæতি ও প্রত্যাশায় ভরপুর। বাজেট গৃহীত হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে বাজেটে বেশ কিছু পরিবর্তনের নির্দেশনাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। ইতিমধ্যে বাজেট পাস ও বাস্তবায়ন শুরুর প্রায় একমাস অতিক্রান্ত হলেও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সংশোধিত বাজেটের প্রত্যাশিত বাস্তবায়নের কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না। যদিও একমাসেই জাতীয় বাজেটের সুফল দেখা যাবে, তেমনটা নাও হতে পারে। তবে বাজেটকে ঘিরে অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশা করলেও এখন নেতিবাচক প্রবণতা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। পুঁজিবাজারে অস্থিরতা এবং ধস ঠেকানো যাচ্ছে না। একইভাবে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারিরাও এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতার মধ্যে পড়েছেন। রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং আবাসন খাতের বিনিয়োগে গতি সঞ্চারসহ উল্লেখিত প্রতিটি খাতে বিদ্যমান স্থবিরতা দূর করতে অর্থমন্ত্রী বাজেটে যেসব সুযোগ সুবিধার কথা বলেছেন, তা সঠিক ধারায় কার্যকর না হওয়া দুঃখজনক। পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারের বিপরীতে ডিভিডেন্ট হিসেবে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার নির্দেশনা বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তবে ডিভিডেন্টের উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ছিল ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারিদের। গত এক সপ্তাহে পুঁজি বাজারে ব্যাপক দরপতন তথা হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার পেছনে সে দাবি পূরণ না হওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তা আরো জটিল হয়ে পড়ায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়েছিল। তবে বিদেশে যাওয়ার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের তিনি যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা যথাযথ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ বা বাস্তবায়ন না করার কারণেই বিনিয়োগে কাক্সিক্ষত সুফল দেখা যায়নি। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ণ এবারের জাতীয় বাজেটের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সাত বছর আগে প্রণীত ও গৃহীত হলেও ব্যবসায়ীদের নানা আপত্তির কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব মহলের সাথে আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাট ফাঁকি রোধের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু খাতে ভ্যাট কমিয়ে দেয়া হয়েছে। রেমিটেন্সের উপর ২ শতাংশ প্রণোদনা এবং ভূমি রেজিস্ট্রেশনের খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগে রেমিটেন্স প্রবাহ ও আবাসন খাতে নতুন গতি সঞ্চারের যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে বাজেট বাস্তবায়নের প্রথম মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই বাজেট বাস্তবায়ন ও নতুন বিধি ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে মূল্যায়ন ও আলোচনা চলছে। পুঁজিবাজার, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আবাসন খাতের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতে ইতিবাচক ধারা ফিরিয়ে আনতে গৃহীত সিদ্ধান্তসমুহ বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীর দৃঢ়তা আশাব্যঞ্জক।

বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের নানাবিধ উদ্যোগ সত্তে¡ও দীর্ঘদিনেও স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। স্থবিরতা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারা ফিরিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগগুলো কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সুফল নিশ্চিত সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যেসব বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে তা দূর করতে হবে। বিশেষত সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের উপর ৫ শতাংশ ও পুঁজিবাজারে ডিভিডেন্টের বিপরীত ১৫ শতাংশ কর আদায় বন্ধ করার পাশাপাশি ভূমি রেজিস্ট্রি ফি কমানো এবং রেমিটেন্সের উপর ২ শতাংশ প্রণোদনা নিশ্চিত করা হলে অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো ও দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ ও ক্রয়ক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই জাতীয় বাজেটসহ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। সরকার কোনো লাভজনক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নয়। রাষ্ট্র তথা জনগণের সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করাই সরকারের দায়িত্ব। যে রাজস্ব ব্যবস্থা বিনিয়োগে আস্থা সৃষ্টি করতে পারে না, দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়, ধনী আরো ধনী হয়, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়, সেসব নীতি পরিহার করতে হবে। দরিদ্র মানুষের উপর বাড়তি কর চাপানোর মানসিকতা বদলাতে হবে। কর ও ভ্যাট বাড়ানোর বদলে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমিয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে বাজেটকে একই সঙ্গে জনবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব করে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের প্রতিশ্রæতি পূরণে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন