পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্মম। বর্বর। নিষ্ঠুর। অমানবিক। অমানুষিক। কোনো শব্দ দিয়েই যেন এই ঘটনার ধিক্কার জানানো সম্ভব নয়। সাত বছর বয়সী মেয়ে সামিয়া আফরিন সায়মাকে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। মৃতদেহে মেলে রক্তের দাগ। ধর্ষণের সময় চিৎকার করায় মুখ চেপে ধরে ধর্ষক হারুন অর রশিদ। হত্যার পর গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনে নিয়ে যায় সায়মাকে। ছাদ দেখানোর কথা বলে ঘাতক হারুন আটতলার লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায় সায়মাকে। সেখানে নবনির্মিত নবম তলার ফ্ল্যাটে শিশুটিকে ধর্ষণ ও অমানুষিক নির্যাতন চালায় সে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই লোমহর্ষক বর্ণনা দেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। এ সময় সায়মার বাবা আবদুস সালাম বলেন, আজকের পর যেন ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে না যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হারুন অর রশিদকে গতকাল রোববার সকালে কুমিল্লার তিতাসের ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি। অভিযুক্ত হারুন গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ডিবির কাছে।
উল্লেখ্য, হারুন সায়মাদের বাড়ি যে ভবনে, সেটির আটতলার বাসিন্দা পারভেজের খালাতো ভাই। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। দুই মাস ধরে হারুন আটতলার ওই ফ্ল্যাটেই ছিল। হারুনের স্বীকারোক্তির বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত কুরুচির পরিচায়ক। মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন ভাবে এ অপকর্মের কারণে সে বাঁচতে পারবে না, তখনই হত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটিয়েছে ঘাতক হারুন।
তিনি আরো বলেন, গত ৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন মাকে বলে শিশু সায়মা আটতলায় যায়। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সঙ্গে খেলা করতে। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায় তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটেই সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে অত্যন্ত পাশবিকভাবে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। সায়মাকে নিস্তেজ দেখে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। সেখানে সিঙ্কের নিচে মৃতদেহ রাখা হয়। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে পালিয়ে যায় হারুন। হারুন পারভেজের খালাতো ভাই। পারভেজের বাসায় দুই মাস ধরে থেকে তার রংয়ের দোকানে কাজ করে আসছিল।
আব্দুল বাতেন আরও বলেন, হারুনকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। হারুন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে গা-ঢাকা দেয়।
ওয়ারীর বনগ্রাামের যে বহুতল ভবনে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে, তার সপ্তম তলায় থাকত সে। আর শিশুটি পরিবারের সঙ্গে থাকত ষষ্ঠতলার ফ্ল্যাটে। শিশুর বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই ভবনে ফ্ল্যাট কেনার পর তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে ওঠেন। তার দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা রাজধানীর একটি স্কুলে নার্সারিতে পড়ত। অন্য ফ্ল্যাটের শিশুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার কথা বলে প্রতিদিনের মতোই বাসা থেকে বের হয়েছিল সে। কিন্তু রাত হওয়ার পরও না ফেরায় তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে তাকে পাওয়া যায় গলায় রশি পেঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায়।
শিশু সায়মার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ওয়ারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, শিশুটির মাথার বামপাশে সামান্য থেঁতলানো জখম রয়েছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। গোপনাঙ্গ রক্তাক্ত ও থেঁতলানো। নবম তলার উত্তর-পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে লাশ পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় শিশুটিকে।
ধর্ষকের ফাঁসি চাইলেন সায়মার মা-বাবা
গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সায়মার বাবা আবদুস সালাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি বলেন, আমার মেয়েকে দু’ভাবে নির্যাতিত করা হলো। আমি সর্বোচ্চ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আসামির ফাঁসি কার্যকর চাই। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আসামিকে গ্রেফতার করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের সন্তান আছে তারা এসব কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে কিভাবে আপনার সন্তানদের দূরে রাখবেন বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আমি আমার মেয়েকে দেখে রাখতে পারিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেয়েটা আমার স্ত্রীকে বলে ১০ মিনিটের জন্য বাইরে গেল। এরপর আমার মেয়েটা আর ফিরল না, তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হলো। দুই দিন ধরে আমি একফোঁটা পানিও খেতে পারিনি। ঘরে গেলে মেয়ের কাপড়চোপড়, ছবি দেখে আর ঠিক থাকতে পারি না। আমার পুরো পরিবারটা বিধ্বস্ত হয়ে গেল।
সায়মার বাবা আবদুস সালাম আরো বলেন, মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় আসি। বাসায় ফিরে সায়মার মাকে জিজ্ঞেস করি মেয়ে কোথায়? তিনি জানান, ওপরের ফ্ল্যাটে খেলতে গেছে। পরে ৯ তলার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে তার লাশ পাই।
ভেজাগলায় মেয়ের স্মৃতিচারণ করে চলেন বাবা আবদুস সালাম। পরক্ষণেই চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আজকের পর যেন ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে না যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
সন্তান হারানোর কষ্টে কাতর মা সানজিদা আক্তার। তার আহাজারিতে কেঁপে উঠছে চারপাশ। আহাজারির মাঝে একটাই চাওয়া বিচার চান সন্তান হত্যার। তিনি বলেন, আমি কিভাবে থাকব। এমন নির্মমভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। প্রকাশ্যে ওই ঘাতকের ফাঁসি চাই।
ধর্ষক হারুনের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া
ধর্ষক হারুনের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। দাবি উঠেছে, জনসম্মুখে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। শিশু সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় নাহিদ বোরহান নামের একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ওয়ারীর শিশু সায়মার ধর্ষণ ও হত্যাকারী হারুনুর রশিদ। প্রশাসনকে ধন্যবাদ। এই জানোয়ারের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
হারুনের গ্রেফতার হওয়া ছবিসহ তার পোস্টের নিচে এ কে সাইফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, এদের আমাদের কাছে ছেড়ে দেয়া হোক। ওদের মতো পশুদের চামড়া তুলে লবণ এবং লঙ্কা গুঁড়া লাগিয়ে রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকানোর পর আবার লবণ মরিচ দিতে হবে। এভাবে বারবার দিতে হবে।
শিশু সায়মা ছবি পোস্ট করে এস কে লাভলী নামের আরও একজন লিখেছেন, ‘নিচের এই ছবিটা আমাকে খুব কস্ট (কষ্ট) দিচ্ছে, কিছুতেই মন সরাতে পারছি না...। আমিও এক কন্যা সন্তানের হতভাগ্য মা... পেটের দায়ে যখন বাসা থেকে বাইরে যা-ই... তখন কাজে মন বসাতে খুব কস্ট (কষ্ট) হয়... মন থাকে বাসায় পড়ে, আমার মেয়ে ঠিক আছে তো...? কোন বিপদ ওকি মারছে না তো...? একটু পর পর কল দিচ্ছি একবার কল রিসিভ না করলে মনের ভয়ে কতকিছুই না ভেবে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। যদি কোনো বিপদ হয়ে যায় তাহলে আমি কী করব কিভাবে বাঁচব... আল্লাহর কসম, আমি যদি জীবনে একবারও এমন কোনো জানোয়ারের দেখা পাই... কচুকাটা করে কাটব, ওই জানোয়ারকে বুঝিয়ে দেবো বাকি জানোয়ারদের যে-ই এ-ই মেয়ে মানুষ তোকে দুনিয়াতে আলো দেখিয়েছে আবার এ-ই মেয়ে মানুষই... কেটে কুত্তারে খাওয়াচ্ছি... হয়তো কুত্তাও ছুঁয়ে দেখবে না ওসব নরপিশাচের মাংস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।