পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুমিল্লায় আদালতের এজলাসে বিচারকের সামনেই মো. ফারুক (৩০) নামে হত্যা মামলার এক আসামিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে অপর এক আসামি। ঘটনার পরপরই ঘাতক হাসানকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌসের এজলাসে এ ঘটনা ঘটে। আকস্মিক এ ঘটনায় বিচারক, আইনজীবী এবং আদালত প্রাঙ্গণে থাকা সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতায় পুলিশের সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনা তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিহত ফারুক কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের ওয়াহিদুল্লার ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। এছাড়া ঘাতক হাসান লাকসাম উপজেলার ভোজপাড়া গ্রামের শহিদ উল্লাহর ছেলে। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের কান্দি গ্রামে হাজী আবদুল করিমকে হত্যার মামলার জামিনে থাকা আসামিদের হাজিরার দিন ধার্য ছিল গতকাল সোমবার। হাসান ও ফারুক মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে আসেন। দুপুরের দিকে অতিরিক্ত ৩য় দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস আসনে বসলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় মামলার শুনানীকালে নিহত ফারুকের কারণে হাসানকে মামলায় আসামি হতে হয়েছে- এমন অভিযোগ করে ফারুককে আক্রমন করে উপুর্যপুরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে হাসান। এ সময় জীবন বাঁচাতে ফারুক বিচারকের খাস কামরায় ঢুকে পড়ে। হাসান সেখানে ঢুকে টেবিলের ওপর ফেলে ফারুককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই কক্ষের ফ্লোরে ফেলেও তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় আদালতে অন্য একটি মামলার হাজিরা দিতে আসা কুমিল্লার বাঙ্গরা থানার এএসআই ফিরোজ এগিয়ে গিয়ে হাসানকে আটক করেন এবং ছুরিটি উদ্ধার করেন। ঘটনার সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীরা গুরুতর আহত অবস্থায় ফারুককে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফারুক মামলার ৪ নং আসামি ও হাসান ৮ নং আসামি বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ সদস্য ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ফারুকের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাত করে ফেলেন হাসান। তিনি দ্রুত এজলাসে ঢুকে হাসানের হাত থেকে ছুরিটি কেড়ে নেন এবং ফারুককে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ নেওয়াজ সুলতানা বলেন, সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে ২০১৩ সালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের কান্দি গ্রামে হাজী আবদুল করিমকে হত্যা করা হয়। আবদুল করিম আসামি হাসানের নানা ও নিহত ফারুকের দাদা। হত্যাকান্ডের পর দায়ের করা মামলায় চার নম্বর আসামি ছিল ফারুক। ২০১৫ সালে মামলার চার্জশিট হওয়ার সময় ফারুকের দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হাসানের নাম ওঠে আসে। পরবর্তী সময়ে হাসানকে একই মামলায় ৮ নম্বর আসামি করা হয়।
এই আইনজীবী আরও বলেন, হত্যার আগে ফারুকের উদ্দেশে হাসান বলে, ‘তোর কারণে আমি আসামি হয়েছি’। এ কথা বলার পরপরই ফারুককে ছুরিকাঘাত শুরু করে হাসান। এতে বোঝা যায়- জবানবন্দিতে হাসানের নাম বলায় তাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রতি হাজিরায় দেখতাম তারা একসঙ্গে এসে হাজিরা দিয়ে আবার চলে যায়। কখনও প্রকাশ্যে বিরোধের বিষয় দেখা যায়নি এবং তাদের কারো কাছ থেকে বিরোধের কথা শুনিনি। তবে তাদের মধ্যে অন্য দ্ব›দ্ব ছিল কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
এদিকে, আদালত চলকালীন এমন চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনজীবী ও বিচারকদের পাশাপাশি পুরো আদালত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন দিগি¦দিক হয়ে আদালতের বারান্দাসহ আশপাশে বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। খোদ বিচারক ও আইনজীবীরাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌস বলেন, আমার সামনে একজন আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হলো। আমার ওপরও হামলা হতে পারতো অথবা আমার কোনও সহযোগী বা আইনজীবীও হামলার শিকার হতে পারতেন। আমরা আসলেই নিরাপত্তায়হীনতায় আছি। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালত সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা হলেও এখনকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবথেকে দুর্বল। আইনজীবীদের ভাষ্য, আদালতে প্রতিদিনই পরস্পরবিরোধী বাদী-বিবাদী ও হত্যাসহ বড় বড় অপরাধের আসামীদের আনাগোনা থাকে। যার কারণে আদালত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব থেকে শক্তিশালী থাকা উচিত। তারা দেশের প্রতিটি আদালত এলাকায় আধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী রাখার দাবি জানান।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে সাথে ঘাতক হাসানকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ঘটনার পর থেকে আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতে বিচারপ্রার্থীসহ সবার নিরাপত্তায় নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকে। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে শুরু করে ১৭ উপজেলার পৃথক প্রত্যেক আদালতে দুই থেকে তিন জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকেন। তারা মূলত আসামি আনা-নেওয়ার কাজ করেন। তবে আদালতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পুলিশের জনবল সংকট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন (পদোন্নতিপ্রাপ্ত), সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন ও ডিআইও-১ মাহবুব মোরশেদের সমন্বয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দ্রæততর সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।