নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কলম্বো পি সারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। মোহাম্মদ মিঠুনের ৯১ রান ও মুশফিকুর রহিমের ৫০ রানে ভর করে ১১ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগাররা।
কলম্বোর আকাশে গা জ্বালানো তীব্র রোদ। শ্রীলঙ্কান কন্ডিশনে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটা যথেষ্ঠ চ্যালেঞ্জিংও ছিল বটে। তবে সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পি সারা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাটা স্বগৌবরেই উড়লো শেষ পর্যন্ত। দিনের শুরুতেই টসে হেরে প্রথমে বাংলাদেশকে বোলিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কান একাদশ। লঙ্কান ইনিংসের গোড়াপত্তণেই রুবেল হোসেনের আঘাত। তারপর অবশ্য ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিয়ে স্কোরবোর্ডে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় স্বাগতিক দল। তার জবাবটা ৫ উইকেট আর ১১ বল হাতে রেখে ভালোভাবেই দেয় নয়া অধিনায়ক তামিমের বাংলাদেশ।
দিনের শুরুটাই যেন গর্জন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, শেষ হাসিটা বাংলাদেশেরই। টসে জিতে শ্রীলঙ্কা দলকে শুরুতেই ধাক্কা দেন পেসার রুবেল। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডিকবেলাকে প্রথম ওভারেই লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। লঙ্কান দলপতি ফিরে যান শূণ্য রানেই। স্কোরবোর্ডে তখন রান এবং উইকেট সমান ১-১। তারপর ইনিংসের সপ্তম ওভারে ফের লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন অভিজ্ঞ এ পেসার। ২ রান করা ফার্নান্ডোকে মোসাদ্দেকের সহজ ক্যাচ বানিয়ে ব্যাকফুটে নিয়ে যান স্বাগতিক দলকে। গুনাথিলাকা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই পথের কাঁটা তুলে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। ২৭ বলে ২৬ রান করা এই ওপেনারও মোসাদ্দেকের হাতেই ধরা পড়েন।
এরপর বেশ কিছুক্ষন ক্রিজে লঙ্কান দুই ব্যাটসম্যান রাজাপাকশে ও জয়সুরিয়া ইনিংস এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। ঠিক সে সময় তামিমকে ব্রেক থ্রু এনে দেন বিশ্বকাপে নিয়মিত বোলার বনে যাওয়া সৌম্য সরকার। পরপর দুটি উইকেটই তুলে নেন তিনি। রাজাপাকশে ৩২ রানে ফেরেন। তবে অর্ধশত পূর্ণ করেই ফেরেন জয়সুরিয়া (৫৬)। মাঝে অ্যাঞ্জেলো পেরেরাকে থিতু হতে দেননি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তার জাদুকরি বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পেরেরা। অবশ্য ৩০ ওভারের পর নিয়ন্ত্রন রেখা ক্রমেই নিজেদের অধিকারে নিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। শেষ ২০ ওভারে তারা তোলে ১৫০ রান। সানাকা মাত্র ৬৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। তার বিধ্বংসী ব্যাটিং ও বাংলাদেশি বোলারদের শেষদিকে নির্বিষ বোলিংয়ে ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং ভীত পায় লঙ্কানরা।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে তামিম-সৌম্য জুটি অনুমিতই ছিল। তবে দলে এনামুল হক থাকায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত উপেক্ষিতই থেকে যান এই ওপেনার। তামিম-সৌম্য জুটি ভালোই পথ দেখাচ্ছিলো দলকে। কিন্তু কুমারার এক বলে বাজে শট খেলতে গিয়ে ফিরে যান ১৩ রান করা সৌম্য। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৪৫ রানে। তারপর গুরুত্বপূর্ণ নাম্বর থ্রিতে নামেন সদ্য আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৮৫ রান করা মিঠুন। তাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দলপতি। কিন্তু ইনিংস খুব একটা দীর্ঘায়িত করতে পারেননি তামিম, থামেন ৩৭ রানে। বিশ্বকাপ থেকেই ইনিংস বড় করতে না পারার সমস্যার মাঝেই থেকে গেলেন দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান।
এরপর মুশফিক-মিঠুনের জুটিতেই জয়ের ভিত পায় টাইগাররা। মুশফিক ৫০ রান করে ফিরলেও দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়ে ফেরেন মিঠুন। মাত্র ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন তিনি। তার ১০০ বলে ৯১ রানের ইনিংসটি ১১টি চার ও একটি ছক্কায় মোড়ানো। এরপর ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহ ৩৩ রানে আউট হলেও সাব্বির-মোসাদ্দেক জুটিই জয় পর্যন্ত পৌঁছে দেয় তামিমদের। হাতে তখনও ৫ উইকেট আর ১১ বল।
বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরের আগে নিরাপত্তা ইস্যুটি ছিল সবচেয়ে জরুরি। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড নিরাপত্তার ব্যাপরটি খুব ভালোভাবে দেখছে। বাংলাদেশ দলের কারো মধ্যে শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে কোন ভয়ও কাজ করছিল না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেদের ভুল-ত্রæটিগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য আর একদিন সময় পাচ্ছে তামিম ব্রিগেড। দু’দিন বাদে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার। এই ম্যাচে জয় অনেকটাই মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশ শিবিরকে। তাছাড়া সিরিজের তিনটি ম্যাচের ভেন্যুই কলম্বো। যেখানে গতকাল তামিমের দল জয় নিয়েই ফিরেছে। বাকি তিনটি ম্যাচও এভাবেই জয় উৎসব করতে কি দেখা যাবে তামিম-মুশফিকদের?
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ট্যুর ম্যাচ
টস : শ্রীলঙ্কা একাদশ, ব্যাটিং
পি সারা ওভাল, কলম্বো
শ্রীলঙ্কা একাদশ রান বল ৪ ৬
ডিকবেলা এলবি ব রুবেল ০ ৩ ০ ০
গুনাথিলাকা ক মোসাদ্দেক ব তাসকিন ২৬ ২৭ ৫ ০
ফার্নান্ডো ক মোসাদ্দেক ব রুবেল ২ ১৪ ০ ০
রাজাপাকশে ক সাব্বির ব সৌম্য ৩২ ৪৯ ৪ ০
জয়াসুরিয়া ক রুবেল ব সৌম্য ৫৬ ৭৮ ৫ ০
পেরেরা ক মিরাজ ব মুস্তাফিজ ৭ ১০ ১ ০
শানাকা অপরাজিত ৮৬ ৬৩ ৬ ৬
হাসারাঙ্গা ক মিঠুন ব ফরহাদ ২৮ ৩০ ৩ ১
ধনঞ্জয়া রানআউট (তামিম) ৯ ২০ ০ ০
আপন্সো অপরাজিত ১৩ ৯ ২ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৭, নো ৩, ও ১৩) ২৩
মোট (৮ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৮২
উইকেট পতন : ১-১ (ডিকবেলা), ২-২৮ (ফার্নান্ডো), ৩-৩২ (গুনাথিলাকা), ৪-১১৪ (রাজাপাকশে), ৫-১২৭ (পেরেরা), ৬-১৪৬ (জয়াসুরিয়া), ৭-১৯৫ (হাসারাঙ্গা), ৮-২৪৩ (ধনঞ্জয়া)।
বোলিং : রুবেল ৭-০-৩১-২, তাসকিন ৮-০-৫৭-১, মুস্তাফিজ ৭-০-২৯-১, মোসাদ্দেক ৬-১-২৫-০, মিরাজ ৪-০-২৫-০, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৫-০, সৌম্য ৬-০-২৯-২, তাইজুল ৬-০-৪২-০, ফরহাদ ৩-০-২২-১।
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ক রাজিথা ব কুমারা ৩৭ ৪৭ ৬ ০
সৌম্য ক আপন্সো ব কুমারা ১৩ ২৪ ২ ০
মিঠুন ক হাসারাঙ্গা ব রাজিথা ৯১ ১০০ ১১ ১
মুশফিক ক শানাকা ব হাসারাঙ্গা ৫০ ৪৬ ৬ ১
মাহমুদউল্লাহ বোল্ড ধনঞ্জয়া ৩৩ ৩৭ ৩ ০
সাব্বির অপরাজিত ৩১ ২৬ ৫ ০
মোসাদ্দেক অপরাজিত ১৫ ১০ ৩ ০
অতিরিক্ত (লেবা ১, নো ১, ও ১৩) ১৫
মোট (৫ উইকেট, ৪৮.১ ওভার) ২৮৫
উইকেট পতন : ১-৪৫ (সৌম্য), ২-৫৮ (তামিম), ৩-১৩১ (মুশফিক), ৪-২২৭ (মাহমুদউল্লাহ), ৫-২৬২ (মিঠুন)।
বোলিং : ফার্নান্ডো ৬.১-০-২৫-০, রাজিথা ৮-০-৫৭-১, গুনাথিলাকা ৩-১-১৫-০, কুমারা ৬-০-২৬-২, ধনঞ্জয়া ৭-০-৪৭-১, আপন্সো ৬-০-৪৩-০, হাসারাঙ্গা ৭-০-৩৯-১, পেরেরা ৩-০-১৭-০, শানাকা ২-০-১৫-০।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।